ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দলগত পারফরম্যান্স লাগবে

আবদুর রাজ্জাক
আবদুর রাজ্জাক

যুক্তরাষ্ট্রে আছি। বাংলাদেশের খেলা শুরু হয় এখানকার সময়ে ভোর পাঁচটায়। কষ্ট হলেও খেলা দেখতে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠি। আফগানিস্তান-বাংলাদেশ ম্যাচ দেখলাম। একেবারে নিখাদ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে বাংলাদেশ। যেমনটা বাংলাদেশের কাছে প্রত্যাশা ছিল, ঠিক তেমনটাই হয়েছে। এই জয় নিয়ে খুব বেশি উতলা হওয়ার কিছু নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারিয়েও উল্লাস করে না বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের ম্যাচে সহজে খুব একটা আলোড়ন সৃষ্টি করবে না ক্রিকেটারদের মনে। তবে জয় তো জয়ই, ক্রিকেটাররা আত্মবিশ্বাস নেবে এই জয় থেকে।

বাংলাদেশ আফগান স্পিন সামলানোর জন্য লিটন দাসকে ওপেন করিয়েছে। পরিকল্পনাটা ভালো ছিল। ওদের মুজিব উর রেহমানকে নিয়ে একটু ভীতি ছিল, টপ অর্ডারে সৌম্য খেললে সে চেপে ধরতে পারত। সেই সুযোগ দেয়নি বাংলাদেশ।

মুশফিক ‘ক্ল্যাসিক’ ইনিংস খেলেছে। উইকেটে বড় বড় টার্ন হচ্ছিল। কঠিন উইকেটে কীভাবে ব্যাট করতে হয় দেখিয়ে দিয়েছে মুশফিক। এক-দুই-তিন রান এসেছে প্রচুর। দেখে ভালো লেগেছে। এমন উইকেট ও বড় বাউন্ডারির মাঠে মাথা খাটিয়ে ব্যাটিং করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মুশফিক ঠিক তা–ই করেছে। রিয়াদ চোটে না পড়লে বাংলাদেশের রান আরও বেশি হতে পারত। মোসাদ্দেক নিজের দায়িত্বটা ঠিকঠাক পালন করেছে। শেষের দিকে আদর্শ ইনিংস খেলেছে সে।

আর সাকিবের কথা কী বলব! অতিমানবীয় পারফরম্যান্স। সাকিবকে অন্যদের সঙ্গে তুলনার সময় শেষ। সাকিব এখন নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, ধাপে ধাপে নিজেকে সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। ওর ভালো খেলা মানেই বাংলাদেশের জয়, খুব কম ম্যাচে ওর পারফরম্যান্সের পরও বাংলাদেশ হেরেছে। সাকিব ব্যাটে-বলে পারফর্ম করলে এমন জয় আসেই। আমি আশা করছি সাকিব টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটার হবে। আশা করব, বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে নিয়ে যাবে সাকিব।

তামিমের কাছে কিছু রান পেলে বাংলাদেশের কাজটা সহজ হয়ে যায়। সামনে দুটি বড় ম্যাচ আছে, প্রতিপক্ষ ভারত ও পাকিস্তান। আশা করি, বড় দুই ম্যাচের জন্য নিজের সেরা ক্রিকেটটা জমিয়ে রাখবে।

বোলিংয়ে একটা জিনিস আমার ভালো লেগেছে। বোলাররা জুটি বেঁধে বোলিং করেছে। উইকেটে সাহায্য ছিল, তবে সবাই উইকেটের পেছনে ছোটেনি। একজন রান থামিয়ে রেখেছে, আরেকজন উইকেট পেয়েছে। দলের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো থাকলেই এটা সম্ভব।

ইংল্যান্ডে এই সময় উইকেট থেকে স্পিনাররা সাহায্য আদায় করে নিতে পারবে। বলটা ভালো ব্যবহার করতে পারলে পেসাররাও রিভার্স সুইং পাবে। সাইফের বল সেদিন একটু রিভার্স সুইং করছিল। মোস্তাফিজের বলও গ্রিপ করেছে। আশা করি, আমাদের বোলাররা এটা কাজে লাগাতে পারবে।

এই ম্যাচের আগে আফগান ক্রিকেটাররা অনেক কথা বলেছে। ওদের কথাবার্তা আমার কাছে বোধগম্য মনে হয়নি। ক্রিকেট জাতি হিসেবে বড় হতে হলে সব দিক থেকেই পরিণত মনোভাব পোষণ করতে হবে। আশা করি, এই দিকটায় আফগানিস্তান আরও উন্নতি করবে।

বাংলাদেশের সামনে বড় দুইটি ম্যাচ—ভারত ও পাকিস্তান। আমাদের দলগত পারফরম্যান্স লাগবে। এক বিভাগে বা একজনের ভালো পারফরম্যান্সে জয় পাওয়া কঠিন হবে। ব্যাটে, বলে, ফিল্ডিংয়ে ভালো করতে হবে, তবেই জয় আসবে।