সাকিবকে যে কারণে বেশি দরকার ফাইনালে

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পিঠে চোট পেয়েছিলেন সাকিব। ছবি: টুইটার
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পিঠে চোট পেয়েছিলেন সাকিব। ছবি: টুইটার
>ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। চোটের কারণে এই ম্যাচে খেলা নিয়ে সংশয় সাকিব আল হাসানের।

ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচ ঘিরে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মুখে মুখে প্রশ্নটি—ফাইনালে খেলবেন সাকিব? জবাব কেউ জানে না শুধু সাকিব নিজে ছাড়া। ফাইনালে খেলবেন কি খেলবেন না, তা নির্ভর করছে শুধুই সাকিবের সিদ্ধান্তের ওপর। কাল জানা গিয়েছিল, মাঠে (আজ) যাওয়ার পর পিঠের ব্যথা ভালো অনুভব করলে ‘সাকিব ঠিক করবে পারবে কি পারবে না।’

সাকিবকে না পাওয়া গেলে বিকল্প পথ নিশ্চয়ই ঠিক করে রেখেছে বাংলাদেশ দল। তবে ফাইনালে সাকিবের মতো খেলোয়াড় না থাকলে তা অনেক বড় ধাক্কা। অন্তত বাংলাদেশের আগের যেসব ফাইনালে সাকিব খেলেছেন, সেসব ম্যাচে তাঁর পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করলে ব্যাপারটা সেরকমই। আর এর আগে ছয়টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে বাংলাদেশের শিরোপাখরা বিবেচনায় আজকের ফাইনালে সাকিবের মাঠে নামার প্রত্যাশায় আছেন অনেকেই।

দ্বিপক্ষীয় সিরিজের বাইরে কোনো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ প্রথম ফাইনাল খেলেছে ২০০৯ সালে। দেশের মাটিতে সেটি ছিল ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট। ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। সে ম্যাচে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে ১৫২ রানে অলআউট হয়। ব্যাট হাতে সাকিবের অবদান ছিল মাত্র ৯। কিন্তু বোলিংয়ে মাশরাফির পর সাকিবই ছিলেন কৃপণতম (১০-২-২২-২)। সতীর্থরা সহ তাঁর এমন ঝাঁপিয়ে পড়াতেই স্বল্প সংগ্রহ নিয়েই ৪৯তম ওভার পর্যন্ত টেনে নিতে পেরেছিল বাংলাদেশ। জেগেছিল জয়ের আশাও। কিন্তু মুত্তিয়া মুরালিধরনের ব্যাটে হলো স্বপ্নভঙ্গ।

পরের ফাইনাল ২০১২ এশিয়া কাপে। অনেকের কাছেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এই ফাইনাল এক বেদনার অধ্যায়। পাকিস্তানের ২৩৬ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ হেরেছিল মাত্র ২ রানে। সেই ম্যাচেই বল হাতে মাত্র ৩৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। আর ব্যাট হাতে করেছিলেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৮। হারের পর সাকিবকে জড়িয়ে মুশফিকের কান্নার সেই দৃশ্য আজও অনেককে আবেগমথিত করে।

চার বছর এই এশিয়া কাপেই তৃতীয় ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। সেটি ছিল টি-টোয়েন্টি সংস্করণ। বৃষ্টি হানা দেওয়ায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে এসেছিল ১৫ ওভারে। আগে ব্যাট করা বাংলাদেশের ১২০ রান তোলার পেছনে ২১ রানের ভালো একটি ইনিংস ছিল সাকিবের। তবে বল হাতে ২ ওভারে দিয়েছিলেন ২৬ রান।

মাঝে এক বছর বিরতির পর গত বছর তিন-তিনটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। জানুয়ারিতে দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে মাত্র ৫ ওভার বল করতে পেরেছিলেন সাকিব। শ্রীলঙ্কার ইনিংসে ৪২তম ওভারে আঙুলে চোট পাওয়ায় পরে আর বল করতে পারেননি। নামতে পারেননি ব্যাটিংয়েও। শ্রীলঙ্কার ২২১ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ হেরেছিল ৭৯ রানে। এরপর মার্চে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ভারতের কাছে শেষ বলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টি সংস্করণের এই ফাইনালে ব্যাট হাতে তেমন ভালো করতে পারেননি সাকিব। বল হাতে ২৮ রানে নেন ১ উইকেট।

বাংলাদেশ সবশেষ ফাইনাল খেলেছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুবাইয়ে এশিয়া কাপে। এবারও ভারতের কাছে শেষ বলে স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। চোট নিয়েই এ টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন সাকিব। কিন্তু ফাইনালে খেলতে পারেননি এই চোটের জন্যই। আজ বাংলাদেশের সামনে আরেকটি ফাইনাল, আরেকবার শিরোপাজয়ের হাতছানি। কিন্তু আবারও সাকিবের না খেলারই আশঙ্কা, কারণ সেই চোট। অধিনায়ক মাশরাফি অবশ্য বলে রেখেছেন, সাকিবকে ছাড়া জয়ের সামর্থ্য আছে দলের। কিন্তু সাকিব থাকলে দলের আত্মবিশ্বাস কোথায় থাকে তা তো সবারই জানা। সেই আত্মবিশ্বাসটুকুই তো ফাইনাল জিততে বেশি দরকার হয়।