এ কেমন বিশ্বকাপ!

টন্টনে বাংলাদেশের অনুশীলনে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। ছবি: প্রথম আলো
টন্টনে বাংলাদেশের অনুশীলনে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। ছবি: প্রথম আলো

ঘণ্টাখানেকের বসায় তিনবার উঠে আশ্রয় নিতে হলো শেডের নিচে। এই চনমনে রোদ তো এই বৃষ্টি। টন্টনে বাংলাদেশ দলের ঠিকানা হলিডে ইন হোটেল। সর্বসাধারণের ভেতরে প্রবেশে কড়াকড়ি আছে। গপ-শপ তাই হোটেলের সামনের চত্বর আর কাঠের বেঞ্চিতেই হয় বেশি। কিন্তু কাল যেই গল্প জমে ওঠে, অমনি বৃষ্টির ঝাপটা। এ রকম কয়েকবার হওয়ার পর এক খেলোয়াড় তো রুমেই চলে গেলেন।

এই রোদ, এই বৃষ্টি বাংলাদেশ দলের অনুশীলনটাকেও কাল বাধা-বিপত্তির মধ্যে ফেলেছে। ঐচ্ছিক অনুশীলন ছিল। তবু বৃষ্টি মাথায় নিয়েই দুই-তিনজন ছাড়া সবাই গেছেন মাঠে। মাঝেমধ্যে ঝিলিক দিয়ে রোদ উঠলেও দুই দিন ধরে টন্টনের আকাশে মেঘের আনাগোনা লেগেই আছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস তো এখন এই আভাসও দিচ্ছে যে সোমবার বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের দিনও বৃষ্টি হতে পারে। অথচ শ্রীলঙ্কার মতো এই ম্যাচেও বাংলাদেশের জয়ে চোখ। টন্টনের ছোট মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পাওয়ার হিটারদের নিয়ে ভয় আছে। তবে ছোট মাঠের সুবিধা তো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও পাবেন। যেটুকু ভয় বোলিং নিয়ে। বাংলাদেশের মূল বোলিং শক্তি স্পিন। কিন্তু এ মাঠে স্পিন কাজে লাগার সম্ভাবনা কম।

বিশ্বকাপে বৃষ্টিতে ভেসে গেছে এ পর্যন্ত চারটি ম্যাচ। শঙ্কা আছে আরও ম্যাচের ভবিষ্যৎ নিয়ে। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপকে তাই অনেকেই ‘বৃষ্টিকাপ’ নাম দিয়ে ফেলেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো বিশ্বকাপ নিয়ে বেশ সৃষ্টিশীলই হয়ে উঠছেন মানুষজন। একটা কার্টুন বেশ ঘুরছে ইনবক্স থেকে ইনবক্সে। আম্পায়ার টস জেতার পর অধিনায়ককে জিজ্ঞেস করছেন, ‘ব্যাটিং না ফিল্ডিং?’ অধিনায়কের উত্তর, ‘রেইনিং।’

আরেক ছবিতে দেখা গেল বিশ্বকাপের লোগোটাই গেছে বদলে! ট্রফির যে স্কেচ, তার ওপর একটা খোলা ছাতা। সেই ছাতায় ওপর থেকে বৃষ্টি পড়ছে। একজন রঙিন প্রেক্ষাপটে দেওয়া স্ট্যাটাসে প্রশ্ন তুলেছেন, যদি মাসজুড়েই বৃষ্টি হয়, তাহলে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯ চ্যাম্পিয়ন হবে কোন দল!

