দেশকে জিতিয়ে ফেসবুকে ঢুকতে পারছেন না রবিউল

কাল কম্বোডিয়ার বিপক্ষে গোলের পর সতীর্থদের উদ্‌যাপনের মধ্যমণি রবিউল। ছবি: বাফুফে
কাল কম্বোডিয়ার বিপক্ষে গোলের পর সতীর্থদের উদ্‌যাপনের মধ্যমণি রবিউল। ছবি: বাফুফে
>কম্বোডিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে তিন বছরের বেশি সময় পর বিদেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচে একমাত্র গোলটি করেছেন রবিউল হাসান। এর আগে বাংলাদেশের শেষ জয়টি ছিল কেরালা সাফ ফুটবলে ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর।

সাদা চোখে একটা গোলই তো। কিন্তু কাল রবিউলের গোলকে শুধু ‘এক’ সংখ্যা দিয়ে বিচার করা যায়? অবশ্যই না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের হোম পেজ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, কম্বোডিয়ার বিপক্ষে জয়সূচক গোলটির মাহাত্ম্য অনেক বেশি। অনেক দিন বাদে বিদেশের মাটিতে রবিউলের এই গোলটাই বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে জয়।

হার, হার, হার। বিদেশের মাটিতে একের পর এক খাবি খাচ্ছিল জাতীয় ফুটবল দল। বিদেশে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে গেলে দেশের মানুষও আজকাল জাতীয় দলের খবর রাখার প্রয়োজন মনে করেন না। ম্যাচের আগেই ধরে নেওয়া হয় হার, কিংবা ড্র করতে পারলেই নিজেদের কাছে নৈতিক জয়। সেখানে দাপুটে খেলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে দেখার দৃশ্য তো হিরণ্ময় স্মৃতি হয়ে ওঠার কথা! আর আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথম গোল করে দেশকে জেতানোর নায়ককে নিয়ে সাধারণত যা হয়, টাঙ্গাইলের তরুণ রবিউলকে ঘিরেও তা–ই হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই মিডফিল্ডারকে অভিনন্দন জানিয়ে ছবিতে সয়লাব। আর তাঁর ফেসবুকের খুদে বার্তায় জমা হচ্ছে রাশি রাশি শুভেচ্ছাবাণী। দেশের ফুটবলারদের জন্য এ তো বিরল অভিজ্ঞতা।

রবিউল তাই পড়েছেন মধুর সমস্যায়। সকালে কম্বোডিয়া থেকে প্রথম আলোকে জানালেন, ‘ভাই, ফেসবুকেই তো ঢুকতে পারছি না। মানুষ যেভাবে প্রশংসা করছে, আমি এতটা আশা করিনি। অনেক মেসেজ আসছে ইনবক্সে। খুবই ভালো লাগছে।’

প্রায় পাঁচ মাস পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে নেমেছিল বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবে ২০১৯ সালেরও প্রথম। রবিউলের কল্যাণে বছরটা শুরু হলো জয় দিয়ে। ড্রয়ের পথে এগিয়ে যাওয়া ম্যাচে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার জন্য তূণে কী অস্ত্র মজুত আছে, তা শুধু কোচ জেমি ডেই বোধ হয় জানতেন। ৬৫ মিনিটে বিপলু আহমেদের জায়গায় বদলি হিসেবে নামানো হয়েছিল রবিউলকে। ৮৩ মিনিটেই গোল! নমপেনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বলটি যখন জালে জড়াল, বাংলাদেশের আকাশে তখন বর্ণিল আবির। হ্যাঁ, উৎসবের আবির!

বদলি ফুটবলারের পায়ে গোল দেখা যায় অহরহ। এর পেছনেও থাকে কিছু ট্যাকটিক্যাল বিষয়। রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকলেও কিক অফ বাঁশির শুরু থেকে একাদশের খেলোয়াড়ের মতো থাকতে হয় তৎপর। গুনতে হয় মাঠে নামার অপেক্ষার প্রহর, ‘কোচ আমাকে আগের দিনই বলেছিলেন খেলতে হবে। একাদশে নাম নেই দেখে বদলি হিসেবে নামার অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু বেঞ্চে বসে থাকা অবস্থায় মনে হচ্ছিল আমি মাঠে খেলছি। এই বিষয়টা মারুফ স্যার ( আরামবাগের কোচ) আমাদের শিখিয়েছেন।’

আরামবাগের অধিনায়কের এই গোলের পেছনে আছে এক শিশুর অনুপ্রেরণাও। কিশোরগঞ্জ জেলায় লিঙ্কন ইব্রাহিম নামে রবিউলের এক ভক্ত আছেন। যিনি দেশের বিভিন্ন ভেন্যুতে ঘুরে ঘুরে আরামবাগ দল ও রবিউলের খেলা দেখেন। ম্যাচের আগের দিন তাঁর একমাত্র শিশুকন্যা রামিন লাহিফা ভিডিও বার্তায় গোলের আবদার করেছিল তাঁর চাচ্চু রবিউলের কাছে, ‘হ্যালো রবিউল চাচ্চু, আপনি কেমন আছেন? কালকে আপনাদের জন্য শুভকামনা। আপনার কাছ থেকে একটি গোল চাই।’ আন্তর্জাতিক নিজের প্রথম গোলটি এই শিশুকন্যাকেই উৎসর্গ করেছেন রবিউল।