কাকে 'কয়েদি' বানিয়ে রেখেছে নেইমারের দল?

নেইমার ও রাবিওত — যখন একসঙ্গে খেলতেন। ছবি : টুইটার
নেইমার ও রাবিওত — যখন একসঙ্গে খেলতেন। ছবি : টুইটার
>

গত ডিসেম্বর থেকে পিএসজির হয়ে মাঠে নামতে পারছেন না আদ্রিয়েন রাবিওত। ঘরের ছেলের সঙ্গে পরের মতো আচরণ করছে পিএসজি। এই অবস্থায় থাকতে না পেরে ছেলের দুর্দশা সম্পর্কে মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন রাবিওতের মা ভেরোনিক রাবিওত। একই সঙ্গে নেইমারের প্রতি ক্লাবের একচোখা নীতিরও সমালোচনা করেছেন তিনি।

নেইমারের সঙ্গে পিএসজি যেমন আচরণ করে, আদ্রিয়েন রাবিওতের সঙ্গে তেমন করা হয় না। নেইমারকে যেখানে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, রাবিওতকে সেখানে কারণে-অকারণে জরিমানা দিতে হয়। গত ডিসেম্বর থেকে পিএসজির হয়ে মাঠেও নামানো হয় না রাবিওতকে। সব মিলিয়ে এই ফরাসি মিডফিল্ডারের এখন শনির দশা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাবিওতের মা —ভেরোনিক রাবিওত।

ছেলে ‘জেলখানা’য় কয়েদির মতো বসবাস করছে, বলছেন ভেরোনিক, ‘আদ্রিয়েন এখন একজন জেলখানার কয়েদি। এখানকার পরিবেশ একদমই ভালো নয়। কিছুদিন পর ওকে আসলেই একটা কয়েদখানায় আটকে রাখা হবে, শুকনো রুটি আর পানি দিয়ে!’
ছেলে ফুটবল খেলতে চায়। কিন্তু তাঁর ছেলেকে খেলতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ভেরোনিক, ‘আদ্রিয়েন খেলতে চায়। একজন ফুটবলার ফুটবল খেলার জন্য বেঁচে থাকে। বেঞ্চে বসে থাকার জন্য নয়। ওকে সেই ডিসেম্বর থেকে খেলতে দেওয়া হচ্ছে না। খুব সম্ভবত জুনের আগে ও খেলতেও পারবে না। একজন ফুটবলারের কাছে ছয় মাস দীর্ঘ একটা সময়। এই দীর্ঘ সময় ধরে আপনি না খেলে থাকতে পারেন না। কিন্তু আদ্রিয়েনকে সেটাই করতে হচ্ছে। তাকে পিএসজির অনুশীলন মাঠ থেকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই ও সতীর্থদের সঙ্গে অনুশীলনও করতে পারছে না। কিন্তু আপনি যদি একজন বিশ্বমানের ফুটবলার হন, আপনাকে অনুশীলন করাই লাগবে। আদ্রিয়েনও তাই অনুশীলন করে যাচ্ছে। আমি বলব না সে কোথায় কীভাবে কার সঙ্গে অনুশীলন করছে, কিন্তু আমি এই নিশ্চয়তা দিতে পারি, যে সে অনুশীলন করছে।'

