অবিশ্বাস্য লিভারপুল

জোড়া গোলের পর উইনালডামকে নিয়ে সতীর্থদের উল্লাস। ছবি: এএফপি
জোড়া গোলের পর উইনালডামকে নিয়ে সতীর্থদের উল্লাস। ছবি: এএফপি
>চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে দ্বিতীয় লেগের খেলায় বার্সেলোনাকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে লিভারপুল। জোড়া গোল করেছেন ওরিগি ও উইনালডাম। এ জয়ে ৪-৩ গোলের অগ্রগামিতায় চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠল লিভারপুল।

লিভারপুল অসম্ভবকে সম্ভব করেছে, চ্যাম্পিয়নস লিগে লিখেছে রূপকথার গল্প...

ক্যাম্প ন্যুতে হারের পর লিভারপুলের দরকার ছিল অবিশ্বাস্য, অতি নাটকীয় কোনো ঘটনার। যাতে বার্সেলোনার চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফি ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। কিন্তু কে ঘটাবেন এমন কিছু! মোহামেদ সালাহর সেমির স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে চোট। দলে নেই ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার রবার্তো ফিরমিনো। নিজের সেরা ছাত্রদের ছাড়া বার্সেলোনার বিপক্ষে এমন পরিস্থিতেতে খেলতে নামার আগে ক্লপের কপালেও চিন্তার ভাঁজ। ম্যাচের আগে সোজাসুজি বললেন, ‘বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকারদের দুজনকে পাচ্ছি না। আর ৯০ মিনিটের মধ্যে ফাইনাল নিশ্চিত করতে হলে আমাদের ৪ গোল করতে হবে। পারলে সেটা হবে অসাধারণ ব্যাপার।’

কিন্তু পরিকল্পনার রাজা ক্লপ তলে তলে ঠিকই ছক এঁকে রেখেছেন, ঠিক করে রেখেছেন মেসিময় বার্সার আক্রমণ রুখে দিয়ে কী করে বার্সার জালে গোল উৎসব করা যায়! ইয়ুর্গেন ক্লপ তাঁর পরিকল্পনার কথা খোলাসা করেননি। আর নিজেদের স্বপ্নসারথিকে ছাড়াই ইংলিশ জায়ান্টরা যেন বেশি শক্তিশালী, আরও বেশি ভয়ানক।

আজকের ম্যাচে লিভারপুলের ফাইনালে খেলার ডুবতে থাকা স্বপ্ন অতল থেকে তুলে এনেছেন ওরিগি ও উইনালডাম। এই দুইয়ের জোড়া গোলেই স্প্যানিশ জায়ান্টদের ৪-০ গোলে উড়িয়ে ফাইনালে উঠেছে অলরেডরা।

ওরিগির শট কোনোভাবেই ঠেকাতে পারলেন না টের স্টেগান। ছবি: এএফপি
ওরিগির শট কোনোভাবেই ঠেকাতে পারলেন না টের স্টেগান। ছবি: এএফপি

লিভারপুলের লম্বা পাস আর গতির কাছে শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে বার্সেলোনা। ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই স্প্যানিশদের কলিজা ধরে টান মারেন দিভোক ওরিগি। ডি বক্সের মধ্যে জর্ডান হেন্ডারসনের নেওয়া শট কোনোমতে ফেরান বার্সেলোনার গোলপোস্টের নিচে আস্থার প্রতীক টের স্টেগান। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি। ফাঁকায় বল পেয়ে জালে জড়াতে ভুল করেননি ওরিগি। বার্সেলোনা সমর্থকদের কলিজায় টান মারা এই বেলজিয়ানই শেষ পর্যন্ত তাদের কাঁদিয়ে ছাড়েন। ৭৯ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় আর দলের চার নম্বর গোলটি করেন লিভারপুলের এই বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড। শেষ গোলটিতে অবশ্য আলেক্সান্ডার আর্নলডের বুদ্ধিমত্তার কাছে ধোকা খেয়ে যায় ভালভার্দের সাজানো রক্ষণ। লিভারপুলের হয়ে কর্নার কিক নিতে গিয়ে আচমকাই বলে শট নেন আর্নলড। বার্সার রক্ষণ তখনো প্রস্তুত নয়, সামান্য এগিয়ে টের স্টেগানও। আর্নলডের নেওয়া শটে বল ততক্ষণে ওরিগির পায়ে। বলের গায়ে ঠিকানা লিখে দিতে এবারও ভুল করেননি ওরিগি।

এমন জয়ে ওরিগির উদ্‌যাপনটা তো এমনই হবে। ছবি: এএফপি
এমন জয়ে ওরিগির উদ্‌যাপনটা তো এমনই হবে। ছবি: এএফপি

প্রথমার্ধে ওরিগির গোলের পর লিভারপুলের একের পর এক আক্রমণের কোনোটিই কাজে লাগাতে পারছিল না ওরিগি-মানে-শাকিরিরা। এরপর আবার মাঝমাঠ থেকে বারবার বল হারাচ্ছেন হেন্ডারসন-মিলনাররা। ক্লপ তখন ছকের ঘুটি এদিক-সেদিক করেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই রবার্টসনকে তুলে জর্জিনিও উইনালডামকে নামান ক্লপ। ক্লপের চাল কাজে লেগে যায়। মাঠে নামার আট মিনিটের মাথাতেই গুরুর আস্থার প্রতিদান দেন উইনালডাম। ৫৪ মিনিটে আর্নলডের সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে জালে জড়ান উইনালডাম। মিনিট দুয়েক পর বার্সার কফিনে আরেকটি পেরেক ঠোকেন উইনালডাম। এবার শাকিরির নেওয়া শটে মাথা ছোঁয়ান লিভারপুলের এই ডাচ্‌ মিডফিল্ডার।

এই পরাজয়ে বার্সেলোনা নিশ্চিতভাবেই রোমার রূপকথার কথা মনে করবে। গেল মৌসুমে প্রথম লেগে ৪-১ গোলে এগিয়ে থেকেও চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল কাতালানদের।