জাতীয় স্টেডিয়ামে খালবিলের সেচপদ্ধতিই যখন ভরসা!

চলছে পানি সেচা। ছবি ভিডিও থেকে
চলছে পানি সেচা। ছবি ভিডিও থেকে

প্রায় ৩০ মিনিটের মাঝারি মানের বৃষ্টি। এতেই মাঠের সাইড লাইন ধরে জমে ওঠে পানি। প্রেস বক্সে উপস্থিত অনেকেই হতবাক, ‘এই অল্প বৃষ্টিতেও মাঠে এত পানি জমে যায়!’ এরপর যা ঘটল, তা কোনো সভ্য দেশের শীর্ষ লিগে হয়, কেউ বিশ্বাস করবে না। গ্যালারি ঘেঁষে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত ভাঙা হার্ডবোর্ড দিয়ে পুকুর সেচের মতো চলল পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা। পুকুরও না, ডোবা কিংবা খালবিলের সেচপদ্ধতি বলা বরং ভালো।

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠে। প্রথমত, একটু বৃষ্টিতেই মাঠে পানি জমে যাচ্ছে কেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার হলোটা কী? দ্বিতীয়ত, পানিনিষ্কাশনের আধুনিক ব্যবস্থা কি নেই? মাঠের চারপাশে পানিনিষ্কাশনের জন্য নালা আছে। মাঠটি অত্যধিক ব্যবহারের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে দেবে গেছে প্রায় ৬ ইঞ্চি। ফলে পানি ড্রেনের চেয়ে মাঠই নিচু, পানি সরবে কী করে? আবার জমে থাকা পানি সরানোর কোনো যন্ত্রপাতি। ফলে একটু বৃষ্টিতেই ভেসে যাচ্ছে মাঠ। আর পানি বের করে মাঠ খেলার উপযোগী করে তুলতে লেগে যাচ্ছে অনেক সময়।

আজকের ম্যাচটির কথাই ধরুন। প্রিমিয়ার লিগে মাঠে নেমেছিল আবাহনী লিমিটেড ও শেখ জামাল ধানমন্ডি। খেলার ৩৬ মিনিটে ঝোড়ো বৃষ্টি শুরু হলে খেলা বন্ধ করে দেন রেফারি। ৩০ মিনিটের মধ্যে বৃষ্টি থেমে গেলেও খেলা বন্ধ রাখতে হয় এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট। কারণ মাঠ অনুপযোগী। উপযোগী হবেই বা কীভাবে! ভাঙা হার্ডবোর্ড দিয়ে পানি সরাতে দেখা যায় মাঠকর্মীর সঙ্গে কয়েকজন বলবয়কেও।

আধা ঘণ্টার চেষ্টায় জমে থাকা দৃশ্যমান পানির কিছুটা সরাতে পারলেও খেলার উপযুক্ত হলো না। পুনরায় খেলা শুরু হওয়ার আগে আবাহনীর লেফটব্যাক ওয়ালি ফয়সাল তো নিজেই হার্ডবোর্ড দিয়ে পানি সরানোর চেষ্টা করলেন। এই হলো বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের মাঠের হালচাল।

ফুটবলের ১৭টি আইনের মধ্যে প্রধান শর্তই খেলার মাঠ। অথচ এই নিয়ে হেলদোল নেই ভেন্যুর মালিক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, প্রধান ব্যবহারকারী বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের। ফুটবল খেলার সুবাদে মাঠটা যেহেতু বেশির ভাগ সময় ব্যবহার করে থাকে বাফুফে, তাদের গরজটাই বেশি থাকা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিষয়টি স্বীকার করছেন স্বয়ং বাফুফে সদস্য ও গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বাবুল, ‘মাঠে যে এখনো খেলা হচ্ছে এ-ই বেশি। বাফুফের সঙ্গে অনেক দেনদরবার করেও মাঠের জন্য কিছু করতে পারিনি। খেলার অন্যতম প্রধান শর্ত মাঠ নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মাটি দেবে গেছে। মাঝখানে প্রায় আট মাস খেলা ছিল না। সেই সময়টায় চাইলে মাটি ফেলে উঁচু করা যেত। কিন্তু সেটা বাফুফেকে বারবার জানানোর পরও কোনো লাভ হয়নি। এ ছাড়া দ্রুত পানিনিষ্কাশনের জন্য কোনো মেশিন কিংবা পদ্ধতি আমাদের হাতে নেই।’

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদও দুষছে বাফুফে কর্তাদের। স্টেডিয়ামের প্রশাসক মোবারক হোসেন লিটন সরাসরি বাফুফের দিকে আঙুল তুলেছেন, ‘মাঠে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ সিস্টেম আছে। কিন্তু মাঠ এতটাই দেবে গিয়েছে পানি ড্রেন পর্যন্ত পৌঁছায় না। এই মৌসুম শুরুর আগে অনেক বড় বিরতি থাকায় বাফুফে গ্রাউন্ডস কমিটিকে বলেছিলাম মাটি দিতে। তারা তা করেনি। আর পানিনিষ্কাশনের জন্য বড় ফোম কেনার পরামর্শ দিয়েছিলাম, সেটাও করেনি। এ ছাড়া পানি নিষ্কাশনের জন্য যে আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রয়োজন, এর জন্য কোনো চাহিদা বাফুফে আমাদের দেয়নি।’

২২ এপ্রিল এই মাঠেই শুরু হবে ছয় জাতি অনূর্ধ্ব ১৯ বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট। শেষ বিকেলে বৃষ্টি যেভাবে হানা দিচ্ছে, তাতে এত বড় টুর্নামেন্ট সফলভাবে শেষ করা নিয়েই ওঠে যাচ্ছে প্রশ্ন। এমন মাঠে খেলা চললে তা আরও ক্ষতবিক্ষত হবে। তাতেও শঙ্কার শেষ হচ্ছে না। প্রকৃতির ওপর তো কারও হাত নেই। সেটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি তো নিতে হবে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট চলার সময় খালবিলের সেচপদ্ধতি বজায় থাকলে তো লজ্জায় পড়তে হবে বাংলাদেশকেই।

যেভাবে পানিনিষ্কাশন করা হয় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে