'ছায়া' তামিমই বেশি সফল!

কাগজ-কলমে অধিনায়ক নন, কিন্তু মাঠে কুমিল্লার নেতা তামিমই। ছবি: প্রথম আলো
কাগজ-কলমে অধিনায়ক নন, কিন্তু মাঠে কুমিল্লার নেতা তামিমই। ছবি: প্রথম আলো
>তিনি কুমিল্লার ‘আইকন’ খেলোয়াড়। তবুও কুমিল্লা ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁকে নয়, টুর্নামেন্টের শুরুতে অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেয় স্টিভ স্মিথকে। স্মিথ আকস্মিকভাবে দেশে ফিরে গেলে কুমিল্লার অধিনায়ক হন ইমরুল। কাগজে-কলমে ইমরুল অধিনায়ক হলেও মাঠে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আসলে তামিমই

তামিম ইকবাল অনুশীলন শুরুর আগে ভবিষ্যদ্বাণী করতে বললেন চার সাংবাদিককে—কাল কে জিতবে? তিনজনের রায় ঢাকা ডায়নামাইটসের পক্ষে, একজন শুধু বললেন, চ্যাম্পিয়ন হবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস! ছোট্ট এ জরিপেই তামিমের বুঝে যাওয়ার কথা, কাল কোন দল ‘ফেবারিট’ হিসেবে ফাইনাল খেলতে নামছে।

কুমিল্লা শিরোপা জিতুক কিংবা না জিতুক, একটা জায়গায় তারা বাহবা পাবে। আসা-না আসা নিয়ে অনেক জলঘোলার পর যখন স্টিভ স্মিথ এলেন সবাই ধরে নিয়েছিল এবার কুমিল্লাকে রুখবে কে! দুই ম্যাচ খেলার পরই কনুইয়ের চোট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক দেশে ফিরে যাওয়ায় অনেক প্রশ্ন উঠল, কুমিল্লার এখন কী হবে! সেটির চেয়ে বড় কথা, কুমিল্লাকে নেতৃত্ব দেবেন কে? বিপিএলের শুরুতে কুমিল্লাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন স্মিথ। তাঁর জায়গায় অধিনায়ক হিসেবে পরে কুমিল্লা বেছে নিয়েছে ইমরুল কায়েসকে। অথচ দলে তো তামিম ইকবাল আছেন, যিনি গত বিপিএলেও কুমিল্লাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্মিথের চলে যাওয়া, তামিমের অধিনায়কত্ব না করা—সবকিছু আড়াল হয়ে গেছে দলের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে, বাহবা পেতেই পারে ২০১৫ চ্যাম্পিয়নরা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, তামিম নিজেই না কি দায়িত্বটা নিতে চাননি। পরে বিকল্প পথে হেঁটেছে কুমিল্লা। কাগজে-কলমে ইমরুল অধিনায়ক হলেও মাঠে নেতার ভূমিকা পালন করেছেন আসলে তামিমই। ফিল্ড সেটিং, বোলিং পরিবর্তন, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, সবই করতে দেখা গেছে তামিমকেই। একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, ১ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার বিপক্ষে ঢাকা ডায়নামাইটসের যখন শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৩ রান। পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে আন্দ্রে রাসেল সমীকরণটা নামিয়ে আনেন ১ বলে ৬ রানে। শেষ বলটার আগে তামিম সাইফউদ্দীনকে বেশ সময় নিয়ে বোঝান। তাতেই কাজ হয়। ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার পারেননি সাইফের দুর্দান্ত ইয়র্কারটা ছক্কা মারতে।

পুরো মাঠে তামিম এভাবেই নেতার ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু কাগজ-কলমে তিনি অধিনায়ক নন বলে মাঠে-মাঠের বাইরের নানা চাপ তাঁকে স্পর্শ করেনি। অধিনায়ক হিসেবে সংবাদমাধ্যমের সামনেও খুব একটা আসতে হয়নি জয়-পরাজয়ের ব্যাখ্যা দিতে। ‘ছায়া অধিনায়ক’ হয়ে থাকার এই কৌশলে তিনি সুযোগ পেয়েছেন নির্ভার হয়ে খেলার। তাতে নিজে যেমন উপকৃত হয়েছেন, উপকৃত হয়েছে দলও। স্টিভ স্মিথ-শোয়েব মালিক টুর্নামেন্টের মাঝপথে চলে যাওয়ার পরও কুমিল্লা তাই দাপটের সঙ্গে উঠে গেছে ফাইনালে।

আজ বিসিবি একাডেমি মাঠে অনুশীলন শেষে তামিমকে যখন সাংবাদিকেরা অনুরোধ করলেন ফাইনালের আগে কিছু বলতে। তাঁর উত্তর, ‘কাল জিততে পারলে আসব সংবাদ সম্মেলনে।’ তখনই হয়তো তিনি রহস্য উন্মোচন করবেন, ছায়া অধিনায়ক হিসেবে কীভাবে সফল হয়েছেন।