মোহামেডানে বাবু-এমিলি সিন্ডিকেট?

মাঠে এখন অসহায় অবস্থা মোহামেডানের। ছবি: প্রথম আলো
মাঠে এখন অসহায় অবস্থা মোহামেডানের। ছবি: প্রথম আলো
প্রিমিয়ার লিগে টানা চার ম্যাচ হেরেছে মোহামেডান। দল ব্যর্থ হওয়ার পেছনে দলের ম্যানেজার আমীরুল ইসলাম বাবু ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড় জাহিদ হাসান এমিলিকেই দায়ী করেছেন মোহামেডানের সদ্য বিদায়ী কোচ আলী আসগর নাসির।

ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এখন জয়-টয় নিয়ে ভাবে না। সাফল্য তো অনেক দূরের ব্যাপার! মৌসুমের শুরুতে কোনোমতে একটা দল দাঁড় করিয়ে টিকে থাকাটাই তাদের লক্ষ্য। এবারের প্রিমিয়ার লিগে ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে পরিচিত, এক সময়ে দাপুটে মোহামেডান হেরেছে টানা চার ম্যাচ। অতীতে প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডান কখনো টানা চার ম্যাচ হেরেছে কিনা, সেটি নিয়ে গবেষণাই শুরু করে দিয়েছেন ফুটবলপ্রেমীরা। প্রিয় দলের এমন ভয়াবহ পারফরম্যান্সে ফুটবল নিয়ে আলোচনার আগ্রহই যেন হারিয়ে ফেলেছেন মোহামেডানের সমর্থকেরা!

কিন্তু, এই অবস্থা কেন! মোহামেডানের মতো একটা দল কেন পতনের দিকে এগিয়ে চলেছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে হারের পর পদত্যাগী কোচ আলী আসগর নাসির তুলেছেন গুরুতর অভিযোগ। দলের এমন ভরাডুবির জন্য তিনি সরাসরি দায়ী করেছেন ম্যানেজার আমীরুল ইসলাম বাবু ও দলের সিনিয়র ফুটবলার জাহিদ হাসান এমিলিকে। তাঁর মতে, এই দুজনের গড়ে তোলা সিন্ডিকেটের কারণেই মোহামেডানের এই বেহাল অবস্থা।

ব্যর্থতার জন্য সিন্ডিকেটের অভিযোগ মোহামেডানের পদত্যাগী কোচ আলী আসগর নাসিরের। ছবি: প্রথম আলো
ব্যর্থতার জন্য সিন্ডিকেটের অভিযোগ মোহামেডানের পদত্যাগী কোচ আলী আসগর নাসিরের। ছবি: প্রথম আলো

আলী আসগর নাসির কোচ হিসেবেও খুব পরিচিত কেউ নন। অন্তত, মোহামেডানের মতো একটি দলের কোচ হওয়ার মতো অভিজ্ঞতা তাঁর আছে কিনা, সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। এ মৌসুমের শুরুতে একজন ইংলিশ কোচকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সেই ইংলিশ কোচকে বিদায় নিতে হয়েছে। যাওয়ার আগে সেই কোচও মোহামেডানের ম্যানেজার আমীরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন বিভিন্ন বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপের।

নাসির এক সময় খুলনা আবাহনীর কোচ ছিলেন। পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিজেএমসি, রহমতগঞ্জ প্রভৃতি দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। মাঝের বেশ কয়েক বছর ফুটবলের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্কই ছিল না। এবার মোহামেডানের ইংলিশ কোচ বিদায় নেওয়ার পর ফুটবলে অনিয়মিত এই কোচের হাতেই তুলে দেওয়া হয় মোহামেডানের দায়িত্ব। কিন্তু তাঁর সঙ্গেও সম্পর্কটা স্থায়ী করতে পারল না মোহামেডান। গত কয়েক বছর ধরে নিয়োগকৃত বিভিন্ন কোচের সঙ্গে মোহামেডান ম্যানেজমেন্টের যে অম্লমধুর সম্পর্ক চলে আসছে, নাসির নামটি এখানে সর্বশেষ সংযোজন।

নাসির জানিয়েছেন একাদশ সাজানো থেকে শুরু করে সব বিষয়েই হস্তক্ষেপ করেন ম্যানেজার আমীরুল বাবু ও জাহিদ হাসান এমিলি, ‘মোহামেডানে কোচ হিসেবে কোনো স্বাধীনতা নেই। কাকে খেলাতে হবে এটা নিয়ে সিন্ডিকেট করা হয়েছে। কিছু খেলোয়াড় আছে তাদের নামাতেই হবে। আমি মাঠে থাকি আমিই জানি না খেলোয়াড় পরিবর্তন হয়ে যায়। বাবু ভাই আর এমিলি মিলেই দল চালায়। এমিলি এতই যদি ভালোই বোঝে তাহলে সে কোচিং করাক।’

বিদায়ী কোচের এমন অভিযোগ মানতে নারাজ এমিলি। উল্টো জানালেন, মোহামেডানের মতো দলের কোচ হতে তিনিই নাসিরকে সহায়তা করেছেন ‘উনি আমাকে বলেছিলেন সে মোহামেডানে কোচিং করাতে চান। ক্লাব ম্যানেজমেন্টকে বলে আমিই ওনাকে ক্লাবে আনি। ম্যাচের আগে দল গঠন করার আগে সে আমার কাছে পরামর্শ চাইতেন। আমার কাছে যেটি ভালো মনে হয়েছে, আমি তাই বলেছি। এখন দল ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি যদি ব্যর্থতার আমাদের কাঁধে দায় চাপায়, তাহলে এটা ওনার ব্যর্থতা।’

অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে এভাবেই চলছে দর্শকপ্রিয় মোহামেডান। এভাবে চললে ভিক্টোরিয়া, ওয়ান্ডারার্স কিংবা আজাদ স্পোর্টিং হতে বেশি বাকি নেই মোহামেডানের।