কোচ হয়ে ম্যারাডোনা ফিরতে চান ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে!

আর্জেন্টিনার কোচ থাকার সময়ে মেসির সঙ্গে ম্যারাডোনা। ফাইল ছবি।
আর্জেন্টিনার কোচ থাকার সময়ে মেসির সঙ্গে ম্যারাডোনা। ফাইল ছবি।
>ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ হতে আগ্রহ ডিয়েগো ম্যারাডোনার। তাঁর দাবি, ইউনাইটেডকে আবার শিরোপাজয়ী দল হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন।

কী একটা অবস্থা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের! যেন বিশালবপু কোনো হাতির গর্তে পড়ে যাওয়ার অবস্থা!
পয়েন্ট তালিকায় ছয়ে থেকে এবার প্রিমিয়ার লিগটা শেষ করেছে ইউনাইটেড। কিন্তু সেরা ছয়ের অন্য দলগুলোর সঙ্গে ইউনাইটেডের তুলনা করে দেখুন, যেন মেরু ব্যবধান। ম্যানচেস্টার সিটি তো লিগসহ ঘরোয়া তিন শিরোপাই জিতেছে, দুইয়ে থাকা লিভারপুল জিতেছে চ্যাম্পিয়নস লিগ। তিনে থাকা চেলসি জিতেছে ইউরোপা লিগ। চার-পাঁচে থাকা টটেনহাম ও আর্সেনাল শিরোপা জেতেনি, কিন্তু টটেনহাম চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে খেলেছে, আর্সেনাল ইউরোপা লিগের ফাইনাল। আর ইউনাইটেড? ছয়ে থাকাই যা সান্ত্বনা।

ডিসেম্বরে উলে গুনার সুলশারকে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ করে আনার পরের সাফল্য আর মার্চের শেষদিকে তাঁর নিয়োগটা স্থায়ী করার পরের ব্যর্থতাও ইউনাইটেডকে এখন হয়তো ভাবাচ্ছে, সুলশারকে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়াটা বেশি তড়িঘড়ি হয়ে গেল কি না! তা সুলশারও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলে? কে ইউনাইটেডকে আশা দেখাবে, কে দেবেন ভরসা?

খবরটা শুনে আনন্দিত হবেন না হতাশ—সে বিবেচনা ইউনাইটেড ভক্তদের, তবে ডিয়েগো ম্যারাডোনা কিন্তু ইউনাইটেড ডাগআউটে একটা সুযোগের দাবি জানিয়ে রেখেছেন। আর্জেন্টিনার ছিয়াশি বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তির বিশ্বাস, তিনিই পারবেন ইউনাইটেডকে আবার শিরোপামঞ্চে ফেরাতে!

ইউনাইটেড ভক্তদের আনন্দ-হতাশার প্রশ্ন আসছে কোচিংয়ে ম্যারাডোনার অতীত। খেলা ছাড়ার পর ১৯৯৪-৯৫-এর দিকে আর্জেন্টিনায় দুটি ক্লাবের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, ২৩ ম্যাচে জিতেছিলেন মাত্র তিনটিতে। শিরোপার প্রশ্ন আর না তোলাই ভালো। নাটকীয়তায় আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেম তো অনন্য, সেই সুবাদে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের কোচ হয়ে ২০০৮-এ আবার ডাগআউটে ফেরা ম্যারাডোনার। আহা, তখন কত আশা আর্জেন্টিনার! মাঠে মেসি, ডাগআউটে ম্যারাডোনা—কিছু একটা না হয়ে যায় না!

হলো বটে, তবে নিদারুণ স্বপ্নভঙ্গ। পরিসংখ্যান বলবে, আর্জেন্টিনার হয়ে ২৪ ম্যাচের ১৮টিই জিতেছেন, ছয়টি হেরেছেন (ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনার ড্র-য়ের ধার ধারত না!), তবে ২০১০ বিশ্বকাপের কোনোমতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে বাড়ি ফেরে আর্জেন্টিনা। ম্যারাডোনার কোচিংয়ের দৌড় কতটা, সেটির বিজ্ঞাপন হয়তো হয়ে আছে সেই ম্যাচ। এরপর আল ওয়াসল-ফুজাইরার মতো ক্লাবে ঘুরেফিরে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি এখন মেক্সিকোর দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব দোরাদোসে। একেবারে খারাপ করছেন না। প্রথম মৌসুমে এসেই অবনমনের শঙ্কায় থাকা দলটাকে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রথম বিভাগে উত্তরণের দোরগোড়ায়। এবার লিগে ১৪ ম্যাচ শেষে পয়েন্ট তালিকার পাঁচে। সব মিলিয়ে ৩৪ ম্যাচে ১৯ জয়, ৫ হার।