রাবিওতের বিপক্ষে আরও গুরুতর কিছু অভিযোগ উঠেছে। চ্যাম্পিয়নস লিগে যে দিন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে হেরে বিদায় নিল পিএসজি, সে দিন তিনি নৈশক্লাবে গিয়ে পার্টি করেছেন। সাবেক ফরাসি ডিফেন্ডার প্যাট্রিস এভরার একটা ভিডিওতে ‘লাইক'’দিয়েছেন, যে ভিডিওতে পিএসজির বাদ পড়া উদ্‌যাপন করা হচ্ছিল। বিষয়গুলো স্বাভাবিকভাবে নেয়নি পিএসজি। এ ব্যাপারে ভেরোনিক কি বললেন, ‘প্যাট্রিস এভরা পিএসজির বাদ পড়া উদ্‌যাপন করছে, এমন কোনো ভিডিওতে আদ্রিয়েন কিছু করেছে বলে আমার মনে হয় না। আর এখন তো মনে হচ্ছে পিএসজি আদ্রিয়েনের ব্যক্তিগত জীবনেও নাক গলাতে চায়। তারা চায় যেহেতু আদ্রিয়েন মাঠে নিষিদ্ধ, সেহেতু ম্যাচের সময় আদ্রিয়েন টিভির সামনে বসে থাকুক। ম্যাচ শেষে ঘুমোতে চলে যাক। কিন্তু এভাবে তো হয় না। আদ্রিয়েনের একটা ব্যক্তিগত জীবন আছে। তাকে কিছু তো একটা করতে হবে সময় কাটানোর জন্য। সে তো এখন মাটির হাঁড়ি পাতিল বানাতে বসে যেতে পারে না!’

কথা প্রসঙ্গে ভেরোনিক তোপ দেগেছেন নেইমারের দিকেও। নেইমারের প্রতি যেমন আচরণ করা হয়, রাবিওত তেমন আচরণ পান না বলে জানিয়েছেন তিনি, ‘ক্লাব মিটিংয়ে ছয় মিনিট দেরি করে গেলে আদ্রিয়েনকে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়। কিন্তু ক্লাবে অনেক খেলোয়াড় আছে যারা চোটের নাম করে বিশ্বের অন্যপ্রান্তে গিয়ে রিও কার্নিভ্যাল উদ্‌যাপন করে আসে।’

প্রসঙ্গত, মার্শেইয়ের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ক্লাব মিটিংয়ে ছয় মিনিট দেরি করে এসেছিলেন রাবিওত। তাঁকে বিরাট অঙ্কের জরিমানা করা হয়। ওদিকে চোট আক্রান্ত নেইমার ক্লাবের মিটিংয়ে না থেকে ক্লাবের সম্মতিক্রমে ব্রাজিলে গিয়ে রিও কার্নিভ্যালে যোগ দিয়েছিলেন। রাবিওতের মায়ের মতে, এটা স্রেফ দ্বিমুখিতা।

তবে রাবিওতের এই অবস্থার পেছনে রাবিওত নিজে ও তাঁর মায়ের দোষও কম নয়। সামনে জুনে পিএসজির সঙ্গে রাবিওতের চুক্তি শেষ হয়ে যাবে। বার্সেলোনায় যাওয়ার আশায় দিন গোনা রাবিওত পিএসজির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেননি। এ কাজ করার জন্য তাঁকে ইন্ধন জুগিয়েছেন তাঁর মা (যিনি কি না আবার তাঁর এজেন্টও) ভেরোনিক। এদিকে রাবিওতকে শেষ মুহূর্তে না নিয়ে আয়াক্সের মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকে দলে এনেছে বার্সা। ওদিকে পিএসজির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করার কারণে খেপেছে তারা। এ কারণেই রাবিওতকে ক্লাবের সবকিছু থেকে নিষিদ্ধ করেছে পিএসজি। এদিকে গত জানুয়ারির দলবদলেও অন্য কোনো ক্লাবে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাননি রাবিওত। ইংলিশ ক্লাব টটেনহাম অনেক চেয়েছিল তাঁকে। কিন্তু টটেনহামের মতো 'ছোট' ক্লাবে খেলার মতো খেলোয়াড় তিনি নন, এই বাহানা দিয়ে পিএসজিতেই থেকে গেছেন রাবিওত। গত বিশ্বকাপে ফরাসি দলে জায়গা না পেয়ে কোচ দিদিয়ের দেশমের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছিলেন এই তারকা। অন্তত ফরাসি দলের দায়িত্বে যত দিন দেশম আছেন, তত দিন রাবিওতকে ফ্রান্সের জার্সি গায়ে দেখা যাবে না, এমনটা বলাই যায়।

সব মিলিয়ে অবস্থা ভালো নয় রাবিওতের!