বাংলাদেশের ক্রিকেটের পেছনে হাঁটা!

উইলিয়ামসনের হাসিটার কারণ না হয় বোঝা যাচ্ছে, মাহমুদউল্লাহর হাসিটাই বরং শুষ্কং কাষ্ঠং! ছবি: এএফপি
উইলিয়ামসনের হাসিটার কারণ না হয় বোঝা যাচ্ছে, মাহমুদউল্লাহর হাসিটাই বরং শুষ্কং কাষ্ঠং! ছবি: এএফপি

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ এক পা এগোয় তো দুই পা পেছায়। এই বাস্তবতা বাংলাদেশের সমর্থকেরা মেনেই নিয়েছিলেন বোধ হয়। তবে এবারের নিউজিল্যান্ড সফরে দল ক্রমাগত পেছনেই হাঁটছে। না, নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে গিয়ে বাংলাদেশ টেস্টে দুর্দান্ত কিছু করে ফেলবে, এতটা আশা খুব বেশি মানুষ করেনি, তা সত্যি। কিন্তু গতবারের সফরে বাংলাদেশ টেস্টে যা করেছিল, এবার তো সেই লড়াইটুকুও দেখা যাচ্ছে না। বরং দুই দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ম্যাচেও হেরেছে।

চলতি টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের অসহায়ত্ব ধরা পড়ছে পরিসংখ্যানে। এবার দুই ম্যাচেই বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে। এই পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ অন্তত পিছিয়েছে ১১ বছর। এবারের নিউজিল্যান্ড সফরের আগে বাংলাদেশ সর্বশেষ টানা দুই ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে।

এবারের ফল মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০০১ সালের বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর। সেবারও হ্যামিল্টনে বাংলাদেশ হেরে গিয়েছিল তিন দিনের মধ্যে। বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল একটা দিন। অথচ চতুর্থ দিনে লাঞ্চের মধ্যেই খেলা শেষ। এবার বৃষ্টিতে দুদিন ভেসে গেল বলে ম্যাচটা কেবল পঞ্চম দিনে গেছে। এবারও পঞ্চম বা তৃতীয় দিনের পুরোটাও খেলা হয়নি বাংলাদেশের। এদিক দিয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে গেল প্রায় দেড় যুগ!

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ এ নিয়ে সপ্তমবার ইনিংস ব্যবধানে হারল। বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ৮ বার ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে। এই সিরিজে আরও একটি ম্যাচ বাকি আছে সেই রেকর্ডটি ধরে ফেলার জন্য! বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে ৪০ টেস্টে। এসব ম্যাচে ওয়েলিংটনের হারটাই সবচেয়ে কম ব্যবধানের।

নিউজিল্যান্ডে খেলা ৯ টেস্টেই হেরেছে বাংলাদেশ। আর কোনো দেশে বাংলাদেশ টানা এত টেস্টে হারেনি। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কায় হেরেছিল প্রথম আট ম্যাচেই। নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ স্বাগতিকদের বিপক্ষে কোনো ফরম্যাটে কখনো জেতেনি। এবারও সেই রেকর্ড অক্ষুণ্ন রেখে দেশে ফিরে আসতে হবেই মনে হচ্ছে।

বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছেন নিল ওয়াগনার। দুই ইনিংসেই পাঁচ নম্বর বোলার হিসেবে বোলিং করে ম্যাচে ৯ উইকেট পেয়েছেন নিল ওয়াগনার। টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথম কোনো পেসার পাঁচে বোলিং করে ৮ উইকেটের বেশি পেলেন।

টানা দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ২০ উইকেট পেয়েছেন কিউই পেসাররা। টানা দুই ম্যাচের প্রতিপক্ষ পেসারদের বাংলাদেশের ২০ উইকেট তুলে নেওয়ার দ্বিতীয় ঘটনা এটি। প্রথমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০০২ সালে বাংলাদেশ সফরে।

এত হতাশার মধ্যে টিমটিমে প্রদীপের মতো কিছু আশা জাগানিয়া পরিসংখ্যানও অবশ্য আছে। টেস্টে দেশের বাইরে মাহমুদউল্লাহর রান হয়ে গেল ১০৪৩। বাংলাদেশের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে কাল দেশের বাইরে ১০০০ রানের মাইলফলক ছুঁলেন মাহমুদউল্লাহ। ১৮৫১ রান নিয়ে সবার ওপরে তামিম।

তামিমের ভালো সম্ভাবনা আছে দেশের বাইরে এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি রান করার বাংলাদেশি রেকর্ডটা নিজের করে নেওয়ার। যে রেকর্ড আপাতত হাবিবুল বাশারের দখলে। এই সিরিজে ২৭৮ রান করেছেন তামিম। দুই বছর আগে নিউজিল্যান্ড সফরেই সাকিব আল হাসান করেছিলেন ২৮৪ রান। তবে শীর্ষে থাকা হাবিবুলের রেকর্ডটি (৩৭৯ রান, ২০০৩ পাকিস্তান সফরে) ভাঙতে তামিমকে আরও করতে হবে ১০২ রান।

তামিম ছাড়া এই সিরিজে যা একটু লড়াই দেখা যাচ্ছে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। অধিনায়কের ভূমিকায় যে টেস্টগুলো মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন, তাতে তাঁর ব্যাটিং গড় হয়ে গেছে ৫৯.৪৪। বাংলাদেশি টেস্ট অধিনায়কদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪১.৪৪ গড় মুশফিকুর রহিমের।