ভারতকে হারাতে বাকিদের পারফরম্যান্সও চাই

ভারতকে হারাতে সেরা প্রস্তুতিই নিতে হবে বাংলাদেশ দলকে। ছবি: প্রথম আলো
ভারতকে হারাতে সেরা প্রস্তুতিই নিতে হবে বাংলাদেশ দলকে। ছবি: প্রথম আলো
>

২০১৫ বিশ্বকাপের পর ভারতের বিপক্ষে এ পর্যন্ত ছয়টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। এ ছয় ম্যাচে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু ক্রিকেটার পারফর্ম করেছেন। কিন্তু মঙ্গলবার বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভারতকে হারাতে হলে বাংলাদেশকে দল হিসেবে খেলতে হবে, পারফর্ম করতে হবে বাকিদেরও।

মাঝে পেরিয়ে গেছে চার বছরেরও বেশি সময়। অথচ সেই হারের স্মৃতি এখনো যেন দগদগে ঘা। সত্যিই সময় রকেটের বেগে ধায়। এই সময়ই এত দিন পর ফিরিয়ে এনেছে সে ম্যাচের স্মৃতি। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল; ভারতের কাছে ১০৯ রানের হার। নো বল বিতর্ক, মাহমুদউল্লাহর আউট...সব মিলিয়ে দুর্ভাগ্য যেন ঘিরে ধরেছিল বাংলাদেশকে। গত বিশ্বকাপে সেটাই ছিল বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ। এবার বিশ্বকাপে ঠিক শেষ ম্যাচ নয়, তবে সেমিফাইনালে ওঠার দৌড়ে নানা সমীকরণ মেলানো শুরুর ম্যাচটা বাংলাদেশকে খেলতে হচ্ছে সেই ভারতের বিপক্ষেই। মাশরাফি বিন মুর্তজার দল হারলে এমনিতেই জটিল সমীকরণ আরও জটিল হয়ে পড়বে।

সমীকরণ আপাতত তুলে রেখে ম্যাচ জয়ের অঙ্ক কষাই ভালো। বাংলাদেশ দলও নিশ্চয়ই সেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে ‘হোমওয়ার্ক’ সেরে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। সবশেষ বিশ্বকাপ থেকে মাঝের এ চার বছর হিসাব করলে ভারতের বিপক্ষে মাত্র ছয় ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। জিতেছে দুই ম্যাচ, বাকি চারটিতে হার। এই চার হারের মধ্যে শুধু একটি ম্যাচই বার্মিংহামের এজবাস্টনে খেলেছে বাংলাদেশ।

ঠিকই ধরেছেন, ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল; যে ম্যাচে বাংলাদেশের ২৬৪ রান তাড়া করতে নেমে ভারত জিতেছিল হেসেখেলে (৯ উইকেটে, ৫৯ বল হাতে রেখে)। এই বার্মিংহামেই মঙ্গলবার ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত দুটি ম্যাচ গড়িয়েছে এ মাঠে। দুটি ম্যাচেই রান উঠেছে আড়াই শর নিচে। আর পরে ব্যাট করা দলই জিতেছে। ঠিক দুই বছর আগে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিতে ভারতও জিতেছে পরে ব্যাট করে। তাহলে এবার ভারতের বিপক্ষে টস জিতলে বাংলাদেশের তো পরে ব্যাট করাই উচিত? নিশ্চিত করে কিছু বলা কঠিন।

একে তো প্রতিপক্ষ ভারত—তাদের ব্যাটিং-বোলিং লাইনআপ এ মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা। বোলিং বিভাগ তেমন আশাপ্রদ না হলে এমন দলের বিপক্ষে পরে ব্যাট করার চাপ দুই ধরনের—পাহাড়সমান রান তাড়া করতে হতে পারে, আর সেই পাহাড়ে উঠতে গিয়ে গতির আগুনে পোড়া কিংবা স্পিনজালে ফাঁসার ঝুঁকি থাকে। এর চেয়ে কোনো চাপ না নিয়ে আগে ব্যাট করলেই তো ঝুঁকি কম? এসবই সাধারণ হিসাব-নিকাশ। টিম ম্যানেজমেন্ট নিশ্চয়ই আরও গভীরে ভাবছে।

