বিশ্বকাপ না জেতা লারার বড় দুঃখ

বিশ্বকাপ না জেতাটাকে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অপ্রাপ্তি মনে করেন ব্রায়ান লারা। ফাইলছবি
বিশ্বকাপ না জেতাটাকে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অপ্রাপ্তি মনে করেন ব্রায়ান লারা। ফাইলছবি
>রেকর্ডে রাঙা ক্যারিয়ারে আফেসাস যদি কিছু থাকে সেটি সম্ভবত বিশ্বকাপ না জেতা। কিংবদন্তি এই ক্রিকেটারের না পাওয়ার চিনচিনে ব্যথাটা যেন পরিস্কার ফুটে উঠল সাক্ষাৎকারে...

প্রশ্ন: ব্রায়ান লারা হওয়ার সবচেয়ে বড় দুঃখ কী? কখনো বিশ্বকাপ না জেতা?
ব্রায়ান লারা: সত্যি বলতে কী, বিশ্বকাপ এলেই এই কষ্টটা ফিরে আসে। আমি এখন ৫০ পেরিয়ে গেছি, বিশ্বকাপ জেতা আর আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এটা স্বীকার না করে উপায় নেই, আমাদের সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বের সেরা দলও ছিল না। আমরা চেষ্টা করেছিলাম, নিজেদের সর্বোচ্চটা উজাড় করে দিয়েছিলাম। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছিলাম, কিন্তু বিশ্বকাপ জিততে পারিনি।

প্রশ্ন: অথচ ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালে ক্রিকেটের প্রথম দুটি বিশ্বকাপই জিতেছিল ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ...
লারা: সে সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিন্তু একেবারে চূড়ায় ছিল। এমনকি ১৯৮৩ বিশ্বকাপের ফাইনালেও গিয়েছিল। সেটাই কিন্তু বলে দেয়, সে সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ কত শক্তিশালী ছিল। সে সময়ে বিশ্বের সেরা বোলিং অ্যাটাক ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের, সলিড ব্যাটিং লাইনআপের সহযোগিতায় যারা ম্যাচের পর ম্যাচ জিতিয়েছে।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপ জিততে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ কোনটি?
লারা: ধারাবাহিকতা। একটি দলকে ম্যাচের পর ম্যাচ জিততে হবে, আত্মবিশ্বাস জোগাড় করে টুর্নামেন্টের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হয়। শুধু ব্যাটিং বা বোলিং দিয়ে ম্যাচ জেতা যায় না। ভারসাম্যপূর্ণ দল হতে হবে। এবার প্রায় ৫০ দিনের টুর্নামেন্ট। সুতরাং ধারাবাহিকতা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশ্বকাপ জয়ে লক্ষ্য স্থির করলে ছন্দ হারানো চলবে না মোটেও। আর সে কারণে শুরুতেই ধারাবাহিকতার কথাটা বললাম।

প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয়, এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ চ্যাম্পিয়ন হতে পারে?
লারা: আমি তো সেটাই আশা করি। কেন হতে পারে না? বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবার অসাধারণ সব ক্রিকেটারদের নিয়ে যাচ্ছে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সবাই খুব ভালো করেছে। সেটাকেই এখন ৫০ ওভারের খেলায় নিয়ে আসতে হবে। আমাদের ক্রিকেটাররা সবাই দারুণ ফর্মে আছে। ঠান্ডা মাথায় সবাইকে ধারাবাহিকতা ধরে রাখায় মনোযোগ দিতে হবে। আগে সেমিফাইনাল নিশ্চিতের লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। সেখানে পৌঁছানোর পর আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।

প্রশ্ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে আর কোনো বাধা?
লারা: মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। একে অন্যের সঙ্গে বোঝাপড়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দল হয়ে লম্বা সময় ওরা খেলেনি। আমার পরামর্শ থাকবে, ইংল্যান্ডে নামার পর থেকেই আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ভালো খেলতে শুরু করতে হবে।

প্রশ্ন: ভারতকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
লারা: ভারত চ্যাম্পিয়ন হলে কেউ অবাক হবে না। ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে তারা ভালো খেলে চলেছে। খুবই ভারসাম্যপূর্ণ দল। তারা ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ না জিতলেই বরং সেটা চমক হবে। ভারতের শক্তিমত্তা নিয়ে কোনো সন্দেহই নেই।

প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে কী বলবেন?
লারা: ওয়ার্নার-স্মিথের ফেরা অস্ট্রেলিয়াকে আরও বেশি শক্তিশালী করেছে। আমাদের সময়ে বিশ্বকাপে স্পষ্ট দাপট দেখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তবে এই দলটা ১৯৯৯ বা ২০০৩-এর মতো শক্তিশালী নয়। কিন্তু এটাও ভুললে চলবে না, তারা কিন্তু বর্তমান চ্যাম্পিয়নও। তারা নিশ্চয়ই বিশ্বকাপটা ধরে রাখতে চাইবে, বিশ্বকাপ তাদের জন্য একটা বড় মঞ্চ।

প্রশ্ন: ইংল্যান্ড কি ফেবারিট হিসেবে বিশ্বকাপ শুরু করবে?
লারা: আমি ঠিক জানি না, ইংল্যান্ড ফেবারিট কি না। তবে এটা নিশ্চিত যে তারা শিরোপার অন্যতম দাবিদার। যেকোনো খেলায় আয়োজক দেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেষ্টা করে। খুব স্বাভাবিকভাবেই ইংল্যান্ডও নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বিশ্বকাপ জেতার জন্য। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে ১৯৭৫ সালে বিশ্বকাপ শুরু হলেও এখনো তারা বিশ্বকাপ জেতেনি। সে কারণে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার ইংল্যান্ড আরও বেশি চেষ্টা করবে। আর সত্যি বলতে এবার তাদের দলটাও খুব ভালো। আমি যদি বিশ্বকাপের কথা চিন্তা করি, ইংল্যান্ড ভালো করেছে শুধু শিরোপাই জিততে পারেনি। শেষ হার্ডলে এসে আটকে গেছে। এবার নিশ্চয়ই সীমানাটা পেরোনোর চেষ্টা করবে দলটি। দলটা দেখলে সমালোচকেরাও বলবে-সব বিভাগেই অসাধারণ ক্রিকেটার আছে তাদের। সাম্প্রতিক সময়ে তারা সত্যিই নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে।