'সেমিফাইনাল অসম্ভব নয়'

সাবেক তিন অধিনায়কই মনে করেন সেমিফাইনালে যাওয়ার সব যোগ্যতাই বাংলাদেশের আছে। ফাইল ছবি
সাবেক তিন অধিনায়কই মনে করেন সেমিফাইনালে যাওয়ার সব যোগ্যতাই বাংলাদেশের আছে। ফাইল ছবি
>মিনহাজুল আবেদীন, আকরাম খান, খালেদ মাহমুদ—জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তিনজনই। এ ত্রয়ীর মতে, বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে বাংলাদেশ খেলতেই পারে। তাদের আশার পেছনে আছে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতা আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দলের সক্ষমতা।

বার্মিংহাম এখন যেন এক খণ্ড উপমহাদেশ! এক সপ্তাহজুড়ে বার্মিহামে যে ক্রিকেট উৎসবটা হবে, তা নিয়ে রোমাঞ্চ আর উত্তেজনার শেষ নেই এখানকার বাংলাদেশি, ভারতীয় আর পাকিস্তানি প্রবাসীদের। তিনটি দেশেরই খেলা পড়েছে এ শহরে।
কাল এজবাস্টনে পাকিস্তান খেলেছে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। একই মাঠে ৩০ জুন খেলবে ভারত-ইংল্যান্ড। আর ২ জুলাই বাংলাদেশ-ভারত। এই ভেন্যুতে বাংলাদেশ খেলবে একটি ম্যাচ, কিন্তু চোখ থাকবে বাকি দুটিতেই। প্রতিটির সঙ্গে সেমিফাইনালে যাওয়ার সমীকরণ জড়িয়ে। নিউজিল্যান্ডের কাছে যদি পাকিস্তান হারে, ভারতের কাছে যদি ইংল্যান্ড হারে। আর দুই ‘যদি’ মিলিয়ে বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়ে দেয়-কাল বার্মিংহামের এক গ্রামে ঘুরতে বেরিয়েও মাশরাফি বিন মুর্তজা তাই বারবার পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের স্কোরকার্ডে চোখ রাখছিলেন।

সূক্ষ্ম নজর রাখছিলেন মাশরাফির পূর্বসূরি মিনহাজুল আবেদীন, আকরাম খান আর মিনহাজুল আবেদীনও। বাংলাদেশ দলের সাবেক এই তিন অধিনায়কই দলের থিঙ্কট্যাংকের সদস্য-২০ বছর আগে যাঁরা এই ইংল্যান্ডে এসেছিলেন বিরাট এক স্বপ্নপূরণের রোমাঞ্চ নিয়ে। এবার তাঁদের কেউ এসেছেন প্রধান নির্বাচক, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান কিংবা ম্যানেজার হিসেবে। অধিনায়কদের স্বপ্নাতুর চোখ আর অভিজ্ঞ মস্তিষ্ক বলছে, সমীকরণ যত কঠিন হোক, বাংলাদেশ সেটি মেলাতে তৈরি।

মিনহাজুল আবেদীন
‘পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা আছে, তাই বাংলাদেশ ভালো খেলছে। তবে সেমিফাইনালে ওঠা নিয়ে ভীষণ চিন্তা করতে চাই না। আমরা চিন্তা করি ম্যাচ ধরে ধরে। আগে থেকে সেমিফাইনাল চিন্তা করে চাপ নেওয়ার চেয়ে ম্যাচ ধরে ধরে এগোনোই ভালো। তবে হ্যাঁ, দল যেভাবে খেলছে, আমরা আত্মবিশ্বাসী, যেকোনো দলকেই হারিয়ে আমরা সেমিফাইনালে যেতে পারব। ২০০৭ বিশ্বকাপের পর আর কোনো আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে না জেতায় আমাদের একটা মানসিক বাধা আছে। এটা সব বড় দলের বিপক্ষেই থাকে। তবে আমরাও তো বদলেছি, তাই না? ১৯৯৯ বিশ্বকাপ থেকে যদি চিন্তা করেন, বাংলাদেশ যে দুর্দান্ত খেলছে, এটা অবশ্যই অনেক বড় বদল। এ কারণে দল নিয়ে অনেক আশাবাদী। এত অভিজ্ঞ খেলোয়াড় একটা দলে একসঙ্গে সব সময় পাওয়া যায় না। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছি আমরা, সামনেও কাজে লাগাতে চাই।’

আকরাম খান
‘দল হিসেবে আমরা খুবই অভিজ্ঞ। এই অভিজ্ঞতা এখন অনেক কাজে দিচ্ছে। তিন বিভাগের মধ্যে আমরা ব্যাটিং বেশি ভালো করছি। সাকিব টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলছে। একটা দলে সবাই রান করবে না। তবে বাকিরা যেন ছোট-মাঝারি অবদান রাখতে পারে, যেটা দলের জয়ে কাজে দেবে। এখন সেটাই হচ্ছে। সাকিবকে বাকিরা সমর্থন দিচ্ছে। এখনো দুটি ম্যাচ বাকি। সামনের ম্যাচটা (বার্মিংহামে) অনেক কঠিন। ভারত অনেক শক্তিশালী হলেও আমরা যেভাবে খেলে যাচ্ছি, সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আমাদের একটু ঘাটতি আছে বোলিংয়ে। সেটি ভালো হলে আশা করি ভারতকেও হারাতে পারব আমরা।’

খালেদ মাহমুদ
‘দু-একটি ম্যাচে ভাগ্যের সহায়তা পাইনি আমরা। পেলে পয়েন্ট টেবিলে আমাদের অবস্থান আরও ভালো থাকত। তবে আমরা আশাবাদী। বলছি না ভারত-পাকিস্তানকে হারানো যাবে না। দুটি দলকেই হারানো যাবে। আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। বাংলাদেশ এখন অনেক অভিজ্ঞ দল। ২০ বছর আগে যখন এই ইংল্যান্ডে এসেছিলাম, তখন আমরা অনভিজ্ঞ ছিলাম। এই দলটায় অনেক পরিবর্তন। বাংলাদেশ এখন ভালো পরিকল্পনা করতে জানে, সেটি কাজে লাগাতে জানে। বাংলাদেশ এখন যেকোনো জায়গায় জিততে জানে। এ ম্যাচ দুটি যদি জিতি, অনেক কিছু হতে পারে।’

পূর্বসূরিরা যখন বড় স্বপ্ন নিয়ে তাকিয়ে, বর্তমান অধিনায়ক কী ভাবছেন? কাল বার্মিংহামের হোটেল হায়াত রিজেন্সির নিচে দাঁড়িয়ে মাশরাফি বললেন, ‘সেমিফাইনালের হিসাব পরে, আরে ভাই, এই বিশ্বকাপ তো জমিয়ে তুলেছি আমরা! না হলে টুর্নামেন্ট বড় ম্যাড়মেড়ে মনে হতো। সবাই আগে থেকেই বুঝে যেত কোন চারটা দল উঠতে যাচ্ছে সেমিফাইনালে। আমাদের কারণেই তো এখনো কেউ বলতে পারছে না টুর্নামেন্টে শেষ চারের ছকটা কেমন হবে।’
আসলেই বিশ্বকাপের মতো একটা বড় মঞ্চ জমিয়ে তুলেছে বাংলাদেশ, এটাও-বা কম কী!