'ভার'-এ ভারাক্রান্ত সিটি আর গার্দিওলা

সিটিকে এবারও সেমিতে তুলতে পারলেন না গার্দিওলা। ছবি : এএফপি
সিটিকে এবারও সেমিতে তুলতে পারলেন না গার্দিওলা। ছবি : এএফপি
>চ্যাম্পিয়নস লিগে এমন উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচের উদাহরণ খুব বেশি নেই। ম্যানচেস্টার সিটি ও টটেনহামের এই ম্যাচে পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচের ভাগ্য শেষ পর্যন্ত টটেনহামের দিকেই হেলেছে। ম্যাচ শেষে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারিকে (ভার) ইচ্ছেমতো দুষেছেন সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা।

পুরো ম্যাচে হয়েছে সাত গোল। সাত গোলের মধ্যে আবার ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভার) দুই সিদ্ধান্তে মুখের হাসি মলিন হয়ে গিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটির। দুর্দান্ত ফুটবল খেলে সিটিকে টপকে সেমিতে উঠে গেছে টটেনহাম। প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে ১-০ গোলে জিতেছিল তারা। দ্বিতীয় লেগে গতকাল ৪-৩ গোলে হারলেও সিটির মাঠে তিনটি ‘অ্যাওয়ে গোলে’র সুবিধা পেয়েছে স্পাররা। যথারীতি ম্যাচ শেষে চূড়ান্ত আলোচনা হচ্ছে ‘ভার’ নিয়ে। সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা ম্যাচ হারের পেছনে দায়ী করেছেন ভারকেই।

শুরু থেকেই চূড়ান্ত আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে দুটি দল। ১১ মিনিটের মধ্যে দুটি করে চারটি গোল দিয়ে দেয় সিটি ও স্পার্স। চার মিনিটের মাথায় রহিম স্টার্লিং দুর্দান্ত এক বাঁকানো শটে গোল করে সিটিকে এগিয়ে দেন। ম্যাচের ফল হেলে পড়ে সিটির দিকে। ১০ মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে দক্ষিণ কোরিয়ার ফরোয়ার্ড হিউং মিন সন টটেনহামকে এগিয়ে দেন। সনের দ্বিতীয় গোলের এক মিনিট পর গোল করে আবারও সিটির আশা বাঁচিয়ে রাখেন পর্তুগিজ উইঙ্গার বার্নার্ডো সিলভা। ম্যাচের ২১ মিনিটে আরেকটা গোল করে সিটিকে এগিয়ে দেন রহিম স্টার্লিং।

দ্বিতীয়ার্ধেও প্রথম হাসি হাসে সিটিই। ৫৯ মিনিটে গোল করে স্কোরলাইন ৪-২ করেন দলের তারকা স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরো। তখন সমীকরণটা অনেকটা এমন ছিল, আর কোনো গোল না হলে সিটিই উঠবে পরের রাউন্ডে। কিন্তু কোনোভাবে যদি টটেনহাম একটা গোল করে দেয়, সিটির মুখের হাসি মুছে যাবে সঙ্গে সঙ্গে। এমন শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তে ফুটবল–বিধাতা ভাবলেন, এই ম্যাচের আরেকটু রং মেশানো যাক!

মঞ্চে আবির্ভূত হলো ভার। ৭৩ মিনিটে স্পার্স রাইটব্যাক কিয়েরান ট্রিপিয়েরের কর্নারে ‘কিছু একটা’ ছুঁইয়ে গোল করেন দলটির স্প্যানিশ স্ট্রাইকার ফার্নান্দো ইয়োরেন্তে। কর্নার থেকে আসা বলটা এমনভাবে ইয়োরেন্তেকে ছুঁয়েছিল, প্রথম দেখায় মনে হয়েছিল ইয়োরেন্তের হাতে লেগেই গোল হয়েছে বুঝি। কিন্তু পরে ভারের সহায়তায় রেফারি ঘোষণা দেন হাত নয়, ইয়োরেন্তের কোমর স্পর্শ করে বল ঢুকেছে সিটির জালে! স্কোরলাইন ৪-৩। আর গোল না হলে স্পার্স উঠবে পরের রাউন্ডে, কিন্তু সিটি কোনোভাবে আরেক গোল দিয়ে দিলে সিটিই উঠবে সেমিতে।

এমন অবস্থায় দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে আগুয়েরোর বাড়ানো বল নিয়ে গোল করে বসেন সিটির রহিম স্টার্লিং। টাচলাইনে উন্মত্ত উল্লাসে মেতে ওঠেন গার্দিওলা ও তার দল।

কিন্তু বিধি বাম! স্পার্সের খেলোয়াড়েরা দাবি করে বসেন, পাস দেওয়ার সময় অফসাইডে ছিলেন আগুয়েরো। তুর্কি রেফারি কুনাইত কাকির আবারও ভারের সাহায্য নিয়ে দেখেন আসলেই অফসাইডে ছিলেন আগুয়েরো! এক মিনিট আগেই উদ্দাম উল্লাস করা গার্দিওলার চোখেমুখে তখন রাজ্যের হতাশা। ওদিকে গার্দিওলার উল্লাস জায়গা করে নিয়েছে স্পার্স কোচ মরিসিও পচেত্তিনোর ডাগআউটে!

ম্যাচশেষে আকারে-ইঙ্গিতে ভারকেই দুষেছেন গার্দিওলা। স্পার্সের শেষ গোলটা ইয়োরেন্তের কোমরে নয়, বরং হাতে লেগেই হয়েছিল বলে মনে করছেন তিনি, ‘আমি ফুটবলে ভারের ভূমিকাকে সম্মান করি। কিন্তু আমার দিক থেকে মনে হয়েছিল, বলটা ইয়োরেন্তের কোমরে নয়, হতে লেগেছিল। হয়তো রেফারি অন্যদিক থেকে দেখেছেন।’

শেষ মুহূর্তে স্টার্লিংয়ের গোলটাও অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়। শেষ মুহূর্তে এসে এভাবে হারতে হলো, স্বভাবতই হতাশ গার্দিওলা, ‘আমি সব সময় ন্যায্য ফুটবলের পক্ষে। মাঝেমধ্যে রেফারিদেরও সাহায্য লাগে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। এখন অফসাইড তো অফসাইডই, কী বলতে পারি আমি আর এ নিয়ে? আমি অনেক হতাশ। ফুটবল মাঝেমধ্যে অনেক নির্মম। এটা মেনে নিতে হবে।’