মনিকার 'সেরা' গোলের গোপন রহস্য কী?

অনূর্ধ্ব-১৯ বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়ের ম্যাচে ভলিতে দুর্দান্ত গোল করেছিলেন বাংলাদেশের মনিকা চাকমা। গোলটি জায়গা করে নিয়েছে ফিফার ফ্যানস ফেবারিটের সেরা পাঁচে। পরিশ্রমের জোরেই এমন গোল করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন মনিকা।

বাংলাদেশের ফুটবলাররা ফাঁকা পোস্টেও গোল করতে পারেন না—অভিযোগটা শোনা যায় হরহামেশা। কথাটি পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু দেশের নারী ফুটবলারদের ক্ষেত্রে কথাটি পুরোপুরি খাটে না। কারণ দৃষ্টিনন্দন গোল করতে জুড়ি নেই মনিকা চাকমা, কৃষ্ণা রানী সরকারদের।

মনিকা চাকমা। ছবি: প্রথম আলো
মনিকা চাকমা। ছবি: প্রথম আলো

এই তো ৩০ এপ্রিল এক গোল করে তাঁক লাগিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের মিডফিল্ডার মনিকা। বাংলাদেশের এক মেয়ের পায়ে অমন গোল ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। শেষ পর্যন্ত এক বাংলাদেশির বদৌলতে ‘ফ্যানস ফেবারিট’-এর সৌজন্যে গোলটি পৌঁছে গেছে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার দরবারে। শুধু তা-ই নয়, এবারের সপ্তাহে ‘ফ্যানস ফেবারিট’ নামের ফিফার ক্যাটাগরিতে প্রকাশ পাওয়া পাঁচটি সেরা ঘটনার একটি বাংলাদেশের মেয়ের গোল। ফিফা মনিকাকে উপাধি দিয়েছে ‘ম্যাজিকাল চাকমা’।

অনূর্ধ্ব-১৯ বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়ের ম্যাচে চোখ ধাঁধানো গোলটি করেছিলেন মনিকা। প্রথমে একজনকে গতিতে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের নাম্বার সিক্স আরেক ডিফেন্ডারের মাথার ওপর থেকে হেড করে বলটা নিজের সুবিধামতো জায়গায় নিয়েছেন। বিপদ বুঝে মনিকাকে থামানোর জন্য এগিয়ে এসেছিলেন প্রতিপক্ষের দুজন খেলোয়াড়। কিন্তু মনিকা সুযোগ দিলে তো! পেনাল্টি বক্সের ঠিক বাইরে থেকে বাঁ-পায়ের জোরালো ভলিতে বল চলে গেল পোস্টের দুরূহ কোণে। প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক ঝাঁপ দিয়েও বলের নাগাল পাননি।

স্বাভাবিকভাবে সবার জানার আগ্রহ দুর্দান্ত গোলের রহস্য কী? আসলে গোপন করে রাখার মতো কোনো রহস্য নেই। পরিশ্রমের জোরেই এসেছে অমন দুর্দান্ত গোল, ‘আমি প্রতিদিন গোল করার জন্য আলাদাভাবে অনুশীলন করি। পোস্টে অনেক শট মারি। বলে সুইং করানোর জন্য আমাকে অনেক অনুশীলন করতে হয়।’ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে বসে এক দমে বলে যান মনিকা। তাঁর কাঁধে বাংলাদেশ দলের মাঝ মাঠের দায়িত্ব। সাধারণত তাঁর পা থেকেই শুরু হয় লাল-সবুজদের আক্রমণ। গোল করানোর কাজটাই বেশি করতে দেখা যায় তাঁকে। কিন্তু দুর্দান্ত সব গোল করতেও জুড়ি নেই।

এর আগে মিয়ানমারের বিপক্ষে কর্নার থেকেই সরাসরি গোল করেছিলেন খাগড়াছড়ির এই মেয়ে। দুর্দান্ত গোলগুলো সম্ভব হয়েছে বাড়তি কঠোর অনুশীলনেই, ‘আমার পজিশনে গোল করার চেয়ে গোল করানোর দায়িত্বই বেশি। তবে কখনো কখনো মনে হয় আমাকেও গোল করতে হবে। দলের প্র্যাকটিস শেষে আমি অনুশীলনে বাড়তি কর্নার ও ফ্রি কিক নিয়ে কাজ করি।'

আর সেই গোলটা যদি চলে যায় ফিফার দরবারে, তাহলে তো আনন্দের সীমা থাকার কথা নয়। বিশ্ব ফুটবলের শীর্ষ সংস্থার ওয়েবসাইটে সেরার তালিকায় নিজের গোল দেখে স্বাভাবিকভাবে রোমাঞ্চিত মনিকা, ‘ফিফার সেরার তালিকায় এই গোল আছে জানার পর অনেক ভালো লেগেছে। সতীর্থদের সবাই আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। আরও ভালো লাগছে কারণ টুর্নামেন্টে ওটাই ছিল আমার প্রথম গোল।’ অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়েই এমন গোল। বাকি ভবিষ্যৎ তো পড়েই আছে। কে জানে মনিকার বদৌলতে হয়তো ফিফার দরবারেই পৌঁছে যেতে পারে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।