বিশ্বকাপে স্বাগতিকদের সুবিধা পাচ্ছে ভারত!

কী রহস্য লুকিয়ে আছে এই উইকেটে! ছবি: রয়টার্স
কী রহস্য লুকিয়ে আছে এই উইকেটে! ছবি: রয়টার্স

মাসটাও জুন! চরিত্রগুলোর মধ্যে আছে ইংল্যান্ড, ভারত...এবং বাংলাদেশও। এজবাস্টনকে কখনো কখনো পলাশীর প্রান্তরও মনে হচ্ছে। চারদিকে কান পাতলেই যে কত কত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব! ভারত নাকি ইচ্ছে করেই হারবে বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানকে বাড়ি ফেরার বিমান টিকিট ধরিয়ে দিতে! ওদিকে ইংলিশ মিডিয়া উইকেটের চরিত্র দেখে থ বনে গেছে। খেলা ইংল্যান্ডে হচ্ছে, নাকি ভারতে! এই উইকেট যেন ভারতের রেসিপি মেনে বানানো—ঠারোঠোরে নয়, ইংলিশ মিডিয়া এখন এমন কথা বলতে শুরু করেছে বেশ জোরেই। ব্রিটেনের বেশির ভাগ প্রভাবশালী পত্রিকা অভিন্ন সুরে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বে’র কথা বলছে!

এই যড়যন্ত্র তত্ত্ব বিষয়টা কী, ‌দ্য সানের সিনিয়র ক্রিকেট প্রতিবেদক জন এথেরিজ প্রেসবক্সে বসে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলেন, ‘উইকেটে টার্ন দেখে ইংল্যান্ড অবাক হয়েছে। তারা গত চার বছর ঘরের মাঠে ব্যাটিং-সহায়ক উইকেটে খেলে অভ্যস্ত। নিজেদের সেভাবেই তৈরি করেছে। ৩৫০ এমনকি ৪০০ রানের স্কোর ইংল্যান্ড অনায়াসে পেয়েছে। বল ভালো ব্যাটে এসেছে। অথচ এখানে টার্ন দেখা যাচ্ছে। আর ষড়যন্ত্র-তত্ত্বটা হচ্ছে, এই যে পিচ অনেক মন্থর দেখা যাচ্ছে, বল প্রচুর টার্ন করছে, আইসিসি দেখভাল করছে পিচগুলো। ভারত যেহেতু পরাশক্তি, পিচ তাদের দিক তাকিয়ে তৈরি হচ্ছে। এটাই একেবারেই যে ভুল তা নয়। তবে ইংল্যান্ডের এটা অজুহাত হিসেবে দেখা ঠিক নয়। তাদের ভালো খেলতে হবে, ভালোভাবে তৈরি হতে হবে। উইকেটে মানিয়ে নিয়েই ভালো খেলতে হবে।’

ইংল্যান্ড উইকেট নিয়ে ভীষণ চিন্তিত বলেই এজবাস্টনের কিউরেটরকে ভীষণ ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল আজ। বারবার তাঁকে ‘ব্রিফ’ করতে হলো ইংলিশ টিম ম্যানেজমেন্টকে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের অবশ্য আপত্তি আছে ইংল্যান্ডের এ যড়যন্ত্র তত্ত্বের। পুরো ইংল্যান্ড চষে বেড়াচ্ছেন ভারতীয় ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক সন্দীপন ব্যানার্জি। ভারতের ম্যাচ তো আছেই, অন্য দলগুলোর ম্যাচও তিনি সমান উৎসাহে কাভার করছেন। বেশির ভাগ মাঠের উইকেট কেমন আচরণ করছে, খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হচ্ছে তাঁর। সন্দীপনের প্রশ্ন, ‘ষড়যন্ত্রই যদি হবে, আচ্ছা কিউরেটর কাদের? সবাই তো ইসিবির (ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড) বেতনভুক্ত। যাদের চাকরি করছে, তাদের বেকায়দায় ফেলতে চাইবেন কিউরেটররা? আবহাওয়া গরম থাকলে উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হয়ে যায়। শুষ্ক উইকেটে পেসারদের তেমন কিছু থাকে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ওরা ব্যবহৃত উইকেটে বেশি খেলেছে। ব্যবহৃত উইকেটে একটু মন্থর-টার্ন থাকে। ফ্রেশ উইকেটে কিন্তু ওরা অনেক রান তুলেছে।’

ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলির সংবাদ সম্মেলনেও উইকেটের প্রসঙ্গটা উঠল। ভারতীয় অধিনায়কের মনে হচ্ছে ইংল্যান্ড চাপ নিতে পারছে না, ‘সবাই কিছুটা অবাক হয়েছে, সবাই ভেবেছে ইংল্যান্ড তাদের কন্ডিশনে দাপট দেখাবে। তবে টুর্নামেন্টের শুরুতে বলেছিলাম চাপ একটা বড় ফ্যাক্টর এখানে। আপনাকে সেটা সামলাতে হবে। লো স্কোর ডিফেন্ড করতে হবে। আমি দুটো ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলেছি তো জানি, এটাই হয় বড় টুর্নামেন্টে। এখানে সব দলই যে শক্তিশালী। নির্দিষ্ট দিনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কিছু দল দুর্দান্ত খেলেছে বলে তারা হেরেছে। এটা হয়।’

ইংলিশদের ষড়যন্ত্রতত্ত্ব নিয়ে অবশ্য বাংলাদেশের খুব বেশি ভাবার সুযোগ নেই। উপমহাদেশের দল হিসেবে উইকেট মন্থর-টার্ন থাকলে বাংলাদেশ বরং খুশিই। দলের তরুণ অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন যেমন বললেন, ‘উইকেটের কথা বললে সাউদাম্পটনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমরা স্পিন-সহায়ক উইকেট পেয়েছিোস। আর টুর্নামেন্টে যে স্পিনারা ভালো করেছে বেশির ভাগ রিস্ট স্পিনার। রিস্ট স্পিনাররা সবখানেই বল ঘুরাতে পারবে। এটা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। এখনো পর্যন্ত আমরা ভালো খেলছি । যা হয়েছে আমাদের জন্য ভালোই হয়েছে।’

বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা অবশ্য এটার ভালো-মন্দ কোনো দিকই খুঁজতে গেলেন না, ‘এখানে সব দলই যার যার স্বার্থ দেখবে। ইংল্যান্ডও দেখছে। আমাদের জন্য যেটা ভালো হবে, মাঠে আমরা সেটাই তো চাইব।’

যে উইকেট নিয়ে এত কথা, ইংলিশরা কাল এজবাস্টনে ভারতের বিপক্ষে ‘ফ্রেশ’ উইকেটই পাচ্ছে। সতেজ উইকেটে ইংলিশরা ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ কতটা পেছনে ফেলতে পারে, সেটিই দেখার।