উইকেট পড়লেও যন্ত্রণার দিন কাটাল বাংলাদেশ

>
ব্যাটসম্যানদের ছড়ি ঘোরানোর দিনে ২ উইকেট নেন সৌম্য। ছবি: এএফপি
ব্যাটসম্যানদের ছড়ি ঘোরানোর দিনে ২ উইকেট নেন সৌম্য। ছবি: এএফপি

হ্যামিল্টন টেস্টে ৪ উইকেটে ৪৫১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে নিউজিল্যান্ড। হাতে ৬ উইকেট রেখে এরই মধ্যে ২১৭ রানের লিড নিয়েছে স্বাগতিক দল

হ্যামিল্টন টেস্টে এ পর্যন্ত প্রায় চার সেশন ফিল্ডিং করল বাংলাদেশ দল। এর মধ্যে সেরা সেশন খুঁজে বের বেশ সহজ। প্রথম দিনের শেষ সেশনে ২৮ ওভার ব্যাট করে কোনো উইকেট দেয়নি নিউজিল্যান্ড। আজ দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনেও পড়েনি কোনো উইকেট। দ্বিতীয় সেশনে পড়ল ১ উইকেট, আর শেষ সেশনে ৩টি। তাহলে শেষ সেশন-ই তো সেরা? ওই তো, মন্দের ভালো আরকি!

নিউজিল্যান্ডের ৪ উইকেট পড়েছে বলে জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না, দ্বিতীয় দিনটা বাংলাদেশ দলের জন্য শুধুই বল কুড়োনোর। ৪ উইকেটে ৪৫১ রান তুলে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে নিউজিল্যান্ড। প্রথম দিন শেষে তাঁদের সংগ্রহ ছিল বিনা উইকেটে ৮৬। অর্থাৎ আজ সারা দিন ব্যাট করে ৯০ ওভারে ৩৬৫ রান তুলেছে স্বাগতিক দল। ওভার প্রতি গড়ে ৪ রানের বেশি তুলেছে নিউজিল্যান্ড। বোঝাই যাচ্ছে দ্বিতীয় দিনেও নিউজিল্যান্ড চালকের আসনে। হাতে ৬ উইকেটে রেখে প্রথম ইনিংসে এরই মধ্যে ২১৭ রানের লিড নিয়েছে তাঁরা। কাল এই লিড নিউজিল্যান্ড নিশ্চিতভাবেই দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে না নামার মতো জায়গায় নিতে চায়।

বাংলাদেশের বোলাররা যে তিন উইকেট পেয়েছেন, তার মধ্যে দুজনই পেয়েছেন সেঞ্চুরি। দুই ওপেনার টম লাথাম (১৬১) ও জিত রাভাল (১৩২)। বেচারা রস টেলর! মাত্র ৪ রান করে আউট হয়েছেন সৌম্য সরকারের বলে। তাঁর দুঃখ লাগার-ই কথা। কোনো বিশেষজ্ঞ বোলার নয়, আউট হলেন কিনা ‘পার্ট টাইমার’-এর বলে! এতে বাংলাদেশ দলের নিয়মিত বোলারদেরও হতাশ লাগার কথা। মাত্র চার টেস্টের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন তিন কচি-কাঁচা পেসারদের কেউ-ই উইকেট পাননি। একমাত্র ‘বিশেষজ্ঞ’ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ শেষ সেশনের শেষ বেলায় এসে পেয়েছেন উইকেটের দেখা।

এই চার নিয়মিত বোলারের সবাই ২০ ওভারের ওপরে বল করেছেন। প্রথম সেশনে কাজ না হওয়ায় দ্বিতীয় সেশনে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অগত্যা নিজে হাত ঘুরিয়ে দ্বিতীয় সেশনে তুলে নিয়েছেন রাভালকে। তবে সবাইকে ছাপিয়ে দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের সেরা বোলার ১৯ ওভার করা ‘পার্ট টাইমার’ সৌম্য-ই। সেটি মাত্র ২ উইকেট নেওয়ার জন্য।

অবাক লাগতেই পারে। নিউজিল্যান্ডের পেসবান্ধব উইকেটে সৌম্যর তো হাত ঘোরানোর কথা? তা যেমন ঠিক তেমনি এটাও ঠিক আদতে তিনি ‘ঠেকা কাজ চালানোর’ বোলারই। কিংবা যখন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না তখন ‘পার্ট টাইম’ কোনো বোলারকে এনে জুয়া খেলে থাকেন অধিনায়কেরা। মাহমুদউল্লাহর খেলা এই জুয়ায় ভালোই প্রতিদান দিলেন সৌম্য। মাঝে-মধ্যে বেশ ভালো সুইং পেয়ে চিন্তায় ফেলেছেন কেন উইলিয়ামসকে। কিউই অধিনায়ক অবশ্য বাংলাদেশের বোলারদের যন্ত্রণা আরও বাড়িয়েছেন। তিনে ব্যাটিংয়ে নেমে টেস্ট ক্যারিয়ারের কুড়িতম সেঞ্চুরির সুবাস নিয়ে অপরাজিত থেকে দিনের খেলা শেষ করেছেন উইলিয়ামসন (৯৩*)। অন্য প্রান্তে তাঁর সঙ্গী ‘নাইটওয়াচম্যান’ নিল ওয়াগনার। শেষ সেশনে হেনরি নিকোলসকে (৫৫) দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ফিরিয়েছেন মিরাজ।

উইলিয়ামসন সত্তরের ঘর পার হতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছিল, টেস্টে এক ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের প্রথম তিন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন শেষ কবে? খুঁজে দেখা গেলে এমন ঘটনা নিউজিল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসে এর আগে মাত্র একবারই ঘটেছে। ২০০৩ চণ্ডীগড় টেস্টে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রথম তিন ব্যাটসম্যান—মার্ক রিচার্ডসন, লু ভিনসেন্ট ও স্কট স্টাইরিস। তারপর এই প্রথম তাঁদের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান-ই সেঞ্চুরি পাওয়ার অপেক্ষায়। উইলিয়ামসন কাল নিশ্চয়ই কিউই সমর্থকদের এই অপেক্ষার মধুর সমাপ্তি ঘটাবেন। আর বাংলাদেশ সমর্থকদের অপেক্ষা নিউজিল্যান্ড কখন প্রথম ইনিংস ঘোষণা করবে!