বিশ্বকাপটা আসলেই জমে উঠছে

এই টুর্নামেন্টে আফগানিস্তানই সবার কাছে মার খাবে বলে মনে হচ্ছে। খেলাটার সবচেয়ে ছোট সংস্করণে ওরা অনেক ভয়ংকর একটা দল, কিন্তু টেস্ট ম্যাচ আর ওয়ানডে ক্রিকেট যখন খেলতে নামে, ওদের দুর্বলতা ধরা পড়ে যায়। এর মূল কারণ, ক্রিজে গিয়ে কিছুক্ষণ সময় নিয়ে তারপর যে নিজেদের শট খেলবে, সে সামর্থ্য ওদের খেলোয়াড়দের নেই। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ব্যাটসম্যানের কাজই হচ্ছে ডট বলের সংখ্যা যতটা সম্ভব কম রাখা। ফিল্ডাররা রান বাঁচানোর পজিশনে থাকে বলে ওদের (আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যান) ব্যাটের কানায় লাগলেও বেঁচে যেতে পারে, কারণ ক্যাচ ধরার জন্য স্লিপে কোনো ফিল্ডার থাকে না। কিন্তু অন্য ফরম্যাটে ওদের ধৈর্যের অভাবই ওদের পারফরম্যান্সের এমন দৈন্যের কারণ।

তারপর দেখুন, উপমহাদেশ বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাটা পিচে ব্যাটসম্যানরা হয়তো (আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের মতো ব্যাটিং করেও) রান করতে পারে। কিন্তু ইংল্যান্ডে—যেখানে বল বাতাসে সুইং পায়, পিচে পড়ার পর কিছু সিম মুভমেন্ট থাকে, সেখানে ওদের ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ। স্কোরবোর্ডে যথেষ্ট রান রাখতে পারেনি, যেটা দিয়ে কিনা ওদের বোলাররা প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে চাপে ফেলতে পারে। এরপর মোহাম্মদ শেহজাদের মতো একজন সিনিয়র খেলোয়াড়ের দল থেকে ছিটকে পড়া নিয়ে বিতর্ক তো আছেই। দৃশ্যত, ওকে চোটের কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ও পরে উল্টো দাবি করল যে ও খেলার মতো সুস্থ আছে, ঠিকঠাকই আছে।

চোট নিয়ে কথা হচ্ছিল, ইংল্যান্ডেরও চোট নিয়ে কিছু দুশ্চিন্তা আছে। ওদের অধিনায়ক এউইন মরগানের পিঠে চোট, জেসন রয়ও পুরোপুরি ফিট নয়। আফগানিস্তান ম্যাচটা তাই ওদের জন্য অন্য কাউকে খেলিয়ে দেখার সুযোগ। এমনকি জফরা আর্চারের মতো ফাস্ট বোলারকেও বিশ্রাম দিতে পারে। ও দুর্দান্ত বোলিং করছে; বাউন্সার দেওয়ার, পায়ের কাছে ইয়র্কার দেওয়া বা স্লোয়ার দেওয়ার ওর যে সামর্থ্য—সেগুলো খুব ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে। দুই স্পিনার মঈন ও আদিল রশিদ মাঝের ওভারগুলোতে রান কমানোর পাশাপাশি উইকেট নেওয়ার কাজটাও খুব দারুণভাবেই করছে। জো রুট দুটি সেঞ্চুরি করেছে, ওর নিরীহ দর্শন অফ স্পিনে উইকেটও পাচ্ছে।

সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডকে পুরোপুরি ভারসাম্যপূর্ণ একটা দল মনে হচ্ছে। ওরা যদি চোট এড়াতে পারে, তাহলে ভারত ও আবারও জেগে ওঠা অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি ওরাও টুর্নামেন্টে অজেয় দলগুলোর একটি হয়ে যাবে। তিনটি দলই অসাধারণ ক্রিকেট খেলছে, কঠিন বা উদ্বেগপূর্ণ মুহূর্তগুলো থেকে বের করে আনার মতো অভিজ্ঞতা আর দলীয় ভারসাম্যও আছে ওদের। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের সহজ জয়টা আপনাকে ভাবাতে পারে, এই ম্যাচটা নিয়ে এত উন্মাদনা কেন, যেখানে দল দুটির মধ্যে প্রতিভা ও পারফরম্যান্সে তফাত অনেক বেশি! দুই বছর আগে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে হারটা হিসাবের বাইরে রাখলে ভারত অনেক বছর ধরেই (দুই দলের মধ্যে) সেরা। গত বছরের গভীর হতাশা কাটিয়ে অস্ট্রেলিয়াও ফিরে এসেছে, এখন ট্রফিটার জন্য ভালোভাবে চ্যালেঞ্জও জানাচ্ছে। তবে ওদের মিচেল স্টার্ককে একেবারে কম্বলে মুড়িয়ে রাখতে হবে, শেষ ওভারগুলোতে ও দুর্দান্ত বোলিং করেছে।

জি জনাব, মাঝেমধ্যে দু-একটা ভেজা বারুদ বাদ দিলে ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপটা আসলেই জমে উঠছে!