ব্যাটসম্যানদের পর ভারতকে ডোবালেন বোলাররাও

ভারতের বোলারদের মধ্যে শুধু বুমরাই যা একটু ত্রাসের সঞ্চার করেছেন। ছবি: এএফপি
ভারতের বোলারদের মধ্যে শুধু বুমরাই যা একটু ত্রাসের সঞ্চার করেছেন। ছবি: এএফপি
>

প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ভুবনেশ্বর-চাহালদের বিপক্ষে ব্যাটিং অনুশীলনটা ভালোই হলো উইলিয়ামসন-টেলরদের

যতই হোক প্রস্তুতি ম্যাচ আর অল্প পুঁজি—তা নিয়ে লড়াই করতে পারলেই না বোঝা যায় বোলারদের দৌড়। বিশ্বকাপে এমন ম্যাচে কেমন বোলাররা কেমন করবে, সে ব্যাপারে একটা ধারণাও মেলে। আজ প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও সন্তোষজনক ধারণা নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারলেন না বিরাট কোহলি

ব্যাটিংয়ে টপ অর্ডার ব্যর্থ। শেষের ব্যাটসম্যানদের লড়াইয়ে ১৭৯ তুলেছে ভারত। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই পুঁজি যত বেশি সম্ভব বড় করে তোলা যায় সেই লক্ষ্য ছিল ভারতের বোলারদের সামনে। তা আর হলো কোথায়! উল্টো বিশ্বকাপের জন্য ব্যাটিং প্রস্তুতিটা দুলকি চালেই সেরে নিলেন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। ৭৭ বল হাতে রেখে কেন উইলিয়ামসনের দল ম্যাচটা জিতেছে ৬ উইকেটে। জয়টা আরও বড় হতে পারত।

অর্থাৎ হেসেখেলে জয় বলতে যা বোঝায় আরকি। মোট সাত বোলার ব্যবহার করেছেন ভারতের অধিনায়ক কোহলি। ওভালের উইকেটে জসপ্রীত বুমরা ছাড়া আর কোনো বোলারই ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ত্রাস সঞ্চার করতে পারেননি। ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানীয় এ পেসারকে খুব বেশি ব্যবহার করেননি কোহলি। বুমরার সেরাটা বিশ্বকাপের জন্যই রেখে দিতে চান। কিন্তু আজ প্রস্তুতি ম্যাচেই বুমরা যা দেখালেন তাতে প্রতিপক্ষ দলের তারকা ব্যাটসম্যানদের ঘুম ছুটে যেতে পারে। বল করেছেন মাত্র ৪ ওভার, উইকেট পেয়েছেন ১টি কিন্তু মেডেন ও রান খরচের সংখ্যাও একই—২!

বাকি তিন পেসারকে দিয়েও ৪ ওভারের বেশি বল করাননি কোহলি। বিশ্বকাপের আগে পেসারদের অনাকাঙ্ক্ষিত চোটে পড়ার একটা শঙ্কা তো অধিনায়কের থাকেই। তা ছাড়া স্পিনারদের চেয়ে পেসাররা তুলনামূলক একটি বেশিই চোট প্রবণ। তবে ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ শামি ও হার্দিক পাণ্ডিয়াদের কেউ বোলিং বিশ্লেষণে বুমরার ধারেকাছেও নেই। শামি বাকি দুজন বিচারে তুলনামূলক ভালো করেছেন। উইকেট না পেলেও ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন গড়ে ৪ করে। ভুবি ও পাণ্ডিয়া গড়ে ৬-এর ওপরে। তবে পাণ্ডিয়া একটি উইকেট পেয়েছেন (৪-০-২৬-১)। পেসারদের মধ্যে ভুবি রান দিয়েছেন সবচেয়ে বেশি (৪-০-২৭-০)।

এবার ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের আগে ভারতের দুই কবজির স্পিনার নিয়ে আলোচনা হয়েছে সবচেয়ে বেশি—কুলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চাহাল। অনেকেই বলেছেন, বিশ্বকাপে কোহলির ‘তুরুপের তাস’ হয়ে উঠতে পারেন দুজন। কিন্তু আজ দুজনের পারফরম্যান্স ছিল সাদামাটা। তাঁদের সামলাতে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের তেমন একটা সমস্যা হয়নি। ৬ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ১ উইকেট পেয়েছেন চাহাল। কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে তুলে নেন এ লেগি। আউট হওয়ার আগে ৮৭ বলে ৬৭ রান করেন উইলিয়ামসন। নিজের স্বভাবসুলভ ব্যাটিংয়ের অনুশীলনই করেছেন এ তারকা।

সবচেয়ে বেশি ৮ ওভার বল করেছেন ‘চায়নাম্যান’ বাঁহাতি কুলদীপ। ৪৩ রান দিলেও কোনো উইকেট পাননি। তবে বাঁ হাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা ৭ ওভারে ২৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। জয় থেকে ১ রান দূরে থাকতে জাদেজাকে উইকেট দেন রস টেলর। ৭৫ বলে ৭১ রান করা টেলর তাঁর ইনিংসে চেনা ছান্দসিক ব্যাটিং-ই করেছেন। জাদেজাই এর আগে আটে নেমে ৫৪ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে আরও বড় লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন।

ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পর বোলারদেরও সাদামাটা পারফরম্যান্সের মাঝে ফায়দাটুকু নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরাই লুটে নিয়েছে। প্রথম চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে শুধু কলিন মানরো (৪) সেভাবে রান পাননি। দুটি ফিফটির ইনিংস ছাড়াও সবচেয়ে ভালো ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন হেনরি নিকোলস। ১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন ২৮ বল খেলে। বুঝতেই পারছেন, ইনিংসটি বেশ শম্বুকগতির হলেও সেটি ছিল আসলে নিজের ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার। নিকোলস ইচ্ছে করেই শেষে ধীরে ব্যাটিং করেছেন। একের পর এক বল ঠেকিয়ে ভারতের যন্ত্রণা বাড়িয়েছেন।

যেহেতু প্রস্তুতি ম্যাচে—এখান থেকে নিশ্চয়ই ভারতের ক্রিকেটারেরাও ভুলগুলো শুধরে নেবেন। ম্যাচ শেষে কোহলিও বললেন, এই ম্যাচে জয়-পরাজয় কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু ব্যাট হাতে এমন প্রদর্শনীর পর বোলারদেরও অসহায় আত্মসমর্পণ, প্রস্তুতিটা যে ভালো হলো না, সে কথাও স্বীকার করে নিতে হলো কোহলিকে।