'ডি ভিলিয়ার্সের এই বিশ্বকাপ খেলা উচিত ছিল'

ক্লুজনার বলছেন, এই বিশ্বকাপটা খেলে অবসরে যাওয়া উচিত ছিল ডি ভিলিয়ার্সের। ফাইল ছবি
ক্লুজনার বলছেন, এই বিশ্বকাপটা খেলে অবসরে যাওয়া উচিত ছিল ডি ভিলিয়ার্সের। ফাইল ছবি
>বিশ্বকাপে ডি ভিলিয়ার্সের অনুপস্থিতি, হাশিম আমলার অফ ফর্ম, দক্ষিণ আফ্রিকার পেস ইউনিট, দলে নির্ভরযোগ্য অলরাউন্ডের অনুপস্থিতি—সবকিছু নিয়েই কথা বলেছেন ১৯৯৯ বিশ্বকাপ মাতানো ল্যান্স ক্লুজনার।

গত বছর হুট করেই এক ভিডিওবার্তায় সব সংস্করণের ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। ঘোষণাটা বিস্মিত করেছিল বেশির ভাগ ক্রিকেটপ্রেমীকেই। একে তো দলের অন্যতম সেরা ও অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান, তার ওপর বয়সও এমন আহামরি কিছু ছিল না। এই বিশ্বকাপে ডি ভিলিয়ার্সকে কতটা দরকার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার, সেটি নিয়ে কথা বলেছেন অনেকেই। এবার ল্যান্স ক্লুজনারও বলছেন, ডি ভিলিয়ার্সের এই বিশ্বকাপটা খেলা উচিত ছিল।

১৯৯৯ বিশ্বকাপে ক্লুজনার ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা পারফরমার। টানা চার ম্যাচে ম্যাচসেরা হওয়া ক্লুজনার ওই বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গিয়েছিলেন সেমিফাইনাল পর্যন্ত। সেমিফাইনালও প্রায় জিতিয়েই দিয়েছিলেন, কিন্তু ব্যাখ্যাতীত পাগলামিতে আর ফাইনালে ওঠা হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। বিশ্বকাপে একজন ‘ইমপ্যাক্ট’ খেলোয়াড়ের প্রভাব কতটা, সেটি ভালোই বোঝেন ক্লুজনার। আর বোঝেন বলেই সাবেক এ অলরাউন্ডার মনে করেন, অন্তত এই বিশ্বকাপটা খেলে অবসরে যেতে পারতেন ৩৫ বছর বয়সী ডি ভিলিয়ার্স।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ ক্লুজনারের কাছে প্রশ্ন রেখেছিল, ডি ভিলিয়ার্সের এই বিশ্বকাপে খেলা উচিত ছিল কি না? ক্লুজনারের জবাব, ‘ওর (ডি ভিলিয়ার্স) খেলা উচিত ছিল। সে হয়তো এই সিদ্ধান্তের জন্য আফসোস করবে না, কিন্তু ওর উচিত ছিল অন্তত দ্বিতীয়বার ভেবে দেখা। বিশ্বকাপে খেলা একটা বিশেষ অনুভূতি। যেকোনো বিশ্বকাপই বিশেষ। আমাদের সামনে দুটো বিশ্বকাপ আছে (২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় টি-২০ বিশ্বকাপ)। মাঠের বাইরের বিষয় আমি জানি না। কিন্তু ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, ওর অবশ্যই খেলা উচিত ছিল। ও এখনো যথেষ্ট তরুণ, মাত্র তো ৩৫ বছর বয়স। খুব সহজেই এ বিশ্বকাপটা খেলতে পারত। ও থাকলে এই দক্ষিণ আফ্রিকা দলের চেহারাটাই পাল্টে যেত।’

