'তিন ফুসফুস'-এর মালিক বলছেন, এশিয়ার কিংবদন্তি হবে সন

সনকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন জে এস পার্ক (ডানে)। ছবি: এএফপি
সনকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন জে এস পার্ক (ডানে)। ছবি: এএফপি
>

ইউরোপের বড় কোনো ক্লাবের হয়ে কোনো এশিয়ান তারকা চ্যাম্পিয়নস লিগ মাতাচ্ছেন, সর্বশেষ কবে দেখেছেন? ইউরোপ-সেরাদের মঞ্চে এশিয়ার পতাকা ওড়াতে এবার চলে এসেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার সন হিউং মিন। সনের পিঠে চড়ে ইউরোপের সেরা ক্লাব হওয়ার স্বপ্ন দেখছে টটেনহাম। আর সন ভবিষ্যতে এশিয়ার ইতিহাসে সেরা ফুটবলার হতে পারবেন বলে মনে করেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক দক্ষিণ কোরিয়ান মিডফিল্ডার পার্ক জি সুং

একটু এদিক-সেদিক হলেই সন হিউং মিনকে ফুটবলে দেখা যেত না। বুট তুলে রেখে বন্দুক কাঁধে থাকতে হতো মিলিটারি ট্রেনিংয়ে। ২০১৮ এশিয়াড ফুটবলে সোনা জিততে না পারলে দুই বছরের জন্য বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীর চাকরি করতে হবে, সনকে এমন শর্ত জুড়ে দিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। ফাইনালে জাপানকে হারিয়ে সেই শর্ত এড়ানোর সঙ্গে নিজের বিশ্ব মানের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নও বাঁচিয়ে রাখেন সন। দক্ষিণ কোরিয়ান এ ফরোয়ার্ড এখন ইউরোপ–সেরা হওয়ার লড়াইয়ে নামার অপেক্ষায়।

প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেছেন সনের দল টটেনহাম। ২ জুন শিরোপা লড়াইয়ে তাঁদের প্রতিপক্ষ লিভারপুল। সনের এ সাফল্যে ভীষণ উচ্ছ্বসিত তাঁরই দেশের সাবেক তারকা পার্ক জি সুং। কোরিয়ার সাবেক এ মিডফিল্ডারকে তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়ার কথা নয় ফুটবলপ্রেমীদের। কোন এশিয়ান ফুটবলার যে ইউরোপিয়ান মঞ্চে আলো কেড়ে নিতে পারেন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে তা প্রমাণ করেছিলেন পার্কই। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমান গতিতে চষে বেড়ান পুরো মাঠ, ফুসফুস তিনটে না থাকলে কি আর এটা সম্ভব! ইউনাইটেড সমর্থকেরা তাই আদর করে পার্ককে ডাকত ‘থ্রি-লাংস পার্ক’—মানে পার্কের ফুসফুস তিনটি!

সনের সুবাদে অনেক দিন পর আরেক কোরিয়ানকে ইউরোপের মঞ্চ মাতাতে দেখে পার্ক ভীষণ উচ্ছ্বসিত। সনকে এশিয়ান ফুটবলার ও সমর্থকদের আশার প্রদীপ বলে সম্বোধন করেছেন ইউনাইটেডের হয়ে ২০০৮ চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী সাবেক এ ফুটবলার।

এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের শুরুতেও টটেনহামকে নিয়ে বাজি ধরার কেউ ছিল না। কিন্তু সন ও বাকিদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ভর করে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জয় থেকে এক ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে ইংলিশ ক্লাবটি। দলের মধ্যমণি হ্যারি কেইনের ওপর ভর করে গ্রুপ পর্বের বাধা পার হয়েছিল টটেনহাম। কিন্তু নকআউট পর্বের আগেই চোটের জন্য ছিটকে পড়েন কেইন। এ সুযোগে পার্শ্বনায়কের জায়গা থেকে পাদপ্রদীপের নিচে চলে আসেন সন। চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে সনের আগুনে পুড়ে খাক হয় পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি। দুই লেগ মিলিয়ে তিন গোল করে বলতে গেলে একাই টটেনহামকে তুলেছেন সেমিতে।

সন চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী দলের সদস্য হতে পারবেন কি না, তা জানতে আর কিছুদিনের অপেক্ষা। তবে এই কোরিয়ান যে এশিয়ান ফুটবলের কিংবদন্তি হওয়ার পথে, তাতে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। পার্ক জি সুং-ই দেখছেন সেই আশা, ‘সে এই মুহূর্তে দারুণ খেলছে। প্রতি মৌসুমেই উন্নতি করছে। পরবর্তী মৌসুমের জন্য সমর্থকদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি সে এশিয়ান খেলোয়াড় ও সমর্থকদের আশা এবং খান থেকে আরও উঁচুতে যেতে পারবে।’

তবে নিজেকে বা সনকে এখনই এশিয়ার সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় বলতে চান না পার্ক। তাঁর মতে এশিয়ার সেরা খেলোয়াড়ের জায়গাটা চা বুম কুনের। ৭০-৮০ দশকে বুন্দেসলিগায় ফ্রাঙ্কফুর্ট আর লেভারকুসেনের জার্সিতে আলো ছড়িয়েছেন তিনি। লেভারকুসেনের জার্সিতে ১৮৫ ম্যাচে ৫২ গোল করার আগে ফ্রাঙ্কফুর্টের জার্সিতে ১২২ ম্যাচে করেছিলেন ৪৬ গোল। তাঁকেই এশিয়ান ফুটবলের ইতিহাসে সেরা ফুটবলার মানেন পার্ক, ‘দক্ষিণ কোরিয়ান সমর্থকেরা কোরিয়ার ইতিহাসের সেরা ফুটবলার হিসেবে চা বুম, আমাকে ও সনকে ভাবেন। এটা অযথাই তুলনা। আমি বা সন না, চা-ই সেরা। তবে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে সন ভবিষ্যতে টটেনহামের জার্সিতে কী করতে পারে তা দেখার জন্য। ব্যক্তিগতভাবে আমি আশা করি সন চা-কে ছাড়িয়ে যাবে। এর অর্থ হলো দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়ার সেরা ফুটবলার তৈরি করে।’