ক্রিকেট অপছন্দ হলেও যে কারণে বিশ্বকাপ মিস করা যাবে না!

ক্রিকেট দিন দিন ব্যাটসম্যানদের খেলা হয়ে উঠেছে। ছবি: এএফপি
ক্রিকেট দিন দিন ব্যাটসম্যানদের খেলা হয়ে উঠেছে। ছবি: এএফপি

বিশ্বকাপ শুরু হলো অবশেষে। অনেক কথা বার্তার পর আজ ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াল ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। আগামী দেড় মাস ব্রিটিশ মুলুকে বিশ্বকাপ উন্মাদনায় মেতে থাকবে গোটা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু যারা ক্রিকেট খেলায় তেমন একটা বিনোদন খুঁজে পান না, তাঁরা কী করবেন?

একদিনের ম্যাচের প্রায় ৮ ঘণ্টার ব্যাপ্তি যাদের কাছে খুব দীর্ঘ মনে হয়, তাদেরও এবার এবার টিভি পর্দায় চোখ রাখা উচিত। দেখা উচিত ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এবারের বিশ্বকাপ যেন বিনোদনের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছে। কে জিতবে এবারের বিশ্বকাপ? ওয়ানডে ক্রিকেট কি প্রথমবারের মতো পাঁচ শ রানের মাইলফলক ছোঁবে? এবারও কি দেখা যাবে ডাবল সেঞ্চুরি? দেখে নেওয়া যাক, কী কী কারণে এবার ক্রিকেট ভালো না বাসা লোকজনেরও বিশ্বকাপ দেখা উচিত।

রানের পসরা বিশ্বকাপে
একটা সময় ছিল যখন একটি ছক্কা দেখতেই দর্শকদের দুই ইনিংস বসে থাকা লাগত। ধ্রুপদি ব্যাটসম্যানদের ওভাবে শক্তি দেখানোতে ছিল প্রবল অনীহা। আর এখন ফরম্যাট যাই হোক ছক্কার ফুলঝুরি না ছোটালে তেমন একটা পরিচিতি পাওয়া যায় না। এবারের বিশ্বকাপকে যেমন অনেকেই ছক্কার বিশ্বকাপ বলছেন। মাঠে বা টিভি পর্দায় বুঁদ হয়ে থাকা সমর্থকদের আনন্দের উপলক্ষ তৈরি করতে ছক্কার জুড়ি নেই। ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটিংয়ের যুগে অদ্ভুত সব শট খেলে ব্যাটসম্যানরা রানের পাহাড় গড়ছেন। আর বিশ্বকাপের মতো উৎসবকে স্মরণীয় করে রাখতে ব্যাটসম্যানরা যে দর্শকদের বিনোদনের কোনো কমতি রাখবেন না তা হলফ করেই বলা যায়। আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোতে চিরাচরিত ব্যাটিংবান্ধব পিচের সুবিধা তো থাকছেই।

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ এখনো সবার আগ্রহের কেন্দ্রে। ফাইল ছবি
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ এখনো সবার আগ্রহের কেন্দ্রে। ফাইল ছবি

ভারত-পাকিস্তান মহারণ
টিভি ইতিহাসের সর্বকালের সবচেয়ে আলোচিত টিভি সিরিজ ‘গেম অফ থ্রোনস’। এইচবিওর এই সিরিজের শেষ পর্ব টেলিভিশনে সরাসরি দেখেছিলেন ১ কোটি ৯৩ লাখ মানুষ। আর শেষবার যখন ২০১৫ সালে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হয়েছিল বিশ্বকাপে সেই আগুনে লড়াই দেখতে টিভি সেটের সামনে হাজির ছিলেন প্রায় ৫০ কোটি দর্শক। আবেদনের দিক দিয়ে এই দুই প্রতিবেশীর লড়াইয়ের যে কোনো তুলনা নেই দুনিয়ায়! সাম্প্রতিক সময়ে টালমাটাল রাজনৈতিক সম্পর্কে তাদের বিশ্বকাপ ম্যাচটাও প্রায় পণ্ড হতে বসেছিল, ভারত ম্যাচটি খেলতে অনীহা জানিয়েছিল আইসিসির কাছে। তবে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে তাঁরা বলছে মাঠেই হবে খেল! আর তাই ১৬ জুনের ম্যাচটি দেখা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা ঠিক হবে না।

আফগানদের উত্থান ক্রিকেটকে বাড়তি রং দিয়েছে। ছবি: এএফপি
আফগানদের উত্থান ক্রিকেটকে বাড়তি রং দিয়েছে। ছবি: এএফপি

আফগান চমক
খেলার জগতে আবেগী গল্পের অভাব নেই। তবে পাকিস্তানের রিফিউজি ক্যাম্পে গড়ে ওঠা আফগান ক্রিকেটের গল্পটা অতুলনীয়। যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে পাকিস্তানের রিফিউজি ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া কিছু আফগানের হাত ধরে গড়ে ওঠা আফগানিস্তান ক্রিকেট দল দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বমঞ্চে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে বেশ ঘটা করেই। গত বিশ্বকাপের তুলনায় এবার বেশ পরিপক্ব তারা। দলে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনার রশিদ খান রয়েছেন, আছেন বেশ কয়েকজন বিগ হিটার ব্যাটসম্যান। আফগানরা তাদের সহজাত লড়াকু মানসিকতা দিয়ে বিশ্বকাপে খেলবে। বিশ্বকাপে তাঁরা কত দূর যাবে সে প্রশ্ন সময়ের কাছে তোলা থাক, তবে চলতি পথে কিছু চমক উপহার দিয়ে বিনোদন দেওয়ার কলা ভালোই রপ্ত আছে তাদের।

ক্রিকেট কি ‘ঘরে’ ফিরবে?
‘ফুটবল'স কামিং হোম’। ফুটবল ঘরে ফিরছে, এই লাইনটি ছিল ২০১৮ ফুটবল বিশ্বকাপের সময় ইংলিশ ফুটবল সমর্থকদের মুখের বুলি। যদিও ফুটবল ঘরে ফেরেনি, তার গন্তব্য হয়েছিল ফ্রান্সে। এবার ক্রিকেটের ঘরে ফেরার পালা। ফুটবলে তো তবু শিরোপা ঘরে এসেছিল একবার, ক্রিকেটে এখনো অধরা। ক্রিকেট, ফুটবলসহ আরও বেশ কিছু খেলার জন্ম যে দেশে, বড় মঞ্চে সে দেশের গৌরব হাতেগোনা। এবার যেহেতু নিজের আঙিনায় খেলা আর এক দিনের ক্রিকেটে ফর্মও তুঙ্গে, তাই বিশ্বকাপ ট্রফিটি উঁচিয়ে ধরবেন ইংলিশ অধিনায়ক মরগান, সমর্থকদের আশা এমনটাই।

তাই ক্রিকেট আপনার পছন্দ হোক না হোক, বিশ্বকাপের সময় টিভির পর্দায় চোখ রাখুন। উপভোগ করুন ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে বড় এই উৎসব। ১৪ জুলাই লর্ডসে ট্রফি নিয়ে উৎসব যে দল-ই করুক, টুকরো অনেক মুহূর্তের উন্মাদনা আপনার সময়টাকে উৎসবময় করে তুলবে।