বাজে বোলিং-ফিল্ডিংয়ের জন্য দায়ী কন্ডিশন আর মাঠের সীমানাও!

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানও প্রত্যাশামতো ফিল্ডিং করতে পারেননি। ছবি: এএফপি
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানও প্রত্যাশামতো ফিল্ডিং করতে পারেননি। ছবি: এএফপি
>

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কাল বাজে ফিল্ডিং করেছে বাংলাদেশ দল। সাকিব আল হাসান তার ব্যাখ্যা দিলেন। সোফিয়া গার্ডেনসের অদ্ভুত সীমানার জন্য বোলিংয়েও সমস্যা হয়েছে বলে জানালেন এ অলরাউন্ডার

ব্যাটিং-বোলিংয়ে দিন খারাপ যেতে পারে। মোয়ার মতো ক্যাচও হাত থেকে ফসকে যেতে পারে। এতে বড় দলের সঙ্গে পার্থক্যটা আরও পরিষ্কার হয়ে ধরা পড়ে চোখে। কিন্তু গ্রাউন্ড ফিল্ডিং—মাটি কামড়ে আসা বল ধরায় খারাপ দিন আসার সুযোগ নেই। ক্রিকেটের এ জায়গাটায় বড় দলের সঙ্গে সামর্থ্যের পার্থক্য ঘটার কোনো কারণ নেই। কিন্তু ২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কাল গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়েও অনেক পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তাতে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ রান বেশি করেছে ইংল্যান্ড।

শুধু কালকের ম্যাচ নয়, নিজেদের আগের দুটি ম্যাচেও প্রত্যাশামতো ফিল্ডিং করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে খামতিগুলো বেশি করে চোখে পড়েছে। ফিল্ডারদের হাতে বল রেখে দুই রান নিয়েছে ইংলিশরা। উইকেটের কোন প্রান্তে থ্রো করতে হবে, বাংলাদেশের ফিল্ডাররা যেন সেটিও ভুলে গিয়েছিলেন! তামিম ইকবালের মতো নিরাপদ ফিল্ডারের হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে বল। ভুল প্রান্তে থ্রো করে বেয়ারস্টোকে রানআউটের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন মোহাম্মদ মিঠুন। বাউন্ডারি সীমানা থেকে উড়ে আসা থ্রো ধরতে ব্যাকআপ দেওয়ার গরজেও মাঝেমধ্যে গলদ চোখে পড়েছে। সোজা কথায়, ইংল্যান্ডের ইনিংসে খণ্ড খণ্ড সময়ে কেমন যেন একটা গা ছাড়া ভাব দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের মধ্যে।

সাব্বির রহমান দলে না থাকায় এমনিতেই সেরা ফিল্ডার ছাড়া খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাকিরা তো মানসম্পন্ন ফিল্ডার, তাঁদের কাছ থেকে গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ের এমন মৌলিক বিষয়গুলোয় ভুল করা মোটেও প্রত্যাশিত নয়। শরীরী ভাষায় কোথায় যেন একটা ঘাটতি দেখা গিয়েছে। সংবাদমাধ্যমকে সাকিব আল হাসান তার ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি একটি তুলনাও দাঁড় করালেন, ‘এমনিতেও আমরা ফিল্ডিং নিয়ে একটু চিন্তিত। বিশেষ করে আমাদের মতো কন্ডিশন নয়, এমন কন্ডিশনে যেখানে রানটা বেশি হয় সাধারণত। আমরা যখন টপে (সেরা সময়ে) থাকি ফিল্ডিং ভালো করি। কিন্তু যখন টপে থাকি না, ফিল্ডিংটা ভালো হয় না। আমাদের ফিল্ডাররা ওদের মতো অ্যাথলেট না। আপনি যদি বেন স্টোকস কিংবা অন্য কারও কথা চিন্তা করেন, স্বাভাবিক ভাবেই আমরা ওদের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকব।’

কন্ডিশনের যুক্তিটা একেবারে ফেলনা নয়। কার্ডিফে কালকের ম্যাচে বেশ বাতাস ছিল। কনকনে ঠান্ডার ইংলিশ কন্ডিশনে বাতাস থাকলে ফিল্ডিং করা এমনিতেও একটু কঠিন। কিন্তু জাতীয় দলে হয়ে আর বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা হতে পারে না। কন্ডিশনের জন্য ফিল্ডিংয়ের সমস্যা তো উপমহাদেশের বাকি দলগুলোরও হওয়ার কথা! আর অ্যাথলেটিজমের কথা ভাবলে বাংলাদেশের ফিল্ডাররাও খুব একটা পিছিয়ে নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলায় দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের অনেক নজিরই আছে বাংলাদেশ দলের। কাল বাজে ফিল্ডিংয়ের মাঝেও যেমন মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যাচটা ছিল দুর্দান্ত।

কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনস মাঠের অদ্ভুত সীমানাতেও কিছুটা সমস্যা হতে পারে ফিল্ডারদের। স্ট্রেট অর্থাৎ বোলারের পেছনের সীমানা মিডউইকেট ও কভার অঞ্চলের চেয়ে অনেক ছোট। সে ক্ষেত্রে কম গতির বল স্ট্রেটে জোরে তুলে মারার প্রবণতা থাকে ব্যাটসম্যানদের, আর তা মারলে লং অন কিংবা লং অফ থেকে দৌড়ে এসে বাউন্ডারি ঠেকানো ওভাল কিংবা লর্ডসের চেয়ে তুলনামূলক কঠিন। মিডউইকেট ও কভার অঞ্চলে বাউন্ডারির ফিল্ডারদের দুই রান ঠেকাতে অনেক বেশি তৎপরতার প্রয়োজন ছিল, যেহেতু জায়গাটা অনেক বড়। ফিল্ডাররা তা করতে পারলে একের জায়গায় দুই কিংবা দৌড়ে চার রান নিতে পারতেন না ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। কার্ডিফের এই অদ্ভুতুড়ে বাউন্ডারি সীমানার কারণে বোলিংয়ে কৌশলগত সমস্যার কথাও জানালেন সাকিব।

শেষ দিকে ৪৪ বলে ৬৪ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেছেন জস বাটলার। তাঁর ইনিংসের উদাহরণ টেনেই ব্যাখ্যাটা দিলেন বাংলাদেশের এ অলরাউন্ডার, ‘জস বাটলারের মতো কেউ যখন ব্যাটিং করে, কঠিন হয়ে যায় পরিকল্পনাগুলো। তখন এ, বি , সি কিংবা ডি কোনো পরিকল্পনাই কাজ করে না। আর মাঠ যদি দেখেন সোজা (স্ট্রেট) খুব ছোট। আমাদের যারা বোলার, ১৪০ কিমি গতির বেশি জোরে বল করে না যে স্লোয়ার, বাউন্সার ব্যবহার করে দুপাশের সীমানা ব্যবহার করতে পারবে। তাই আমাদের বোলারদের বিপক্ষে সোজা বেশি মারবে এটাই স্বাভাবিক। যেহেতু সোজা বাউন্ডারিটা ছোট, আমাদের জন্যও কঠিন হয়ে যায়। মাঠের আয়তন আমাদের পক্ষে অবশ্যই ছিল না। অজুহাত দেখালে দেখানো যেতেই পারে। কিন্তু আমাদের চেষ্টা করতে হবে, যে ধরনেরই কন্ডিশন কিংবা (মাঠের) আয়তন থাকবে, তার সঙ্গে যেন মানিয়ে নিতে পারি।’

ঘরের মাঠে স্পিনবান্ধব উইকেটে বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক বোলিং করে থাকে। বিশেষ করে স্পিনাররা লাইন-লেংথ ও গতিবৈচিত্র্য আনতে পারেন। কিন্তু দেশের বাইরে বিশেষ করে অমন সীমানার মাঠে বাধ্য হয়েই রক্ষণাত্মক বোলিং করতে হয় বলে জানালেন সাকিব। ওভালের মতো বড় মাঠের সঙ্গে সোফিয়া গার্ডেনসের তুলনা টেনে তাঁর যুক্তি, ‘ মাঠের আয়তন ও কন্ডিশনের কারণে অনেক সময় ভিন্ন হয়ে যায়। ওভাল আসলে অনেক বড় মাঠ। সেখানে আমাদের স্পিনাররা একটু ঝুলিয়ে বোলিং করতে পারে এবং আরও বৈচিত্র্য আনতে পারে। কিন্তু এখানে চিন্তা করেছে ডিফেন্সিভ বোলিং করার। সেটি করাও কঠিন। কেননা, আমাদের সব সময়ই লক্ষ্য থাকে আক্রমণাত্মক বোলিং করার। আমরা দেশে সব সময় এ কাজটাই করে থাকি। যখন দেশের বাইরে আসি, রক্ষণাত্মক বল করতে গেলে অনেক কিছু পাল্টাতে হয়। অনেক সময় এটা মানিয়ে নেওয়া কঠিন।’

কিন্তু কন্ডিশন আর মাঠের আয়তন যা–ই হোক, মানিয়ে তো নিতেই হবে। টুর্নামেন্টটির নাম যে বিশ্বকাপ আর লক্ষ্য তো অন্তত সেমিফাইনালে খেলা। সেই পথের দ্বার কিন্তু ক্রমে ছোট হয়ে আসছে। গা ঝাড়া দিয়ে ওঠার এটাই সময়।