চ্যাম্পিয়ন মাশরাফিকে বিদায় করে ফাইনালে সাকিব

এবার আর বিপিএলের ফাইনালে ওঠা হলো না মাশরাফির। হারের পর খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন রংপুর অধিনায়ক। ছবি: প্রথম আলো
এবার আর বিপিএলের ফাইনালে ওঠা হলো না মাশরাফির। হারের পর খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন রংপুর অধিনায়ক। ছবি: প্রথম আলো
>রংপুর রাইডার্সকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ষষ্ঠ বিপিএলের ফাইনালে চলে গেল ঢাকা ডায়নামাইটস। শুক্রবারের ফাইনালে মুখোমুখি ঢাকা ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস

মাশরাফি বিন মুর্তজা ছাড়া ফাইনাল! বিপিএলে এই দৃশ্য কল্পনাই করা যায় না। আগের পাঁচ আসরে চারবার ফাইনালে উঠে চারবার নিজ দলকে চ্যাম্পিয়ন করা মাশরাফি এবার ফাইনালে থাকছেন না। সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটস বিদায় করে দিয়েছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সকে। অলিখিত সেমিফাইনাল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ঢাকা জিতেছে ৫ উইকেটে। রংপুরকে ১৪২ রানে অলআউট করে দিয়ে ঢাকা লক্ষ্য পেরিয়েছে প্রায় অনায়াসে। ২০ বল বাকি থাকতে। শুক্রবারের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস।

বল হাতে ঢাকার নায়ক যদি হন রুবেল, ব্যাট হাতে অবশ্যই আন্দ্রে রাসেল। ২৩ রানে ৪ উইকেট নেওয়া রুবেলের দারুণ বোলিং রংপুরকে নাগালের মধ্যেই রেখেছিল। তবু ৯৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ঢাকা চাপের মুখে পড়ে যায়। এমন বড় ম্যাচে রান তাড়ায় চাপের সাক্ষী হয়ে থাকল রনি তালুকদারের রান আউট। ২৪ বলে ৩৫ রানের কার্যকরি এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। ৪ চারে সাজানো রনির এই ইনিংসের অপমৃত্যু ঘটেছে নুরুল হাসানের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির খেসারত গুণে।

আর একটি উইকেট পড়লেই ম্যাচের ভারসাম্য রংপুরের দিকে হেলে যাবে, এমন পরিস্থিতিতে রাসেল স্রেফ ছেলেখেলা করলেন। ১৯ বলে ৪০ রানে অপরাজিত থাকলেন। ৫টি বাউন্ডারির প্রত্যেকটিই ছক্কা। কেবল ১০ রান নিতে ওপাশের সঙ্গীকে দৌড়ের ঝামেলায় ফেলেছেন। নুরুল হাসানের সঙ্গে তাঁর ৩৪ বলে ৫০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি ঢাকা শহরের প্রতিনিধি এই দলকে পঞ্চমবারের মতো তুলল ফাইনালে।

ঢাকা ফাইনাল থেকে ৫৪ বলে ৪৬ রানের সমীকরণে থাকতে উইকেটে আসেন রাসেল। তার আগে ১১তম ওভারে পোলার্ড (১৪) ও রনি তালুকদারকে (৩৫) হারিয়ে ঢাকা ছিল ভীষণ চাপে। রাসেল এখান থেকে পাল্টা আক্রমণে ধূলিসাৎ করেছেন রংপুরের পাল্টা লড়াইয়ের সবটুকু প্রতিরোধ।

শেষ ৬ ওভারে ৩৬ রান দরকার ছিল ঢাকার। এখান থেকে সামান্য ভুল করলেই ম্যাচটা হাতছাড়া। আর ঢাকার ভুল মানে ফাইনালটা রংপুরের আরেকটু কাছে। কিন্তু রাসেল অন্য কিছু ভেবে রেখেছিলেন। রংপুর অধিনায়ক মাশরাফির করা ১৫তম ওভারেই চাপ কাটিয়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। রাসেলের এক ছক্কাসহ ওই ওভারে ১০ রান তুলেছে ঢাকা। অর্থাৎ শেষ পাঁচ ওভারে জয়ের জন্য ২৬ রান দরকার ছিল ঢাকার।

এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ব্যাটিং করলেই চলত। কিন্তু রাসেল তো আর স্বাভাবিক ঢংয়ে ব্যাট করার পাত্র নন। শফিউলের করা ওই ওভারেও হাঁকিয়েছেন ছক্কা। ১৬তম ওভারে সব মিলিয়ে দুজন ১১ রান তুলে ঢাকাকে নিয়ে যান ফাইনালে ওঠার হাত ছোঁয়া দূরত্বে। শেষ চার ওভারে দরকার মাত্র ১৫ রান। মাশরাফির কাঁধ তখন ঝুলে পড়েছে। রাইলি রুশোর মাথা নিচু।

রাসেল আর দেরি করেননি। নাজমুল হাসানের করা পরের ওভারেই টানা তিন ছক্কায় ঢাকাকে ফাইনালের টিকিট এনে দেন রাসেল। নুরুল ১৭ বলে ৯ রানে অপরাজিত থাকলেও সঙ্গ দেওয়ার কাজটা দারুণভাবেই সেরেছেন।

রংপুরের বোলারদের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। প্রথম ওভারেই থারাঙ্গাকে (৪) তুলে নেন মাশরাফি। দুই ওভার পর সুনীল নারাইনকে ফেরান স্পিনার নাজমুল। স্কোরবোর্ডে তখন ঢাকার সংগ্রহ ২ উইকেটে ৪১। এখান থেকে ৫৬ রান তুলতে ঢাকা হারিয়েছে গোটা মিডল অর্ডার। ফিরেছেন রনি, সাকিব (২৩) ও পোলার্ড (১৪)। ১৩ বল আর ২২ রানের মধ্যে এই তিনজনের সাজঘরে ফিরে আসা ম্যাচে একটা অনিশ্চয়তার সুর তৈরি করে। এরপরই রাসেলের ঝড়।

রাসেল বল হাতেও ৩১ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। তবু ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠল রুবেলের হাতেই। রুবেলের কারণেই যে রংপুর ১৪২ রানের বেশি যেতে পারল না। এই পুঁজি নিয়ে শিশির ভেজা মাঠে পারা কঠিন। মাশরাফির রংপুর পারল না।

২০১৬ সালের বিপিএলে মাশরাফি ফাইনালে যেতে পারেননি। যেবার ছিলেন না, সে আসরের শিরোপা উঠেছিল সাকিব আল হাসানের হাতে। এই তথ্য অবশ্য কুমিল্লাকে খুব একটা ভড়কে দিতে পারবে বলে মনে হয় না। বিপিএলের সেরা দুই দলই উঠল ফাইনালে। এবার সেরা ফাইনাল দেখার অপেক্ষা।