ওয়ার্নারের এমন ব্যাটিংয়ের রহস্য কী?

বিশ্বকাপে এখনো চেনা রূপে দেখা যায়নি ডেভিড ওয়ার্নারকে। ছবি: রয়টার্স
বিশ্বকাপে এখনো চেনা রূপে দেখা যায়নি ডেভিড ওয়ার্নারকে। ছবি: রয়টার্স
তিন ম্যাচে দুটি ফিফটি করেছেন, কিন্তু তাও সমালোচনার হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছেন না ডেভিড ওয়ার্নার। গতকাল ভারতের বিপক্ষে তাঁর ধীর গতির ব্যাটিং নিয়ে কথা হচ্ছে অনেক।

বল টেম্পারিং কাণ্ডে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এ বিশ্বকাপ দিয়েই অস্ট্রেলিয়া দলে ফিরেছেন ডেভিড ওয়ার্নার। বিশ্বকাপে আসার আগে আইপিএলে ১৪৪ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করে এসেছেন। বিশ্বকাপেও এ রকম আক্রমণাত্মক ওয়ার্নারকে দেখা যাবে বলেই প্রত্যাশা ছিল সবার। কিন্তু বিশ্বকাপে এসে পরিচিত সেই ওয়ার্নারের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।

দুই ম্যাচে ফিফটি পেয়েছেন বটে, কিন্তু তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরন এরই মধ্যে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বিশেষ করে গতকাল ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাটিংয়ের ধরনের জন্য বাঁহাতি ওপেনারকে নিয়ে কথা হচ্ছে বেশ। ৩৫৩ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ওয়ার্নার কি না করলেন ওয়ানডেতে নিজের মন্থরতম ফিফটি!

ফিফটি করতে গতকাল ওয়ার্নারকে খেলতে হয়েছে ৭৭টি বল। ফিফটির পর রান-বলের ব্যবধান কমিয়ে দেওয়ার কাজটিও করতে পারেননি। ২৫তম ওভারে যুজবেন্দ্র চাহালকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফিরেছেন ৮৪ বলে ৫৬ করে, স্ট্রাইক রেট মাত্র ৬৬.৬৭!

অপর প্রান্তে ফিঞ্চ যেখানে চালিয়ে খেলছিলেন, ওয়ার্নার সেখানে ব্যাট হাতে ছিলেন একদমই নীরব। তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরন দেখে মনেই হচ্ছিল না, অস্ট্রেলিয়া এত বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেছে। ভারতীয় সমর্থকেরা তো এক দফা মজাই নিয়েছেন অস্ট্রেলীয় ওপেনারকে নিয়ে। কেউ কেউ বলেছেন, ভারতের জয়ের পেছনে মূল অবদান ছিল ওয়ার্নারেরই। ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও তাই তাঁকেই দেওয়া উচিত! আবার কেউ কেউ বলেছেন, আসন্ন অ্যাশেজের জন্য প্রস্তুতি নিতে  ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে এমন শম্বুকগতির ব্যাটিং করছেন ওয়ার্নার!

ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বিরাট কোহলিকেও প্রশ্ন করা হয়েছে ওয়ার্নারের এমন অচেনা ব্যাটিং নিয়ে। ভারত অধিনায়ক বলেছেন, এত বড় লক্ষ্যে খেলতে নেমে যেরকমভাবে শুরু করা উচিত, সেটি করতে পারেননি ওয়ার্নার, ‘আমাদের মনে হয়েছে, বাউন্ডারি মারবে কি মারবে না এ বিষয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিল সে (ওয়ার্নার)। হয়তো শুরুতে উইকেট ধরে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিল তারা, যাতে শেষ দিকে দ্রুত রান তুলতে পারে। কিন্তু আমার ধারণা, এত বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তারা একটু বেশিই রক্ষণাত্মক হয়ে পড়েছিল।’

