বিশ্বকাপে যে বিষয়টা ভাবাবে বাংলাদেশকে

বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিতে আত্মবিশ্বাস কুড়িয়েছে বাংলাদেশ দল। ছবি: টুইটার
বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিতে আত্মবিশ্বাস কুড়িয়েছে বাংলাদেশ দল। ছবি: টুইটার

দেখতে দেখতে চলে এল আরেকটি বিশ্বকাপ। গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠায় এবার বাংলাদেশকে নিয়ে প্রত্যাশা আরও বেশি। এদিকে বিশ্বকাপে কৌশল নিয়ে নানা মত দিচ্ছেন সাবেক থেকে বিশ্লেষকেরা। কেউ বলছেন, শুরুটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কারও কাছে আবার শেষ ১০ ওভারে ভালো ‘ফিনিশ’ করাই বড় কথা।

বিশ্বকাপে এক ইনিংসে দ্বিতীয় সেরা বোলিংয়ের নজির গড়া অ্যান্ডি বিকেলের কাছে আবার ইনিংসের মাঝপথটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। খেলায় হার-জিত মাঝের ওভারগুলোতেই নির্ধারিত হবে বলে মনে করেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান এ পেসার।

বিশ্বকাপে এবার ইংল্যান্ডে চিরাচরিত কন্ডিশন না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। সুইং বান্ধব কন্ডিশনের বদলে দেখা যাবে ব্যাটিং সহায়ক উইকেট—যেহেতু আইসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্টে ব্যাটসম্যানদের কথা ভেবে উইকেট বানিয়ে থাকে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। সঙ্গে যোগ করুন তুলনামূলক ছোট বাউন্ডারি সীমানা, ভীষণ ফাস্ট আউটফিল্ড ও এক ইনিংসে দুটি নতুন বল। ইনিংসের মাঝপথে মানে ২০ ওভারের পর থেকে প্রায় ৩৫ ওভার পর্যন্ত নতুন বলের জন্য প্রত্যাশিত সুইং পাবেন না পেসাররা। বল শক্ত থাকায় ইনিংসের এ সময়ে ‘বিগ হিটার’ উইকেটে থাকলে ম্যাচ ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। কারণ নতুন ও শক্ত বলে আর সেটি যদি হয় ‘পাটা’ উইকেট—আন্দ্রে রাসেলদের মতো খুনে মেজাজের ব্যাটসম্যানদের মারতে সুবিধা হয়।

বাংলাদেশের সমস্যাটা ঠিক এখানেই। বিশ্বকাপে এবার প্রতিটি দলেই গতিসম্পন্ন (ঘণ্টায় ন্যূনতম ১৪০ কিলোমিটারের ওপাশে) পেসার আছে, আছে উইকেট তুলে নেওয়ার মতো লেগ স্পিনার এবং ব্যাটিং অর্ডারের ছয় কিংবা সাতে আছেন বিগ হিটার। বাংলাদেশ এখানে বাকি দলগুলো থেকে কিছুটা আলাদা কিংবা বলা যায় পিছিয়ে। মাশরাফি বিন মুর্তজার দলে গতির ফুলকি ছোটানোর মতো পেসার নেই। লেগ স্পিনার শব্দটা তো বহু আগে থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। আর বিগ হিটার? এ কাজটা বহু দিন ধরেই চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে তিনে ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য রাখা মাহমুদউল্লাহকে দিয়ে। কিংবা মাঝে-মধ্যে সাব্বির অথবা অন্য কাউকে দিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। কিন্তু স্বীকৃত কোনো বিগ হিটার নেই।

আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বড় স্কোর গড়ার ক্ষেত্রে তায় বেশির ভাগ সময়ই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানের ওপর নির্ভর করতে হয়। এদের মধ্যে কোনো একজনকে খেলতে হয় ন্যূনতম ৪০ ওভার পর্যন্ত। সে ক্ষেত্রে ইনিংসের মাঝের সময়ের কৌশল নিয়ে বিকেলের মন্তব্য বাংলাদেশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ৬৭ ওয়ানডে খেলা এ পেসারের মতে, ‘আমার মতে তখন (ইনিংসের মাঝপথে) ম্যাচের হার-জিত নির্ধারিত হয়ে যাবে।’ বিকেল এ ক্ষেত্রে ভারতীয় বোলিংয়ের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘ইনিংসের মাঝে উইকেট পড়লে ভারতের বোলিং কিন্তু পেয়ে বসে। তারা রানের চাকা ভোঁতা করে দিয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে।’

ভারতে আছেন কুলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চাহালের মতো দুই কবজি ঘোরানো স্পিনার। অস্ট্রেলিয়া দলেও অ্যাডাম জাম্পার মতো লেগি আছেন। ইনিংসের মাঝে বল করে রানের চাকা আটকানোর সঙ্গে উইকেট ফেলতেও পারঙ্গম এসব বোলারের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে বলে মনে করেন বিকেল। এদিকে আগে ব্যাট করতে নেমে মাঝপথে বাংলাদেশ দলের মূল সমস্যাটা হয় উইকেট পড়লে। রানের চাকা প্রায় থেমে যাওয়ার সঙ্গে মড়ক লাগার হারও কম নয়। যদিও ত্রিদেশীয় সিরিজে এমন কিছু কমই দেখা গেছে।

২০১৯ বিশ্বকাপে তো সব ধরনের মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয়। টপ অর্ডারের শীর্ষ তিন-চার একদিন খারাপ করতেই পারে। তখন! এমনিতেই ব্যাটিংয়ে বা ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশের জন্য ভালো শুরু খুব গুরুত্বপূর্ণ। বেশির ভাগ সময়েই দেখা গেছে ভালো শুরু করলে দল জেতে কিন্তু ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয়ের নজির আছে খুব কমই। সে ক্ষেত্রেও ইনিংসের মাঝপথটুকু ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এমনিতেই শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের রান তোলার হার খুব বেশি নয়।

বোলিংয়ের ক্ষেত্রেও উঠে আসে ‘বিগ হিটার’ প্রসঙ্গ। দলে বিশ্বমানের বাঁহাতি স্পিনার আছে, আছেন বেশ কজন অফ স্পিনার। কিন্তু বোলিং বৈচিত্র্য এটুকুতেই আটকে আছে বাংলাদেশের।। ইনিংসের মাঝপথে উইকেট তুলে নেওয়ার জন্য গতিময় ফাস্ট বোলার ও লেগ স্পিনারদের ওপর ভরসা রাখতে বলছেন সব বিশ্লেষকেরা। ইংল্যান্ডে এবার যে উইকেটে খেলা হবে সেখানে বিগ হিটাররা বোলিং বৈচিত্র্য না থাকলে সারে তিন শ রানকেও মামুলি বানিয়ে ফেলবেন।

ইনিংসের মাঝপথের এ ধাঁধার উত্তর খুঁজে পাওয়াটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য।