আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ আজ

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নিয়ম রক্ষার ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। ছবি: এএফপি
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নিয়ম রক্ষার ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। ছবি: এএফপি
>

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুবার হারিয়ে এর মধ্যেই ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠে গেছে বাংলাদেশ। ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য তাই অনেকটা নিয়ম রক্ষার। মূল একাদশের বেশ কিছু খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দিয়ে দল সাজাতে পারেন কোচ স্টিভ রোডস।

ইনজুরিতে আক্রান্ত স্টিভ রোডস! কাল টিম হোটেলের লবিতে দেখা মিলল কোচের। কফিতে হালকা চুমুক দিয়ে দাম শোধ করতে গেছেন। একটু খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। অনুশীলনে তাঁরও দৌড়ঝাঁপ তো কম নয়। পেশিতে হালকা টান পড়েছে। বাংলাদেশি সাংবাদিক দেখে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে ভুললেন না। ছোটখাটো কিছু চোট–সমস্যা দলেও আছে। রোডসের জন্য সুযোগ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার ম্যাচে আজ দলের মূল ভরসাগুলোকে বিশ্রাম দেওয়ার। ১৯ জনের লম্বা বহর নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। মূল একাদশের অনেককেই তাই এই ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়ার সুযোগ।

একটু পরে গলফ খেলতে যাবেন। আজকের একাদশ নিয়ে তখনো চূড়ান্ত কিছু ভাবেননি রোডস। বাংলাদেশ দল আছে ক্যাসেলনকে। গলফ মাঠের জন্যই এই জায়গার সুখ্যাতি। গলফের রাজ্যে এসে ক্লাব দিয়ে দুঘা না দিলে হয়! কফি হয়েছে, এবার ‘টি’ হয়ে যাক। গলফ ক্লাব নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন হোটেল লাগোয়া গলফ কোর্সে। বাংলাদেশ দল তখন অনুশীলনের জন্য ক্লনটার্ফে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আজ সে মাঠেই খেলা। তবে টিম বাসে সবাইকে উঠতে দেখা গেল না। এর থেকে ধারণা আরও পোক্ত হলো, আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ মূল একাদশ খেলাচ্ছে না।

ঐচ্ছিক অনুশীলন হলেও তাসকিন আহমেদ, আবু জায়েদ, মোসাদ্দেকদের মধ্যে ভীষণ তাড়া দেখা গেল। সাব্বির রহমানও বাদ গেলেন না। আয়ারল্যান্ডে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত ম্যাচে উইকেটে দাঁড়িয়ে কেবল কিছুটা রোদ মাখতে পেরেছেন গায়ে। ৭ মিনিট উইকেটে থাকলেও থাকতে হয়েছে ননস্ট্রাইকিং প্রান্তে। সাব্বির অবশ্য বলে গেলেন, ‘আমি ব্যাটিং পাচ্ছি না, এটা তো ইতিবাচক দিক। দল ভালোভাবে জিততে পারছে। অবশ্যই সব সময় চেষ্টা করি সুযোগ পেলে নিজেকে উজাড় করে দিতে।’

পরশু ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ম্যাচের মতো ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারানো না গেলেও একটা সুবিধাজনক দিক পাওয়া যাচ্ছে। মিডল অর্ডারটা এই প্রথম ভালোমতো ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছে। প্রথম ম্যাচে মুশফিকুর রহিম মাত্র ২৫ বল খেলতে পেরেছেন। পরশু উইকেটে থাকলেন ১১৫ মিনিট, প্রায় দুই ঘণ্টা। অপরাজিত ৩০ রানের ইনিংসে মাহমুদউল্লাহও প্রায় এক ঘণ্টার মতো উইকেটে ছিলেন। বৃষ্টির উৎপাতে শুরুর দিকে দলের পরিকল্পনায় এতটা ব্যাঘাত ঘটেছে যে ম্যাচ পরিস্থিতিতে প্রতিটা মিনিটই এখন মহামূল্যবান। চার দিন ধরে অবশ্য ডাবলিনের আবহাওয়া ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত।