অবশ্য বৃষ্টিকাপের মধ্যেই বাংলাদেশ দল এখনো ক্রিকেটীয় চিন্তার মধ্যে আছে। কাল সকালে হোটেলের সামনের ওই বৃষ্টিবিঘ্নিত আড্ডায় মাহমুদউল্লাহ যেমন হিসাব করে বুঝতে চাইলেন, সেমিফাইনালে যেতে হলে বাকি পাঁচ ম্যাচের কয়টিতে জিততে হবে বাংলাদেশকে। নিজেই বললেন, ‘চারটা তো জিততেই হবে।’ দলের সবার হিসাবই এ রকম। কিন্তু সে চার ম্যাচ হতে পারে কার কার বিপক্ষে, বড় দলগুলোর মধ্যে কাদের হারানোটা সহজ হবে, ওদের নিয়ে চিন্তা করতে করতে না আবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে অঘটন ঘটে যায়, দলের মধ্যে এ রকম নানা রকম আলোচনাও ঘুরছে। সব দলের অবস্থাও অবশ্য তা-ই। চার ম্যাচে এখন পর্যন্ত সাত দলকে পয়েন্ট ভাগ করতে হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কাই করেছে দুবার।

এসব আলোচনায় এখনই তাই উপসংহারে পৌঁছা কঠিন। আপনি ভারত, অস্ট্রেলিয়া নিয়ে বেশি ভাববেন? পাকিস্তানই বা কম কী! চার ম্যাচে বাংলাদেশের সমান তিন পয়েন্ট তাদের। কিন্তু যে একটি জয় পেয়েছে, সেটি বিশ্বকাপের ‘টপ ফেবারিট’ ইংল্যান্ডকে ৩৪৯ রান করার চ্যালেঞ্জ দিয়ে। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও নিশ্চিন্তে বসে থাকতে রাজি নন। জেতার জন্য দল বাছাবাছিরও সুযোগ দেখছেন না। অন্তত চারটি ম্যাচে জিততে হবে, সম্ভব হলে পাঁচটিতেই; বাকি বিশ্বকাপে এই হলো বাংলাদেশের সোজাসাপ্টা লক্ষ্য।

কিন্তু বিশ্বকাপে এর মধ্যেই ‘ভিলেন’ হয়ে দাঁড়ানো বৃষ্টির সঙ্গে লড়াই করবে কে! তার সঙ্গে তো জেতাও সম্ভব নয়। এ সপ্তাহের পুরোটাই নাকি ইংল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হবে। বিশ্বকাপে একটি বলও না হওয়া ম্যাচের রেকর্ড শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকে কে জানে! তবে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যতটা আলোচনা-সমালোচনা, ইংলিশদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই ততটা নয়।

এবার হয়তো অন্যান্য গ্রীষ্মের চেয়ে বৃষ্টির মাত্রা একটু বেশি; তবে গ্রীষ্মে ইংল্যান্ডে বৃষ্টি হবে, এটাই এখানকার আবহাওয়ার স্বাভাবিক চরিত্র। নতুন আসা কেউ তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারলে সেটি তো আগন্তুকের দোষ। আবহাওয়ার কী করার আছে!

একইভাবে বিশ্বকাপেরও কিছু করার নেই। ইংল্যান্ডের গ্রীষ্ম যাঁরা চেনেন, তাঁরা এটিও জানেন শীতে এখানে বৃষ্টি আরও বেশি হয়, তাপমাত্রাও নেমে যায় অনেক নিচে। প্রচণ্ড ঠান্ডায় বরং তখনই এখানে ক্রিকেট খেলাটা বেশি কঠিন। হ্যাঁ, জুন-জুলাই-আগস্ট—এই তিন মাসই যেহেতু ইংল্যান্ডে গ্রীষ্মকাল ধরা হয়, বিশ্বকাপটা হতে পারত গ্রীষ্মের শেষ ভাগে। বৃষ্টির ঝাপটা কিছুটা কমতে পারে তখন। কিন্তু ওই সময় যে আবার অ্যাশেজের মৌসুম চলে আসবে! প্রথম টেস্ট শুরু হয়ে যাবে ১ আগস্ট থেকেই। ইংল্যান্ডে এই কয়দিন থেকে ইংলিশদের কাছে বিশ্বকাপের চেয়েও অ্যাশেজ সিরিজটাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। তার চেয়ে এই সময়টাই হয়তো ভালো। রোদ-বৃষ্টির ফাঁকে ফাঁকে যতটা খেলা যায়।

এ রকম ভিজতে ভিজতে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপটা একপর্যায়ে শেষও হয়ে যাবে। তবে শেষ হবে একটা প্রশ্ন নিয়েই—এ কেমন বিশ্বকাপ!