তবে এ চার বছরে ছয়টি ম্যাচের স্কোরকার্ড দেখলে সাদা চোখেই বেশ কিছু বিষয় ধরা পড়ে। যেমন ধরুন, যে দুটি ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছে তা গত বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজে। সিরিজ জয়ের সে দুটি ম্যাচে ওপেনিংয়ে মোটামুটি ভালো জুটি পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর হারের চার ম্যাচে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিতে রান এসেছে ৮, ১, ১৫ ও ১২০। শেষ ম্যাচটা (এশিয়া কাপ ফাইনাল) না ধরাই ভালো। কারণ, ওপেন করেছিলেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। আর যা–ই হোক, বিশ্বকাপে ওপেনিং জুটিতে অন্তত মিরাজকে তো দেখা যাবে না?

অর্থাৎ ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে ভালো শুরু বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই দায়িত্বটা তামিম ইকবালের ওপরই বেশি বর্তায়। এবার ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভালো শুরু করেও উইকেটে কেন যেন থাকতে পারছেন না তামিম। স্ট্রাইক রেটও শঙ্কা করার মতো জায়গায় নেমে গেছে। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলটা ভারত হওয়ায় তামিমের আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার কথা।

এই চার বছরে ভারতের বিপক্ষে চার ম্যাচ খেলে দুটি পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছেন তামিম। এর মধ্যে ৭০ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন এই বার্মিংহামেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে। আর ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস সাকিবের সঙ্গে যুগ্মভাবে তামিমেরই বেশি (৭)। আত্মবিশ্বাসী না হওয়ার তাই কোনো কারণ নেই।

দুই বছর আগে বার্মিংহামের সেই ম্যাচটা আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারে আরেকজনকে—মাশরাফি বিন মুর্তজা। সে ম্যাচে বাংলাদেশ আট বোলার ব্যবহার করেও ভারতের কিছু করতে পারেনি। সবার ইকোনমি রেট ছিল ছয়ের ওপরে, শুধু মাশরাফি ছাড়া (৩.৬২)। বিশ্বকাপে বার্মিংহামের (এজবাস্টন) উইকেট কিন্তু এক ধরনের ধাঁধা ছুঁড়ে দিয়েছে। যে দুটি ম্যাচ হয়েছে, সব কটিতেই স্পিনারদের বল বেশ ভালো বাঁক নিয়েছে, পেসারদের কাটারও ধরেছে। এমনকি সিম মুভমেন্টও পেয়েছেন আমির-আফ্রিদি, ফার্গুসনরা। মাশরাফির গতি কমলেও কাটার-স্লোয়ারের বিষ তো কমেনি। ওখানকার উইকেট তাঁর মতো বোলারের জন্য আশীর্বাদ হয়ে ওঠার কথা। আর আর্শীবাদটুকু কাজে লাগিয়ে ফর্মেও ফিরতে পারবেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

তামিম-সাকিব-মুশফিক ছাড়া এ চার বছরে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান ন্যূনতম ৫০ রানের ইনিংসও খেলতে পারেননি। এশিয়া কাপ ফাইনালে লিটনের সেঞ্চুরি নিয়ে আলাদা করে বলতেই হয়। মঙ্গলবার অমন একটা ইনিংস খেলতে পারলে বিশ্বকাপে সাকিব-মুশফিকের ওপর থেকে টানা রান করার চাপ অন্তত কিছুটা হলেও কমবে। আসলে ভারতের বিপক্ষে দু-একজনের খেলা নয়, দল হয়ে খেলতে না পারলে যে বিপদ বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি।

বিপদের কথা উঠলে বোলিং বিভাগ নিয়েই বাংলাদেশের ভাবনা বেশি। মোস্তাফিজুর রহমান এ ভাবনা অনেকটাই দূর করে দিতে পারেন; অন্তত ভারতের বিপক্ষে। এ চার বছরে মোস্তাফিজকে খেলতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা ভুগেছেন সবচেয়ে বেশি। এ ৬ ম্যাচে সব মিলিয়ে তাঁর শিকার ১৫ উইকেট। বার্মিংহামে নতুন উইকেটে না খেলালে কাটার-স্লোয়ার ধরার সম্ভাবনাই বেশি। তাতে মোস্তাফিজের চোখ চকচক করে ওঠার কথা। বাকিটা পারফরম্যান্স, যা দেখাতে হবে আসলে গোটা দলকেই।