তবে সাব্বিরের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, রিজার্ভ বেঞ্চকে সুযোগ দেওয়া আর ফাইনালের আগে ছন্দ ধরে রাখা—এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজছে বাংলাদেশ। ফলে, একাদশে একেবারেই বিরাট অদল-বদল হওয়ার সুযোগ কম।

এ ম্যাচে বিশ্রাম পেতে পারেন মালাহাইডে ৪ উইকেট নেওয়া মোস্তাফিজুর রহমান। ফলে, তাসকিন আহমেদ সম্ভবত শেষ সুযোগ পাচ্ছেন দলে নিজের অপরিহার্যতা প্রমাণের। অভিষেকে ৫৬ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকলেও আবু জায়েদকেও আরেকটা সুযোগ দেওয়ার পক্ষে টিম ম্যানেজমেন্ট। দুজনই খেললে দুজনের মধ্যে থাকবে ভালো করার স্বাস্থ্যকর এক প্রতিযোগিতা। দুই ম্যাচেই দারুণ খেলা সৌম্য সরকারকে ছন্দ ধরে রাখার জন্য খেলানোটাই ভালো হবে কি না—এমন একটা আলোচনাও চলছিল। সৌম্য খেললে লিটন দাসের সুযোগ কম।

এমনিতে তামিম-মুশফিকদের মতো সিনিয়ররা ম্যাচে বিশ্রাম চান না। তামিম তো ঐচ্ছিক অনুশীলন হলেও দলের সঙ্গে চললেন ক্লনটার্ফে। আর মুশফিক সেই সকালেই সবার আগে উঠে ঢুকে গেছেন জিমে। ৩ উইকেট হলে অধিনায়ক হিসেবে ১০০ উইকেটের মাইলফলক ছোঁয়া ওয়াসিম-পোলক-ইমরান খানদের তালিকায় ঢুকে যাবেন মাশরাফি। দুই ম্যাচে ৩-৩ করে ৬ উইকেট নেওয়া মাশরাফির জন্য আজকের ম্যাচ হয়ে যেতে পারে তিন খ্যাতিমানের ক্লাবটিকে চার মূর্তি বানিয়ে ফেলার।

এ ম্যাচে সাকিবের জন্যও একটা দারুণ মাইলফলক অপেক্ষা করছে। ওয়ানডেতে ৫ হাজার রান আগেই পেরিয়েছেন। আর ১ উইকেট হলে ২৫০ হয়ে যায়। ৫ হাজার রান ও ২৫০-এর ডাবল ছুঁলে সাকিব রেকর্ডে পেছনে ফেলবেন সনাৎ জয়াসুরিয়া, শহীদ আফ্রিদি, জ্যাক ক্যালিসদের। আজ ক্লনটার্ফেই হয়ে যেতে পারে সেই কীর্তি। সাকিব দুই ম্যাচে ২ উইকেট নিলেও ২০ ওভারে দিয়েছেন মোটে ৬০ রান। শুধু তা-ই নয়, মেহেদি মিরাজের ভেতর থেকে সেরাটাও বের করে আনতে পারছেন। বাংলাদেশের দুই স্পিনার মিলে ৪০ ওভারে ১৩৯ রান দিয়েছেন। সাড়ে তিনেরও নিচে ইকোনমি রেটটা বিশ্বকাপে চার পেসারের বদলে দুই স্পিনার তিন পেসার আক্রমণ সাজাতে উৎসাহিত করবে মাশরাফিকে। পরশু ম্যাচ শেষে অধিনায়ক বলছিলেন, ‘মিরাজ এভাবে বল করে গেলে আমাদের জন্য বিশ্বকাপে আসলেই ভালো সুযোগ থাকবে।’

বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ আইরিশদের জন্যও ঝামেলার হবে। তবে ব্যাটিং নয়, তাদের হতাশ করেছে বোলিং। গত ম্যাচে ৩২৭ রান করে হেরে যাওয়ার হতাশা আছে। আয়ারল্যান্ড তাই বোলিং আক্রমণে পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে। ঘরের মাঠে ফাইনালে উঠতে না পারার হতাশা অন্তত একটি জয় দিয়ে হলেও ভুলতে চায় তারা।