মেয়েদের খেলতে না দেওয়ার কথা বলে বিপদে আফ্রিদি

আত্মজীবনী বের করে বিতর্কে জন্ম দিয়েই চলেছেন আফ্রিদি। ফাইল ছবি
আত্মজীবনী বের করে বিতর্কে জন্ম দিয়েই চলেছেন আফ্রিদি। ফাইল ছবি

তারকাদের আত্মজীবনী মানেই যেন বিতর্কের আখড়া। একেকজন তারকা বই বের করবেন আর তাতে প্রকাশিত নানা খবরে চমকে উঠবে সবাই, এমনটাই চলছে। বিক্রিবাট্টা বাড়ানোর ভালো উপায় এটা। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি সেদিক থেকে সফল।

জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন প্রায় তিন বছর হচ্ছে। এর আগে বেশ কয়েকবার প্রত্যাবর্তন হলেও আফ্রিদির পক্ষে এখন আর পাকিস্তান দলে ফেরার সম্ভাবনা নেই। অবসর নিশ্চিত জেনেই হয়তো আত্মজীবনী ‘গেম চেঞ্জারে’ নিজের বয়স জানিয়ে দিয়েছেন। সে বইয়েও বয়স নিয়ে মানুষকে দ্বিধায় ফেলে দিয়েছেন আফ্রিদি। এত দিন আফ্রিদির জন্মসাল ১৯৮০ জানা গেলেও বইয়ে ১৯৭৫ লেখা হয়ে গেছে। আবার দুই দিন পরই আফ্রিদি জানিয়েছেন তাঁর জন্ম ১৯৭৭ সালে!

আফ্রিদির বয়স নিয়ে অনেক আগ্রহ থাকলেও মূল আলোচনা কিন্তু সেটা নিয়ে নয়। গৌতম গম্ভীর, জাভেদ মিঁয়াদাদ কিংবা ওয়াকার ইউনিসকে নিয়ে করা বিতর্কও অতটা আলোচিত হয়নি। মূল আলোচনার জন্ম দিয়েছেন নিজের মেয়েদের নিয়ে মন্তব্য করে। এমনই সে মন্তব্য যে আফ্রিদিকে নারীবিদ্বেষী বলছেন সবাই।

গত সপ্তাহে পাকিস্তান ও ভারতে প্রকাশিত হয়েছে ‘গেম চেঞ্জার’। সে বইয়ে আফ্রিদি তাঁর চার কন্যা সন্তান নিয়ে বলেছেন, ‘আমি চাইব না তারা আমার মতো ক্রিকেট খেলাকে পেশা হিসেবে নেক। শুধু ক্রিকেট নয়, যেসব খেলা ঘরের বাইরে গিয়ে খেলতে হয় (আউটডোর গেমস), আমি চাই না আমার মেয়েরা সেসব খেলা খেলুক। হ্যাঁ, ঘরের ভেতরে (ইনডোর গেমস) যেকোনো খেলায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে তারা গড়তে পারে। কিন্তু ঘরের বাইরের কোনো খেলায় আমার মত নেই। ওদের মায়ের সঙ্গেও আমি এ নিয়ে কথা বলেছি। সেও আমার সঙ্গে একমত। সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসনের কথা বিবেচনায় রেখেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নারীবাদীরা আমাকে যা খুশি বলতে পারেন, আমার তাতে কিচ্ছু যায়–আসে না। তবে আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি।’


আফ্রিদির এমন অকপট স্বীকারোক্তি ভালো লাগেনি অনেকের। বিখ্যাত ক্রীড়া লেখক জ্যারড কিম্বার নিজের স্বভাবজাত ভঙ্গিতে ব্যঙ্গ করে টুইট করেছিলেন গত সপ্তাহেই। এবার মুখ খুলেছেন পাকিস্তানি লেখিকা বিনা শাহ। বিবিসিকে বলেছেন আফ্রিদির এমন সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের সমাজেরই উদাহরণ। এ দিয়ে প্রমাণ হয়, ‘পাকিস্তানের পুরুষালি সংস্কৃতির উদাহরণ যেখানে বলা হচ্ছে আমি বাবা, আমি যা বলব আমার মেয়েরা সেটাই করবে; যেটা মানা করব, করবে না। এবং তুমি কোনো কিছু করেই আমাকে আটকাতে পারবে না।’

সালমান সিদ্দিক নামে একজন টুইট করে বলেছেন, ‘আফ্রিদি ও একজন মধ্যবয়স্ক পাকিস্তানি লোকের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। যারা অন্যের মেয়ের সঙ্গে আড্ডা দিতে আপত্তি করে না কিন্তু নিজের মেয়ে অমন করলেই খেপে ওঠে।’ আশা বেদার নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘তাঁর মেয়ে, তাঁর সিদ্ধান্ত? সত্যি? তার মানে মেয়েদের বক্তব্য ও সিদ্ধান্তের কোনো মূল্য নেই? তারা যখন বড় হবে তখনো? কারণ তাদের বাবা তো বলেই দিয়েছেন!’

এর মাঝেই লিভারপুলের শেষ লিগ ম্যাচের এক ঘটনা আফ্রিদির সমালোচনা বাড়িয়ে দিয়েছে। নিবিষ্ট মুসলিম মোহাম্মদ সালাহর ছোট মেয়ে সেদিন ম্যাচ শেষে অ্যানফিল্ডে গোল করেছে। এর আগেও সালাহর কন্যা অ্যানফিল্ডের দর্শকদের এভাবে আনন্দ দিয়েছে। সালাহর মতো মুসলিম ফুটবলার যেখানে মেয়ের এমন কীর্তিতে গর্বিত, সেখানে আফ্রিদির এমন আচরণ পাকিস্তানের অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না।