মাশরাফির বিশ্বাস ছিল বাংলাদেশ পারবে

ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা হাতে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ছবি: এএফপি
ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা হাতে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ছবি: এএফপি
>

কান্না-হতাশার দিন শেষ। অবশেষে ফাইনাল জিতল বাংলাদেশ। কঠিন লক্ষ্য সামনে রেখেও অধিনায়ক মাশরাফি বিশ্বাস হারাননি।

এ যেন সেই মোসাদ্দেক হোসেন! ঘরোয়া ক্রিকেটে যাঁর ব্যাট বহুবার তাঁর দলকে দেখিয়েছে চাপমুক্তির পথ। কঠিন মুহূর্তে দেখিয়েছে জয়ের দিগন্ত। কাভার ড্রাইভে রেমন রেইফারকে বাউন্ডারি মেরে জয়সূচক রানটা করেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু জয়ের ক্যানভাসটা তার আগেই তৈরি করে রেখেছিলেন মোসাদ্দেক। যাতে বাংলাদেশ আঁকল প্রথম ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনাল জেতার রঙিন ছবি।

ইতিহাসে ঢুকে যাওয়া দিনে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমের সামনে আনন্দের বন্যা। সেই বন্যার ঢেউ যেন আছড়ে পড়ছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার গায়ে। মুশফিক, সাব্বির অভিনন্দন জানালেন অধিনায়ককে। রাজনীতিতে নাম লেখানো মাশরাফি খেলায় আর কত দিন থাকবেন কে জানে। তবে বিধাতা তাঁর প্রতি অন্যায় করেননি। লাল-সবুজ বাংলাদেশের প্রথম শিরোপাটা মাশরাফির হাতেই ওঠা উচিত ছিল। কাল মালাহাইডে সেটাই উঠলও।

ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ২৪ ওভারে ২১০ রান। কঠিন তো অবশ্যই। কিন্তু ম্যাচ জেতার পর অধিনায়ক মাশরাফি জানালেন কখনোই বিশ্বাস না হারানোর কথা, ‘উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো ছিল। তাই লক্ষ্যটা একটু বড় থাকলেও আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল, আমরা পারব।’ ত্রিদেশীয় সিরিজে শিরোপা জয় এখন সেই আত্মবিশ্বাসকেও বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ। আজ ইংল্যান্ডের বিমানে যা সঙ্গী হবে বাংলাদেশ দলের।

কাল ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালটা যখন বৃষ্টি-বাধায় আটকা পড়ল, ঠিক তখনই ক্রিকেটের ছোটখাটো একটা মিলনমেলা চলছিল ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে। ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বিসিবির ইফতার অনুষ্ঠান। মালাহাইডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ফাইনালের কথা মাথায় রেখে বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা ছিল সেখানে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে খেলা তো আর তখন হচ্ছিল না। বড় পর্দার দিকে যতবার দৃষ্টি গেছে, দেখা গেছে উইকেট কাভারে ঢাকা।

এর মধ্যেই স্বস্তির খবর। খেলা আর না হলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে বাংলাদেশ। তাতে যে গ্র্যান্ড বলরুমে খুব আনন্দের হিল্লোল বয়ে গেল, তা নয়। টুর্নামেন্টের প্রতিটি ম্যাচে এমন দুর্দান্ত সব জয়ের পর ফাইনালেও বাংলাদেশ কলার উঁচিয়ে ম্যাচ জিতবে, তবেই না মিলবে শিরোপা জয়ের আসল তৃপ্তি! তা-ও এমন এক শিরোপা, কোনো টুর্নামেন্টে যেটি আগে কখনোই জেতেনি বাংলাদেশ। এ রকম একটি উপলক্ষ আইনের ফাঁকফোকর গলে এলে মজাটাই যে আর থাকে না! সৌম্য-মুশফিক-মোসাদ্দেকরা শেষ পর্যন্ত সেই আনন্দের রাত উপহার দিলেন দেশকে।

আয়ারল্যান্ড থেকে শুধু শিরোপা নয়, আরও অনেক কিছু নিয়েই বিশ্বকাপে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। ইফতারের আগে বিসিবি সভাপতি যেমন বলছিলেন, ‘সবচেয়ে ভালো কথা, আমাদের শুধু দু-তিনজন ক্রিকেটারই নয়, আমরা একটা দল হিসেবে ভালো খেলছি। তামিম, সাকিব, মুশফিক ভালো খেলছে। সৌম্য, লিটনসহ নতুনেরাও ভালো পারফর্ম করছে।’ দুর্দান্ত সব জয়ে সিরিজের ফাইনালে উঠে আসা বাংলাদেশ দলের জন্য ‘বোনাস’ ক্রিকেটারদের এই ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স। বিশ্বকাপের আগে এটা খুবই দরকার ছিল।

এখন একমাত্র সমস্যা কিছু ছোটখাটো চোট। সাকিব আল হাসানের চোট খুব মারাত্মক না হলেও সতর্ক থাকতে কাল ফাইনালে খেলেননি। এ প্রসঙ্গে বিসিবি সভাপতি জানালেন তাঁদের সতর্ক অবস্থানের কথা, ‘সব জায়গার জন্যই আমরা খেলোয়াড় ঠিক করে রেখেছি। যেন কেউ চোটে পড়লে দ্রুত বিকল্প খেলোয়াড় পাঠাতে পারি। কালকেই (পরশু) এ রকম ৬-৭ জন খেলোয়াড়ের একটা রিজার্ভ দল আমরা করে রেখেছি।’

কেউ চোটে না পড়লে বিশ্বকাপের ১৫ সদস্যের দলে পরিবর্তন আসবে না, এ কথা আগেও বলেছেন বিসিবির কর্মকর্তারা। তবু মাঝে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল, কোচ স্টিভ রোডসের ইচ্ছায় শেষ পর্যন্ত দলে ঢুকে যেতে পারেন পেসার তাসকিন আহমেদ, বাদ পড়বেন আবু জায়েদ। তবে আগের ম্যাচে জায়েদের ৫ উইকেট পাওয়ার পর এ নিয়ে আর কোনো আলোচনারই সুযোগ নেই।

সব আলোচনা এখন ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল কেমন করবে, তা নিয়েই। প্রাথমিকভাবে সেমিফাইনালে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েই ইংল্যান্ডে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। নাজমুল হাসানের কথায়ও খেলে গেল আশার ঝিলিক, ‘বিশ্বকাপে হঠাৎ এক-দুটি ম্যাচ জিতেই আমরা অভ্যস্ত। ২০০-২৫০ রান করেই আমরা খুশি থাকতাম। কিন্তু এখন সেটা বদলেছে। এটা একটা ভালো দিক যে আমরা এখন প্রতিটি ম্যাচে লড়াই করছি। প্রতিপক্ষ যে-ই থাকুক, আমরা ম্যাচ জেতার জন্য যাচ্ছি।’

এক সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ খেলে তিনটিতেই জয়, ফাইনালে শিরোপার রঙে রঙিন উৎসব—এর চেয়ে ভালো বিশ্বকাপযাত্রা আর কী হতে পারত বাংলাদেশের জন্য!