শুধু ভারত ম্যাচে নয়, এর আগে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও এ রকম সাবধানী ব্যাটিং করেছিলেন ওয়ার্নার। সেই ম্যাচেও ফিফটি করতে তাঁকে খেলতে হয়েছিল ৭৪ বল। শেষ পর্যন্ত দলকে জিতিয়ে ফিরেছিলেন বলে হয়তো অতটা আলোচনায় আসেনি, কিন্তু গতকালের ম্যাচের পর অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চকেও কথা বলতে হয়েছে তাঁর ওপেনিং সঙ্গীকে নিয়ে। ওয়ানডে ক্রিকেটে যার স্ট্রাইক রেট ৯৬ ছুঁই ছুঁই, তাঁর থেকে এমন ধীর গতির ব্যাটিং যে একেবারেই অপ্রত্যাশিত।

ফিঞ্চ অবশ্য মনে করেন না, রক্ষণাত্মক ব্যাটিংয়ের মনোভাব নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামছেন ওয়ার্নার। বরং প্রতিপক্ষের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কারণেই দ্রুত রান তুলতে পারছেন না, এমনটাই দাবি অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের, ‘শুরুর দিকে ভারতের বোলাররা ওকে খুব ভালো বল করেছে। তিন ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো আগে ব্যবহৃত উইকেটে খেলতে নামাটাও এমন ব্যাটিংয়ে প্রভাব ফেলে থাকতে পারে। কোনো রকম পরিকল্পনা করে এমন ব্যাটিং করছে না সে। দল থেকেও ওকে ধীরে খেলার জন্য কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ভারতীয়রা খুব ভালো বল করেছে। স্টাম্প বরাবর সোজা লাইনে ও ব্যাক অফ দ্য লেন্থে বল করেছে, যেখানে বল পড়ে স্কিড করে কিছুটা নিচু হয়ে ব্যাটে আসছিল। শুধু ওকে নয়, আমাকেও কিন্তু তেমন মারার সুযোগ দেয়নি তারা। অমন উইকেটে ওদের বোলিংয়ের পরিকল্পনা খুব সহজ, কিন্তু কার্যকরী ছিল।’

ওয়ার্নারের আরেক সতীর্থ ম্যাক্সওয়েলেরও ধারণা, বলের আচরণ বুঝে উঠতে কষ্ট হচ্ছে বলেই হাত খুলতে পারছেন না ওয়ার্নার, ‘হতে পারে কন্ডিশনের জন্য, কিংবা বলের জন্য সে আক্রমণাত্মক হতে পারছে না। আগের তুলনায় এবার ইংল্যান্ডে বল একটু বেশিই অপ্রত্যাশিত আচরণ করছে। আমরা সবাই ৫০০ নিয়ে কথা বলছিলাম, কিন্তু ৫-১০ ওভার পার হতেই বল সুইং করা শুরু করছে। বাউন্সও বেশ অসমান।’

তবে কেউ কেউ বলছেন, এক বছর পরে জাতীয় দলে ফিরে এসে নিজেকে আবার প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে আছেন বলেই এমন ব্যাটিং করছেন ওয়ার্নার। ওয়ার্নারের ব্যক্তিগত ম্যানেজারও কিছুদিন আগে জানিয়েছিলেন, সেঞ্চুরি করতে মুখিয়ে আছেন। তাহলে কি রান করার জন্য নিজের ওপর অতিরিক্ত চাপ নিয়ে ফেলছেন বলেই এমন অতি সাবধানী ব্যাটিং করছেন বিস্ফোরক এই ওপেনার? কারণ যাই হোক, দ্রুত চেনা রূপে ফিরতে না পারলে সামনের ম্যাচগুলোতেও ভুগতে হতে পারে অস্ট্রেলিয়াকে। এ বিশ্বকাপে এ রকম বড় স্কোর যে নিয়মিতই তাড়া করতে হতে পারে।