স্প্যানিশ সাম্রাজ্যের সূচনা করা গার্দিওলাই এখন শেষ দেখছেন!

ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি
>চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলোর ফিরতি লেগে কাল শালকেকে ৭-০ গোলে হারিয়ে শেষ আটে উঠেছে ম্যানচেস্টার সিটি। কোয়ার্টার ফাইনালে এ পর্যন্ত জায়গা করে নিয়েছে তিনটি ইংলিশ ক্লাব

স্প্যানিশ ক্লাবগুলোর রাজত্ব শেষ। ইংলিশ শাসনের বুঝি শুরু হলো! কথাটি এক দশক আগে চ্যাম্পিয়নস লিগে স্প্যানিশ রাজত্বের যিনি শুরু করেছিলেন স্বয়ং তাঁর—পেপ গার্দিওলা!

ইতিহাদে কাল রাতের স্কোরবোর্ড সবার জানা। অনেকে বলতে পারে, তাই বলে ৭ গোল! শুধু ছেলেখেলা নয় সঙ্গে একটু রসিকতাও হয়ে গেল না? ম্যানচেস্টার সিটি সমর্থকদের নজরে তা একটু হয়েছে বৈকি। শালকেও তো যেন-তেন ক্লাব নয়। জার্মান ফুটবলে ওপরের সারিতেই থাকবে তাঁদের নাম। সেই শালকের জালে কাল রাত গুণে গুণে সাত গোল করেছে গার্দিওলার সিটি। দুই লেগ মিলিয়ে দলটি ১০-২ ব্যবধানের জয়ে উঠেছে শেষ আটেও। তবে সিটির ইংলিশ সমর্থকেরা এই গোলউৎসবের চেয়েও বেশি খুশি হবেন তাঁদের কোচের একটি কথায়। ইউরোপে গত এক দশক ধরে স্প্যানিশ ক্লাবগুলোর রাজত্বের অবসান দেখছেন গার্দিওলা।

মজার ব্যাপার, গত এক দশক বিবেচনায় নিলে এই গার্দিওলার হাত ধরেই সূচনা হয়েছিল স্প্যানিশ রাজত্বের। ২০০৯ সালে মেসি-জাভি-ইনিয়েস্তাদের নিয়ে গড়া স্বপ্নের সেই দল নিয়ে বার্সেলোনাকে ইউরোপসেরা করেছিলেন গার্দিওলা। তখন থেকে গতবার পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নস লিগের দশটি মৌসুম বিবেচনায় নিলে সাতবারই শিরোপা ভাগ করেছে রিয়াল মাদ্রিদ (৪বার) ও বার্সেলোনা (৩বার)। বাকি তিন মৌসুমে শিরোপা উঠেছে ইংলিশ (চেলসি), জার্মান (বায়ার্ন মিউনিখ) ও ইতালিয়ান (ইন্টার মিলান) ফুটবলে। কিন্তু এবারের দৃশ্যপট একেবারেই ভিন্ন। এখন পর্যন্ত কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে যে ছয়টি দল তার মধ্যে কোনো স্প্যানিশ ক্লাব নেই। স্পেনের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে শেষ আটে ওঠার আশা জিইয়ে রেখেছে শুধু বার্সা। আর্নেস্তো ভালভার্দের শিষ্যরা ফরাসি ক্লাব লিঁও-র সঙ্গে প্রথম লেগ গোলশূন্য ড্র করায় নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

ওদিকে চূড়ান্ত হওয়া ছয় দলের মধ্যে তিনটি ক্লাব ইংলিশ ফুটবলের প্রতিনিধি—ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও টটেনহাম হটস্পার। এ তালিকায় যোগ হতে পারে লিভারপুলের নামও। প্রথম লেগে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করে ফিরতি লেগে জার্মান ক্লাবটির বাধা টপকাতে হবে ইয়ুর্গেন ক্লপের দলকে। লিভারপুল শেষ আটে উঠে আসতে পারবে কি না,তা সময় হলেই জানা যাবে। আপাতত ২০১১ সালের পর এবার প্রথমবারের মতো শেষ আটে ন্যূনতম তিনটি জায়গা নিশ্চিত করেছে ইংলিশ ক্লাবগুলো। গার্দিওলা তাতে ভীষণ খুশি। ভুল পড়েননি। জাতিতে স্প্যানিশ হয়েও পেশাদারি জগতের পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন সিটি কোচ, ‘কোয়ার্টার ফাইনালে তিনটি দলের উঠে আসা ইংলিশ ফুটবলের জন্য দারুণ ব্যাপার। হয়তো লিভারপুলও উঠে আসবে। গত এক দশকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছে স্প্যানিশ ক্লাবগুলো। এটা আমাদের জন্য (সিটি কোচ হিসেবে) ভালো। ইংলিশ ফুটবলের জন্য অবিশ্বাস্য।’

চ্যাম্পিয়নস লিগে সবশেষ পাঁচ শিরোপা উঠেছে স্প্যানিশ ক্লাবগুলোর ঘরে। এবার কী তাহলে ইংলিশদের পালা? গার্দিওলা এ নিয়ে কিছু বলেননি। তাঁর দল তো কথা বলছে মাঠে! শালকের মাঠে প্রথম লেগ ৩-২ গোলে জিতেছিল সিটি। আর কাল জার্মান ক্লাবটিকে এক প্রকার উড়িয়েই দিয়েছে। স্বয়ং সিটির সমর্থকেরাও বোধ হয় এত আশা করেননি। ৩৫ মিনিটে সার্জিও আগুয়েরোর শুরু করা গোলবন্যার যতি টেনেছেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস, ৮৪ মিনিটে। অর্থাৎ ম্যাচের এই ৫০ মিনিটের মধ্যে গার্দিওলার দল প্রতি সাত মিনিট অন্তর গড়ে একটি করে গোল করেছে। জোড়া গোল করেছেন আগুয়েরো। একটি করে গোল লেরয় সানে, রহিম স্টার্লিং, বের্নার্দো সিলভা, ফিল ফডেন ও গ্যাব্রিয়েল জেসুসের।