'অনেকে ভাবছে এবার আমরা বিশ্বকাপ জিততে যাচ্ছি!'

কার্ডিফে বাংলাদেশ প্রবাসীদের কাছে যেটা শোনা গেছে, লন্ডনে এসেও একই কথা শোনা যাচ্ছে—‘এবার আমাদের দলটা অনেক ভারসাম্যপূর্ণ। সেমিফাইনাল অন্তত আশাই করা যায়।’ বাঙালি অধ্যুষিত ইস্ট লন্ডনের অনেক দোকানেই দেদার বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশ দলের জার্সি। শুধু যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি প্রবাসী কেন, মাশরাফিদের খেলা দেখতে দেশ থেকেও আসছে প্রচুর দর্শক।

২০১৯ বিশ্বকাপকে ঘিরে এই যে উন্মাদনা, বাংলাদেশ দলকে ঘিরে বিপুল প্রত্যাশা—মাশরাফিদের কতটা স্পর্শ করছে? বাংলাদেশ অধিনায়ক ভীষণ চেষ্টা করছেন একটা বলয় তৈরি করতে। যে বলয় ভেদ করে যেন উন্মাদনার উত্তাপ স্পর্শ না করে তাঁদের। মাশরাফির ভয়—এ প্রত্যাশা যেন চাপে পরিণত না হয়! কেউ আশা করছেন সেমিফাইনাল। কারও প্রত্যাশা আরও বেশি। আশার বেলুন ফুলিয়ে অনেকে বাংলাদেশকে ফাইনালেও দেখছেন। আড্ডায় এসব শুনে মাশরাফি শুধুই হাসেন, ‘বাকি দলগুলো কি ঘুরতে এসেছে!’

২০ বছর পর ইংল্যান্ডে আরেকটি বিশ্বকাপ-যাত্রা শুরুর আগে আজ আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি বারবার কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরলেন, ‘অনেকে ভাবছে আমরা এবার বিশ্বকাপ জিততে যাচ্ছি! সেমিফাইনালে উঠব। এসব একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। এ টুর্নামেন্টে আমরা কোনোভাবেই ফেবারিট নই। উইকেট, এমনকি কালকের ম্যাচও যদি বলবেন—দক্ষিণ আফ্রিকা আমাদের বিপক্ষে ফেবারিট হিসেবেই খেলবে। তবে এটাও বলছি আমরা আমাদের সেরাটাই খেলব। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি, অবশ্যই চাইব জিততে। যেন ভালো করি। কোনোভাবেই ভাবছি না যে ম্যাচটা হেরে যাবে। তবে অপ্রয়োজনীয়ভাবে উন্মাদনা তৈরি করা হচ্ছে। আমরা তো সব জায়গায় পিছিয়ে। বড় বড় ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা আমাদের পিছিয়েই রাখছে। কিন্তু আমরা যুদ্ধ করছি অন্য জায়গায়।’

ওয়ানডেতে অন্যতম অভিজ্ঞ দল হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে বাংলাদেশ। দলে এমন পাঁচজন ক্রিকেটার আছেন, যাঁরা এক সঙ্গে এক যুগের বেশি সময় এক সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। আছেন দুর্দান্ত কিছু তরুণ ক্রিকেটার। কদিন আগে প্রথমবারের মতো একটি ফাইনাল জেতার আত্মবিশ্বাস এখনো সজীব। বাংলাদেশ দলকে ঘিরে যে বিপুল উন্মাদনা আর প্রত্যাশা তৈরি হবে, সেটিই স্বাভাবিক।

বাংলাদেশ দল নিয়ে আশার বেলুন ফুলাতে মানা করছেন মাশরাফি। ছবি: বিসিবি
বাংলাদেশ দল নিয়ে আশার বেলুন ফুলাতে মানা করছেন মাশরাফি। ছবি: বিসিবি

মাশরাফি এ ভালো করে জানেন বলেই উন্মাদনার তাপ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখার উপায় বের করেছেন, ‘একটা টুর্নামেন্টের আগে এসব হবেই। আমাদের নিয়ে কেন এ প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে সেটাও ভাবতে হবে। আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলা খেলেই এ পর্যন্ত এসেছি। এটা আমাদের কাছে আরেকটা টুর্নামেন্ট। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেললে সেটা যেমন আন্তর্জাতিক ম্যাচ হিসেব করা হতো, কালও তাই হবে। এখন আমাদের যত স্বাভাবিক থাকা যায়। স্বাভাবিক থেকে যত ম্যাচ ধরে ধরে এগোব, ততই আমরা আমাদের সেরাটা দিতে পারব। বাইরের প্রত্যাশার কথা ভেবে খেললে এটা আমাদের জন্য আরও বেশি চাপ হবে।’

সতীর্থদের প্রতি মাশরাফির একটাই বার্তা—প্রত্যাশার চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে নিজেদের মূল কাজে শতভাগ মনোযোগী থাকতে হবে।