মেসিকে বাদ দিয়ে ব্যালন ডি'অর এক ডিফেন্ডারকে!

ছবির মতোই ব্যালন ডি অর জয়ের রেসে দৌড়াচ্ছেন মেসি ও ফন ডাইক। ছবি: এএফপি
ছবির মতোই ব্যালন ডি অর জয়ের রেসে দৌড়াচ্ছেন মেসি ও ফন ডাইক। ছবি: এএফপি
লিওনেল মেসি এবার ব্যক্তিগতভাবে ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মৌসুম কাটিয়েছেন। কিন্তু দলগতভাবে শুধু লিগ জেতার কারণে এবারের ব্যালন ডি’অর মেসি জিতবেন কি না, সেটা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। মেসিকে টপকে ব্যালন ডি’অর জিতে যেতে পারেন সদ্য চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী লিভারপুলের ডিফেন্ডার ভার্জিল ফন ডাইক।

ভার্জিল ফন ডাইককে বড় একটা ধন্যবাদ বার্তা পাঠাতেই পারেন ফ্যাবিও ক্যানাভারো। কারণ লিভারপুলের এই ডিফেন্ডারের কল্যাণেই অনেক দিন বাদে ইতালির সাবেক অধিনায়ক ক্যানাভারোর নামটি মুখে নিচ্ছেন ফুটবল বিশ্ব। তাও আবার ফিফা ব্যালন ডি অরের মতো বিশ্ব সেরা ফুটবলারের খেতাব জয়ের উপলক্ষে। সেই ২০০৬ সালে ডিফেন্ডার হিসেবে সর্বশেষ ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন ক্যানাভারো। সেবার ইতালির হয়ে বিশ্বকাপ জিতে বর্ষসেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন দলটির অধিনায়ক।

১৩ বছর পরে এসে লিভারপুল ডিফেন্ডার ফন ডাইক মনে করিয়ে দিচ্ছেন সেই ক্যানাভারোকে। কারণ ফিফা ব্যালন ডি অর পুরস্কার জয়ে ঘুরে ফিরে আসছে ২৭ বছর বয়সী নেদারল্যান্ডসের ডিফেন্ডারের ফন ডাইকের নাম। লিভারপুলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার পর এই আলোচনাটা আরও জোরেশোরে শুরু হয়েছে। এবার ব্যালন ডি অর জয়ে তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যালন ডি অরের পাক্কা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি। মুকুটটা শেষ পর্যন্ত কার মাথায় উঠবে, তা জানতে করতে হবে অপেক্ষা। তবে নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের কোচ কোম্যান তো বলেই দিয়েছেন, মেসিকে ভুলে গিয়ে ফন ডাইকের হাতে ব্যালন ডি অর শিরোপা তুলে দেওয়া উচিত।

মেসির মৌসুম কেমন কেটেছে এবার? দ্বিধান্বিত উত্তর পাওয়া যাবে। একক নৈপুণ্যের দিকে নজর দিলে মেসি নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সময় কাটিয়েছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত নৈপুণ্য দলগত সফলতায় রূপ নেয়নি। মেসির বার্সেলোনা লা লিগার শিরোপা জয় করলেও ভ্যালেন্সিয়ার কাছে কোপা দেল রের ফাইনালে হেরেছে। লিভারপুলের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল থেকেই।

অন্যদিকে স্বপ্নের মতো এক মৌসুম কাটিয়েছেন লিভারপুলের ডাচ সেন্টারব্যাক ভার্জিল ফন ডাইক। তাঁর কল্যাণেই লিভারপুলের রক্ষণভাগ এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গোটা মৌসুমে প্রতিপক্ষ ফরোয়ার্ডদের জন্য ফন ডাইক ছিল আতঙ্কের নাম। তাঁর চোখ ফাঁকি দিয়ে লিভারপুলের জালে বল পাঠানোই ছিল কষ্টকর। স্বীকৃতিস্বরূপ জিতেছেন পিএফএর বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। হয়েছেন প্রিমিয়ার লিগের বর্ষসেরা খেলোয়াড়। বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার অলিখিতভাবে আক্রমণভাগ বা মাঝমাঠের খেলোয়াড়দের জন্য বরাদ্দ থাকলেও ফন ডাইক দেখিয়ে দিয়েছেন, রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হয়েও সেরা খেলোয়াড়ের সম্মান পাওয়া সম্ভব।

ফন ডাইকের কল্যাণেই আবার রক্ষণভাগের খেলোয়াড়েরা আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের হারিয়ে ব্যালন ডি’অর জেতার সূচনা করবে, এমনটা আশা করছেন অনেকে। এরই মধ্যে তাঁর জাতীয় দলের কোচ কোম্যানকে পাশে পেয়েছেন তিনি। মেসিকে বাদ দিয়ে ফন ডাইকের হাতে ব্যালন ডি অর তুলে দিতে বলেছেন নেদারল্যান্ডস কোচ, ‘‘ব্যালন ডি’অর ফন ডাইকের প্রাপ্য। সাধারণত পুরস্কার যে গোল করে বা গোলের সৃষ্টি করে, তার হাতে যায়। তবে এবারই সুযোগ এসেছে কোনো ডিফেন্ডারকে এ সম্মান দেওয়ার।’ কোম্যান নিজেও ছিলেন একজন ডিফেন্ডার। ফুটবলের এই আনসাং হিরোদের কষ্টটা তিনিই তো ভালো বুঝবেন।

ফন ডাইকের হাতে ব্যালন ডি’অর তুলে দেওয়ার দাবি জানালেও মেসিকে সেরা খেলোয়াড় মানতে কোনো আপত্তি নেই কোম্যানের, ‘আমার মতে মেসি সেরা খেলোয়াড়। তবে আমি মনে করি আপনাকে দলের সঙ্গে বড় ট্রফিও জিততে হবে।’

যাকে নিয়ে এত গুঞ্জন, সে ফন ডাইকের নিজের ভোটটা কিন্তু যাচ্ছে মেসির বক্সেই, ‘‘আমার মতে মেসিই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। ওরই ব্যালন ডি’অর জেতা উচিত। তাই আমি ব্যালন ডি’অর জেতা-না জেতা নিয়ে চিন্তা করছি না। আমি যদি জিতি, সানন্দেই গ্রহণ করব। যদিও আমার মতে মেসিরই জেতা উচিত। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় মেসিই, তা সে ফাইনালে উঠতে পারুক আর না পারুক!’’