সেই ম্যারাডোনাই এখন আশায় আছেন ইউনাইটেডের কোচ হওয়ার। ফোরফোরটু সাময়িকীতে সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার জানিয়েছেন সে আশার কথা, ‘যদি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচের দরকার হয়, আমিই হতে পারি সেই লোক।’ ইউনাইটেডকে যেন একটা খোঁচাও মারলেন, ‘জানি ওরা বিশ্বজুড়ে অনেক জার্সি-টার্সি বিক্রি করে, তবে ওদের শিরোপাও জেতা দরকার। আমি ওদের জন্য সেটা করে দিতে পারি।’

মজার ব্যাপার, ইউনাইটেডের কোচ হতে চাইলে ম্যারাডোনা কিন্তু এখন আর ইউনাইটেডের ভক্ত নন। একসময় ছিলেন, এখন তিনি ইউনাইটেডেরই নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটির সমর্থক। সমর্থন বদলের ব্যাখ্যাও আছে তাঁর কাছে, ‘একটা লম্বা সময় ধরে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আমার প্রিয় ইংলিশ দল ছিল। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সময়ে কত অসাধারণ খেলোয়াড় খেলেছে, কত অসাধারণ দল হয়েছে। কিন্তু এখন আমি ম্যান সিটির সমর্থক। জানি এভাবে দল বদলানো উচিত নয়, কিন্তু আমি বদলেছি কুনের (সার্জিও আগুয়েরো) জন্য। আমাদের মধ্যে অনেক কথা হয়, ও দারুণ একটা দলেও খেলে।’ সিটি কোচ পেপ গার্দিওলার জন্যও আলাদা সম্মান আছে বলে জানালেন।

তা ইউনাইটেড যদি শেষ পর্যন্ত কোনো কারণে ম্যারাডোনাকে কোচ বানিয়েই ফেলে, হয়তো কপাল পুড়বে পল পগবার। কেন? ম্যারাডোনার কথাতেই ইঙ্গিত, ‘ইউনাইটেডে অ্যান্ডার হেরেরাকে আমার অনেক ভালো লাগত। পল পগবা? ও যথেষ্ট পরিশ্রম করে না।’

আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর কথা বলেছেন ইংলিশ ফুটবল নিয়েও। দোরাদোসে যাওয়ার পর একটা সাক্ষাৎকারে ‘মেক্সিকান ফুটবল কেমন দেখছেন’ প্রশ্নে তাঁর উত্তরটা তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। প্রায় আধা মিনিট ধরে ‘এএএএ...লা...’ ছাড়া আর একটা শব্দও বের হয়নি তাঁর মুখ দিয়ে। তবে ইংলিশ ফুটবল নিয়ে ম্যারাডোনার ভাবনাটা পরিষ্কার। পেপ গার্দিওলার ফুটবলের প্রশংসা করতে গিয়ে বললেন, ‘ওর (গার্দিওলা) দলগুলো অনেক অ্যাথলেটিক হয়, কিন্তু বল কীভাবে কাজে লাগাবে, সে ব্যাপারেও অনেক স্মার্ট। ফুটবলে বলটাই সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত। ইংলিশ ফুটবল দেখতে গিয়ে আমি মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে যাই। আমার ভালো লাগে না তা নয়, তবে মাঝে মাঝে (ইংলিশ ফুটবল) একটু বেশি অ্যাথলেটিক। শারীরিক শক্তির ব্যবহারটা বেশি, সৌন্দর্য থাকে কম।’

ইউনাইটেড ভেবে দেখবে ম্যারাডোনার সব দাবি, যুক্তি বা বিশ্লেষণ?