কিছুদিন আগে ডি ভিলিয়ার্স নিজেও জানিয়েছিলেন, ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই অবসরে যেতে হয়েছে তাঁকে। ক্রিকেট বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘ব্রেকফাস্ট উইথ চ্যাম্পিয়নস’-এ এসে জানিয়েছিলেন অবসরের আসল কারণ, ‘আমি এই বিশ্বকাপে খেলতে মুখিয়ে ছিলাম। কিন্তু আমাকে অবসর নিতে হয়েছে। পরিস্থিতিটা ভীষণ স্পর্শকাতর ছিল। তিন বছর ধরেই বেছে বেছে খেলার জন্য সমালোচনা শুনতে হচ্ছিল আমাকে। নিজ দেশ থেকেই আমাকে সমালোচনা শুনতে হচ্ছিল। অবসর নেওয়ার পেছনে এটাও বড় একটা ভূমিকা রেখেছিল। ওই পরিস্থিতিতে আমার জন্য বিশ্বকাপ পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না। আপনি নিশ্চয়ই একটি পাউরুটির দুই পাশেই মাখন লাগাতে পারবেন না!’

ডি ভিলিয়ার্স বলেছেন, অবসরের সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে তিনি কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিলেন, ‘নিজেকে কোণঠাসা মনে হচ্ছিল আমার। আমি সব সময় দলের কথা ভেবে এসেছি, কখনোই নিজের জন্য ভাবিনি। কিন্তু আমি এমন এক পরিস্থিতিতে এসে ঠেকেছিলাম, যখন আমাকে সিদ্ধান্ত নিতেই হতো।’

ডি ভিলিয়ার্সের প্রসঙ্গ ছাড়াও ক্লুজনার কথা বলেছেন দলে হাশিম আমলার অন্তর্ভুক্তি নিয়েও। রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে এই ওপেনারের সাম্প্রতিক ফর্ম নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অনেক দক্ষিণ আফ্রিকান সমর্থক। তবে ক্লুজনার বলছেন, আমলার অভিজ্ঞতাই এই বিশ্বকাপে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে প্রোটিয়াদের জন্য, ‘ইংল্যান্ডে তাঁর দারুণ অভিজ্ঞতা আছে। সে প্রমাণ করেছে, ইংল্যান্ডে বড় রান করার সামর্থ্য তাঁর আছে। হয়তো ফর্ম কিছুটা খারাপ যাচ্ছে, কিন্তু তাও আমি ওকে প্রতিদিনই দলে পেতে চাইব। ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ জিততে হলে ওর মানের ব্যাটসম্যানের দরকার পড়বে। ওর মাপের ব্যাটসম্যানের জন্য বাজে ফর্ম কাটিয়ে উঠতে কেবল একটি ইনিংসই যথেষ্ট। আমার মতে, কিছুটা অফ ফর্মে থাকলেও ওয়ানডে দলে ওর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কোনো সুযোগ নেই। টি-২০ দল হলে তাও মানা যেত, কিন্তু ওয়ানডে দলে ওর জায়গা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।’

ক্লুজনারের চোখে এই বিশ্বকাপের দক্ষিণ আফ্রিকা দল কেমন হয়েছে? নিজে অলরাউন্ডার ছিলেন বলেই কি না, দলে মানসম্পন্ন অলরাউন্ডারের অভাব নিয়ে বেশ চিন্তিত ক্লুজনার, ‘দলে কয়েকজন অফ ফর্মের ব্যাটসম্যান আছে। তবে আমার মনে হয়, এই দলে নির্ভর করার মতো দুজন অলরাউন্ডারের অভাব আছে। স্কোয়াড দেখে আমার মনে হচ্ছে, ডেল স্টেইনকে ৮ এ ব্যাট করতে হতে পারে। আর এটাই আমাকে ভাবাচ্ছে। এ ছাড়া বাকি দলটা বেশ ভারসাম্যপূর্ণই মনে হচ্ছে আমার। বোলিং বিভাগ, বিশেষ করে পেস ইউনিটকে বেশ ভালোই দেখাচ্ছে। অবশ্য তাঁরা কতটা ফিট, সে ব্যাপারে আমি খুব বেশি কিছু জানি না।’