সেই মোস্তাফিজ এই মোস্তাফিজে পার্থক্য যেখানে

কাল ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ম্যাচসেরা হয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান ছবি: এএফপি
কাল ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ম্যাচসেরা হয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান ছবি: এএফপি
>মোস্তাফিজুর রহমান একটু খারাপ করলেই কথা ওঠে। কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচসেরা হয়ে নিজেই ব্যাখ্যা করলেন, শুরুর মোস্তাফিজ আর এই মোস্তাফিজের পার্থক্য কোথায়

কথাটা যে কতবার শুনতে হয়েছে মোস্তাফিজুর রহমানকে, গুনে শেষ করা যাবে না! কাল ডাবলিনে আরেকবার শুনলেন।

আবির্ভাবেই দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটার যেটি করতে পারেননি, মোস্তাফিজ সেটিই করেছিলেন—মাঠে নেমেই পরিণত হয়েছিলেন ম্যাচ উইনার হিসেবে। একের পর এক উইকেট তুলে নিয়ে ক্রিকেট দুনিয়ায় পরিণত হয়েছিলেন মূর্তিমান আতঙ্কে। কিন্তু এখনকার মোস্তাফিজ কেন যেন সাদামাটা। খুব যে খারাপ করছেন তা নয়, কিন্তু শুরুতে এত ভালো করেছিলেন যে এখন একটু খারাপ করলেই ‘মোস্তাফিজের আগের ধার নেই’ বলে রব ওঠে।

আয়ারল্যান্ডেও সে আলোচনা উঠেছিল। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮৪ রানে ২ উইকেট পেয়েছিলেন। তার আগে গত নিউজিল্যান্ড সফরের শেষ ওয়ানডেতে ১০ ওভারে দিয়েছিলেন ৯৩ রান। আগের সেই ধার নেই, দুর্দান্ত মোস্তাফিজকে দেখা যাচ্ছে না কেন, অনেক আলোচনাই হলো গত কিছুদিনে। আপাতত সে আলোচনা বন্ধ করে দিয়েছেন বাঁহাতি পেসার নিজেই। কাল ৪৩ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন, হয়েছেন ম্যাচসেরা। নিজেকে ফিরে পেয়ে মোস্তাফিজ পুরোনো প্রবাদতুল্য কথাটাই মনে করিয়ে দিলেন, ‘ক্রিকেটে ভালো-খারাপ যাবেই। এটা খেলার অংশ।’

প্রতি ম্যাচেই একজন ক্রিকেটার ভালো করবে না। কিন্তু নামটা যখন মোস্তাফিজ, একটু ছন্দপতন হলেই শুরু হয়ে যাবে আলোচনা। হবে না কেন; ক্যারিয়ারের শুরুতে যে দলের হয়ে, যে সিরিজে, যে টুর্নামেন্টে, যে মাঠে খেলেছেন, বল হাতে মুগ্ধ করেছেন। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে চমকে দিয়েছেন। শুরুর সেই পারফরম্যান্স এখনো নিয়মিত দেখা যাবে, এটা আশা করা ঠিক না। কেন ঠিক না, সেটিই কাল ম্যাচশেষে সবিস্তারে বললেন মোস্তাফিজ, ‘কেউ যখন নতুন খেলা শুরু করে, তার ব্যাপারে খুব বেশি জানা থাকে না। আমারও ক্ষেত্রেও ছিল না। এখন আমার সম্পর্কে সবাই জানে। আমি কী বোলিং করি, সবাই জানে। আগে আমার বলে বেশির ভাগ সময়ে ব্যাটসম্যান ক্যাচ তুলে দিত। এখনো দেয়। তবে সেটা মারতে গেলে। আগে না মারতে গেলেও ক্যাচ তুলে দিত। ক্যারিয়ারের শুরুতে আমি দেশেই বেশি খেলেছি, সেটা মাথায় রাখতে হবে। সবাই আমার চোটের কথা বলে। বড় চোট থেকে ফেরার পর (২০১৬ সালের ডিসেম্বরে) বেশির ভাগ ম্যাচই খেলেছি দেশের বাইরে। দেশের উইকেটে খেললে আগের মোস্তাফিজকেই হয়তো দেখতে পাবেন। দেশের বাইরে উইকেট পেতে অনেক কষ্ট করতে হয়।’

মোস্তাফিজের শক্তির জায়গাটা হচ্ছে তাঁর স্লোয়ার, কাটার। উপমহাদেশের নিচু ও মন্থর উইকেটে যেটি বেশি কার্যকর। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৬৭ শতাংশ উইকেট তাই মোস্তাফিজ পেয়েছেন এশিয়ায়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কাঁধের চোট থেকে ফেরার পর যে ১১টা সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ, এর মাত্র তিনটি দেশের মাঠে। বাকি ৮টি খেলতে হয়েছে নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডের মতো কঠিন কন্ডিশনে। কাঁধের চোটে পড়ার আগে মোস্তাফিজের গড় ১২.৩৪, ইকোনমি ৪.২৬। চোট থেকে ফেরার পর সেটি ২৫.৯২, ইকোনমি ৪.৯৫। মাশরাফি এটিকে স্বাভাবিকভাবেই দেখেন। অধিনায়ক প্রায়ই বলেন, ‘এখন যে মোস্তাফিজকে দেখছেন, এটাই বাস্তবতা। ২০১৫ সালে যে মোস্তাফিজকে দেখেছেন সেটি অস্বাভাবিক। অস্বাভাবিক ঘটনা প্রতিদিন ঘটবে না।’

২০১৭ সালে আয়ারল্যান্ড সফরটা মোস্তাফিজের দারুণ কেটেছিল। সিরিজে একবার ম্যান অব দ্য ম্যাচও হয়েছিলেন। এবারও নিজেকে ফিরে পেলেন। মোস্তাফিজ বলছেন, বিশ্বকাপের আগে এটি তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজে দেবে, ‘ভালো বোলিং করলে আত্মবিশ্বাস সব সময়ই ভালো থাকে। এটা আমার জন্য ভালো হয়েছে। প্রথম ম্যাচটা খারাপ গেছে, এটা ভালো গেছে। সামনে অনেক ম্যাচ আছে। বিশ্বকাপের ম্যাচ আছে। চেষ্টা করব ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে।’