ইংল্যান্ড? সে তো অস্ট্রেলিয়ার বাঁ হাতের খেল!

টুর্নামেন্টের সেরা বল ঠেকানো সম্ভব হয়নি স্টোকসের পক্ষে। ছবি: আইসিসি
টুর্নামেন্টের সেরা বল ঠেকানো সম্ভব হয়নি স্টোকসের পক্ষে। ছবি: আইসিসি
>ইংল্যান্ডকে ৬৪ রানে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচসেরা হয়েছেন সেঞ্চুরি করা অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। মিচেল স্টার্ক ও জেসন বেরেনডর্ফ ভাগ করে নিয়েছেন ৯ উইকেট

ক্রিকেটে একটি কথা বেশ প্রচলিত। একটি ভালো ইনিংসের সমাপ্তি ঘটাতে একটি মাত্র ভালো বলই যথেষ্ট। কথাটির আদর্শ উদাহরণ আজ দেখালেন মিচেল স্টার্ক। ওই একটি বলেই যে ইংল্যান্ডের শেষ আশার বাতিটি নিভিয়ে দিয়েছেন স্টার্ক, যেটিকে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সেরা ডেলিভারি বলেই মানা হচ্ছে। ৬৪ রানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সেমিফাইনালে চলে যাওয়ার পেছনে ওই একটি বলের অবদানই বেশি।

শুরু থেকেই পথ হারানো ইংল্যান্ডকে বলতে গেলে একাই টানছিলেন বেন স্টোকস। কেন ইংলিশরা তাঁকে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের যোগ্য উত্তরসূরি মনে করেন, সেটির প্রমাণ আরও একবার দিচ্ছিলেন। একের পর এক সাহসী শটে যেন মনে করিয়ে দিতে চাইছিলেন, তিনি উইকেটে থাকা পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত নয়। পথের শেষ কাঁটা সরাতে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক শরণাপন্ন হলেন নিজের সেরা অস্ত্র স্টার্কের। আস্থার প্রতিদান এর চেয়ে ভালোভাবে বোধ হয় দিতে পারতেন না বাঁহাতি ফাস্ট বোলার।

স্টোকস যেভাবে এগোচ্ছিলেন, তাঁকে ফেরানোর জন্য বিশেষ একটি বলেরই দরকার ছিল। ঠিক সেটিই করলেন স্টার্ক। দুরন্ত গতিতে ছুটে এসে যে নিখুঁত ইয়র্কারে স্টাম্প উপড়ে ফেললেন, ৮৯ রানে দাঁড়িয়ে থাকা স্টোকসের বিন্দুমাত্র সাধ্য ছিল না সেটি ঠেকানোর। ওই এক বলেই নিশ্চিত হয়ে গেল, বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৭ বছরের জয়খরা এবারও ঘোচানো হচ্ছে না ইংলিশদের। শেষ পর্যন্ত হয়েছেও তাই। অস্ট্রেলিয়ার ২৮৫ রানের জবাবে ২২১ রানেই থেমেছে ইংল্যান্ড। ২০১৭ সালের জানুয়ারির পর প্রথমবারের মতো টানা দুই ওয়ানডে হেরে সেমিফাইনালের স্বপ্নটাকেও আরেকটু ধূসর বানিয়ে ফেলল ইংলিশরা।

ইংলিশ ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড গুঁড়িয়ে দিয়েছেন টুর্নামেন্টে ১৯ উইকেট নেওয়া মিচেল স্টার্ক। ছবি: এএফপি
ইংলিশ ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড গুঁড়িয়ে দিয়েছেন টুর্নামেন্টে ১৯ উইকেট নেওয়া মিচেল স্টার্ক। ছবি: এএফপি

ইংল্যান্ড মূলত হেরে গেল অস্ট্রেলিয়ার দুই বাঁহাতি পেসার মিচেল স্টার্ক ও জেসন বেরেনডর্ফের কাছেই। দুজনে মিলে ভাগ করে নিয়েছেন ৯ উইকেট। স্টোকসকে এমন নিঃসঙ্গ যোদ্ধা বানানোর দায় ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের যতটা, তার চেয়ে বেশি কৃতিত্ব অস্ট্রেলীয় পেসারদের। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ভয়ংকর এই ইনসুইংয়ে জেমস ভিন্সের মিডল স্টাম্প উড়িয়েছেন বেরেনডর্ফ। এটি দিয়ে শুরু, এরপর আরও চারটি উইকেট তুলেছেন এ বাঁহাতি পেসার। ৪৪ রানের বিনিময়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন বেরেনডর্ফ।

উইকেট সংখ্যায় বেরেনডর্ফের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও আজকের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মূল নায়ক ছিলেন স্টার্ক। স্টোকসকে আউট করার আগে আরও বড় সর্বনাশ করেছেন ইংল্যান্ডের। চতুর্থ ওভারেই ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপের সবচেয়ে বড় স্তম্ভ জো রুটকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেছেন দারুণ এক ইনসুইঙ্গারে। নিজের পরের ওভারেই ফিরিয়েছেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছয় হাঁকানোর বিশ্ব রেকর্ড করা অধিনায়ক এউইন মরগানকেও। বলতে গেলে ইংলিশ ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ডটাই ভেঙে দিয়েছেন। আদিল রশিদকে ফিরিয়ে ম্যাচটা শেষও করেছেন স্টার্কই। ৪৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট পাওয়া স্টার্কের ২০১৯ বিশ্বকাপে উইকেট হয়ে গেল ১৯টি। মোহাম্মদ আমির ও জফরা আর্চারকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও এখন তিনি।

হুমকি হতে পারতেন জনি বেয়ারস্টো বা জস বাটলাররাও। বেয়ারস্টোকে (২৭) ফিরিয়েছেন বেরেনডর্ফ, আর বাটলার (২৫) ফিরেছেন মার্কাস স্টয়নিসের বলে বাউন্ডারিতে উসমান খাজার দারুণ ক্যাচ হয়ে। পুরো ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডিং ছিল চোখে লেগে থাকার মতো। অ্যারন ফিঞ্চের অধিনায়কত্বও ছিল দুর্দান্ত।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে এই জয়ে এবারের বিশ্বকাপের প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। আর সেমিফাইনালে ওঠাকে আরেকটু সংশয়ের মুখে ফেলে দিল বড় মঞ্চে ‘চোক’ করতে অভ্যস্ত ইংল্যান্ড।