বিশ্বকাপের কেউই প্রিমিয়ারে শীর্ষ রান সংগ্রাহক নন

সাইফ হাসান। ছবি: প্রথম আলো
সাইফ হাসান। ছবি: প্রথম আলো
>ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এবার শীর্ষ পাঁচ রান সংগ্রাহকের মধ্যে নেই বিশ্বকাপ দলের কেউই। শীর্ষ পাঁচ বোলারের মধ্যে জায়গা করে নিতে পেরেছেন শুধু সাইফউদ্দীন

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ (৫০৫) রানের রেকর্ডটি ভারতের শিখর ধাওয়ানের। ২০১৬ সালে ছোটদের এই বিশ্বকাপে ধাওয়ানের রেকর্ড ভাঙার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সাইফ হাসান। প্রতিজ্ঞা পূরণ হয়নি টানা দুটি যুব বিশ্বকাপ খেলেও। তাঁর স্বপ্ন ছিল ছোটদের বিশ্বকাপে ভালো খেলে জায়গা করে নেবেন জাতীয় দলে। খেলবেন বিশ্বকাপেও। সাইফের এসব স্বপ্নের কোনো কিছুই পূরণ হয়নি। তবে এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সাইফ যা করেছেন, তা কিন্তু বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকা কোনো ক্রিকেটারই করতে পারেননি।

এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক সাইফ। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় অনেকে ২০ বছর বয়সী এই ওপেনারের অর্জন নিয়ে ভ্রুকুটি তুলতেই পারেন। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, জাতীয় দলের কেউই কিন্তু ডিপিএলে রান করায় শীর্ষ পাঁচে নেই। আর ১৬ ম্যাচে ৬২.৬১ গড়ে ৩ সেঞ্চুরিসহ ৮১৪ রান (সাইফের) তোলা কিন্তু পাটা উইকেটেও কঠিন।


যেমন সহজ নয় ২৭টা ছক্কা মারাও। এবার প্রিমিয়ার লিগে এটাই সর্বোচ্চসংখ্যক ছক্কা মারার নজির, যা গড়েছেন সাইফ। কিন্তু প্রসঙ্গ শুধু সাইফ নন। এবার প্রিমিয়ার লিগে শীর্ষ পাঁচ রান সংগ্রাহকের নামগুলো দেখুন—সাইফ হাসান, মোহাম্মদ নাঈম, রকিবুল হাসান, জহুরুল ইসলাম ও ফজলে মাহমুদ। তালিকার প্রথম দুজনের বয়স উনিশ-কুড়ি। দুজনেই জাতীয় দলে ঢোকার অপেক্ষায়। পরের তিনজনের মধ্যে ফজলে মাহমুদ জাতীয় দলের খেলার দিক থেকে সাম্প্রতিকতম। সেটিও গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২ ম্যাচ। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান সহসাই জাতীয় দলে ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

তবে সন্দেহ নেই রকিবুলকে নিয়ে। ৯ টেস্ট ও ৫৫ ওয়ানডে খেলা রকিবুল দেশের হয়ে সবশেষ খেলেছেন ৮ বছর আগে। ৩১ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের জাতীয় দলে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই—এটা বলে দেওয়াই যায়। জহুরুলের ব্যাপারেও তেমনটি বলা গেলেও ঠিক জোর দিয়ে নয়। সম্ভাবনা নিয়ে আসা এই ব্যাটসম্যান দেশের হয়ে সবশেষ খেলেছেন ৬ বছর আগে। এবার প্রিমিয়ার লিগে রীতিমতো পুনর্জাগরণই ঘটেছে জহুরুলের। কে জানে, এ পুনর্জাগরণের পুরস্কার পেলেও পেতে পারেন। তবে মজাটা অন্যখানে। নিজেকে এই পাঁচ ক্রিকেটারের মধ্যে একজন বলে মনে করুন। এরপর তালিকাটা দেখলে কেমন লাগবে?

জহুরুল ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো
জহুরুল ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো

শিহরিত হওয়াই স্বাভাবিক। ঘরোয়া ক্রিকেটে জাতীয় দলের তারকাদের আধিপত্য থাকাই স্বাভাবিক। আর সংস্করণটি যদি হয় ওয়ানডে তাহলে তো কথাই নেই। কারণ বাকি দুই সংস্করণ বিচারে বাংলাদেশের ওয়ানডে দলই বেশি শক্তিশালী। সেখানে শীর্ষ পাঁচে নেই জাতীয় দলের কেউই!

বিশ্বকাপ দলে থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে শীর্ষে আছেন সৌম্য সরকার। সেটিও শীর্ষ দশের বাইরে। ডাবল সেঞ্চুরিসহ ১৩ ম্যাচে ৫১১ রান তোলা সৌম্য এই তালিকায় ১২তম, মোসাদ্দেক হোসেন ১৪তম। বিশ্বকাপের দল থেকে শীর্ষ ২০জনের মধ্যে জায়গা করে নিতে পেরেছেন শুধু এ দুজনই। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের দলে থাকা ইয়াসির আলী ২০তম।

তবে এখানে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, সাকিবদের মতো দেশসেরা ব্যাটসম্যানেরা এবার প্রিমিয়ার লিগে খেলেননি। সাধারণ যুক্তি হলো, এসব ক্রিকেটার খেললে নিশ্চয়ই শীর্ষ পাঁচে সাইফ-নাঈমদের জায়গা হতো না! সংগত কারণেই এই যুক্তির পক্ষাবলম্বনকারীদের সংখ্যাই বেশি হবে। তা হোক, কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না জাতীয় দল বলতে শুধু তামিম-সাকিব-মুশফিকরা কিংবা শুধু কয়েক সিনিয়র ক্রিকেটারেরা নন। বাকিরা তাহলে কোথায়?
শীর্ষ পাঁচ বোলারের তালিকা দেখলেও একই খটকা লাগে। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে আছেন শুধু সাইফউদ্দীন। ১৩ ম্যাচে ২৫ উইকেট নিয়ে তৃতীয়। শীর্ষে জাতীয় দল থেকে বহুদিন আগে বাদ পড়া ফরহাদ রেজা। (১৬ ম্যাচে ৩৮ উইকেট)। দুইয়ে থাকা মোহাম্মদ শহীদও দেশের হয়ে সবশেষ খেলেছেন তিন বছর আগে।

    খেলোয়াড়

ম্যাচ

 রান

  গড়

১০০/৫০

সাইফ হাসান

১৬

৮১৪

৬২.৬১

৩/৪

মোহাম্মদ নাঈম

১৬

৮০৭

৫৩.৮০

৩/৫

রকিবুল হাসান

১৬

৭৮১

৬০.০৭

১/৮

জহুরুল ইসলাম

১৫

৭৩৫

৫৬.৫৩

৩/৩

ফজলে মাহমুদ

১৩

৬০৩

৭৫.৩৭

৩/২