তামিম এখনো স্বপ্নের ঘোরে আছেন!

ফাইনাল জয়ের পর সন্তানকে কোলে নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল তামিম। কাল কী ইনিংসটাই না খেললেন! ছবি: প্রথম আলো
ফাইনাল জয়ের পর সন্তানকে কোলে নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল তামিম। কাল কী ইনিংসটাই না খেললেন! ছবি: প্রথম আলো
স্বপ্নের ফাইনাল, স্বপ্নের ইনিংস বুঝি একেই বলে। তামিম কাল ফাইনালে যা খেললেন, দুর্দান্ত বললেও যেন কম বলা হয়! বাঁহাতি ওপেনার কিন্তু অপরাজিত ১৪১ রানের এ ইনিংসকে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস বলতে চান না


রাত বাজে প্রায় ১২টা। তামিম ইকবালকে ঘিরে ধরেছে তাঁর ভক্তরা। ছবি-সেলফি তুলতে তুলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন বাঁহাতি ওপেনার। এ দিকে সংবাদ সম্মেলনে তামিমের আসার অপেক্ষায় সংবাদকর্মীরা। কোনো রকমে ভক্তদের বেষ্টনী পেরিয়ে দ্রুত পায়ে সংবাদ সম্মেলনে চলে আসেন বিপিএল ফাইনালের নায়ক।

একটু আগে তাঁর বন্ধু সাকিব আল হাসান বিষণ্ন মুখে সংবাদ সম্মেলন করে গেছেন। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে হেরে মনটা ভালো থাকার কথাও নয় সাকিবের। তামিমের মুখটা সেখানে কী উজ্জ্বল! স্বপ্নের ফাইনাল, স্বপ্নের ইনিংস বুঝি একেই বলে। বড় মঞ্চে জ্বলে ওঠেন বড় খেলোয়াড়—কদিন আগে কথাটা বলেছিলেন ক্রিস গেইল। কেন টুর্নামেন্টজুড়ে নিষ্প্রভ, সেটির জবাবে বলেছিলেন জ্যামাইকান ওপেনার। গেইলের আর বড় মঞ্চে আলো ছড়ানো হয়নি। কাল ফাইনালে সেই ভূমিকাটা নিয়েছেন বাংলাদেশের তামিম।

ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ৩১ বলে ফিফটি। ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে খেলেছেন আর ১৯ বলে। ৫০ বলে সেঞ্চুরি করা তামিমকে শেষ পর্যন্ত আউটই করতে পারেননি ঢাকার বোলাররা। কুমিল্লা যে ১৩টি চার মেরেছে, এর ১০টাই তামিমের। ১২ ছক্কার ১১টিই তাঁর। তামিম যেখানে একাই নিয়েছেন ১৪১ রান, সেখানে তাঁর সতীর্থরা সবাই মিলে তাঁর চেয়ে ২ বল কম খেলে তুলেছেন ৪৭ রান। দলের ৭১ভাগ রানই তামিমের।

বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সেরা ইনিংসটা খেলবেন ফাইনালের মতো স্নায়ুর চরম পরীক্ষা নেওয়া ম্যাচে, নিজেও ভাবতে পারেননি তামিম। কাল মধ্যরাতের সংবাদ সম্মেলনে তাই বলছিলেন, এখনো তিনি আছেন স্বপ্নের ঘোরে, ‘সত্যি কথা বলতে আমি এখনো স্বপ্নের ঘোরে আছি, যেভাবে ব্যাটিং করেছি। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না! রুমে যাব, হাইলাইটস দেখব, তখন হয়তো বিশ্বাস হবে। একটা সময় আমি বিরক্ত হয়েছিলাম, যখন বিজয় (এনামুল হক) আউট হয়ে গেল। ওখান থেকে আমাকে শান্ত হতে হয়েছে এবং নতুন করে শুরু করতে হয়েছে। হাইলাইটস দেখলে আরও ভালো বলতে পারব।’

বিপিএলের ৫৭ ম্যাচে কোনো সেঞ্চুরি ছিল না তামিমের। অবশেষে সেই শূন্যতা দূর হয়েছে, সেটিও আবার ফাইনালে। এবার কি একটু স্বস্তি বোধ করছেন ? তামিম বলেন, ‘অবশ্যই স্বস্তির। কে স্বস্তি পাবে না? সেঞ্চুরি পাওয়া অবশ্যই দারুণ কিছু। এটা অনেক কিছু শেখাবে কীভাবে এটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও করা যেতে পারে। ঢাকার যে বোলিং আক্রমণ, অনেক আন্তর্জাতিক দলেও এত ভালো বোলিং আক্রমণ নেই। এ জায়গায় যদি ভালো করতে পারি তাহলে কেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও এটা করতে পারব না?’

অপরাজিত ১৪১—টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ। তবুও তামিম বলতে চাইছেন না টি-টোয়েন্টিতে এটাই তাঁর সেরা ইনিংস। তাঁর কাছে যে ধর্মশালায় ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে করা অপরাজিত ১০৩ রানের ইনিংসটা অনেক বড়। কেন, সেটির তামিমের ব্যাখ্যায় বুঝতে পারবেন, ‘পাশাপাশি রাখতে পারব না, ওটা ছিল আমার জাতীয় দায়িত্ব। (ওমানের বিপক্ষে) যদি ম্যাচটা হারতাম তাহলে আমরা টুর্নামেন্টের বাইরে চলে যেতাম। প্রতিপক্ষ ওমান হলেও চাপ তো ছিল। ইনিংসটা তাই অনেক উঁচুতে রাখি। সব সময় বলি যে, সেঞ্চুরি যে দলের সঙ্গেই হোক, সেটা অবশ্যই বিশেষ কিছু। আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করেই সেঞ্চুরি করতে হবে। আজকের ইনিংসটা অবশ্যই ওপরের দিকে থাকবে নিশ্চিত, তবে তুলনা করতে চাইছি না। দুটোই স্পেশাল।’

আরও পড়ুন...