আম্পায়ার ও গুলবদিনে পার হলো পাকিস্তান

নিজের নবম ওভারে ১৮ রান দিয়ে ম্যাচটা পাকিস্তানের দিকে ঠেলে দিয়েছেন নাইব। ছবি: এএফপি
নিজের নবম ওভারে ১৮ রান দিয়ে ম্যাচটা পাকিস্তানের দিকে ঠেলে দিয়েছেন নাইব। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের ম্যাচ জয়ের নায়ক অবশ্যই ইমাদ ওয়াসিম। চাপের মুখে অপরাজিত ৪৯ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে পাকিস্তানকে ৩ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। কিন্তু এ ম্যাচ জয়ের জন্য আম্পায়ার ও গুলবদিন নাইবকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত পাকিস্তানের। দুই আম্পায়ারের দুই ভুল সিদ্ধান্ত ও নাইবের নায়ক হতে চাওয়ার চেষ্টার সর্বোচ্চ সুবিধা পেয়েছে পাকিস্তান।

শেষ ওভারে ৬ রান দরকার ছিল। প্রথম দুই বলে ২ রান হলো। তৃতীয় বলে ঝুঁকিপূর্ণ ১ রান নিতে গেলেন পাকিস্তানের দুই ব্যাটসম্যান। বোলিং প্রান্তে সহজ এক বল ধরতে পারলেন না নাইব। ভুল ফিল্ডিংয়ে এল দুই রান। পরের বলেই চার। ম্যাচ শেষ হলো ২ বল আগেই। তবে নাইব পাকিস্তানকে ম্যাচ উপহার দিয়েছেন এর আগেই। ৪৬তম ওভারে যখন বোলিংয়ে এলেন নাইব তখন।

৫ ওভারে ৪৬ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। আফগান স্পিনারদের বলে চোখে অন্ধকার দেখছিল পাকিস্তান। শিনোয়ারি, রশিদ ও মুজিবের মোট ৫ ওভারই বাকি ছিল। পার্ট টাইমার হলেও আজ শিনোয়ারি দুর্দান্ত বল করছিলেন। লেগ স্পিনে দুটো ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছিলেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের। নিজের বলে সে ক্যাচ নিতে পারেননি। ৪৪তম ওভারেই মাত্র ২ রান দিয়েছেন শিনোয়ারি। ৪৬ ও ৪৮তম ওভারের জন্য তাঁর হাতে বল দেওয়াটা উচিত ছিল। নিউজিল্যান্ড ম্যাচেও পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা কেন উইলিয়ামসনের বলে স্পিনের বিপক্ষে অস্বস্তির কথা টের পাইয়ে দিয়েছিল জোরেশোরে।

আগের ৮ ওভারে ৪৭ রান দেওয়া নাইব সেসব চিন্তা মাথাতেই আনলেন না। নিজের হাতেই বল তুলে নিলেন। এরপর এমনই এক ওভার করলেন, যেটা এ বিশ্বকাপের অন্যতম বাজে ওভার বলে গণ্য হতে বাধ্য। লাইন লেংথের কোনো বালাই নেই, স্লোয়ার দিতে গিয়ে টানা ফুলটস দিচ্ছেন। ওয়াইড দিয়েছেন, করেছেন হাফভলি। ওই ওভারে এল ১৮ রান। ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে যাওয়া পাকিস্তান ফিরে লে ম্যাচে। এর আগের ওভারেও ৭১ শতাংশ জয়ের সম্ভাবনা ছিল আফগানিস্তানের, সেটা ৩০ ভাগ কমে গেল নাইবের বলেই।

পরের ৩ ওভারে ২২ রান তুলে নিয়েছেন ইমাদ ও ওয়াহাব রিয়াজ। শেষ ওভারে আবারও বল হাতে নেওয়া নাইবের অবদান তো শুরুতেই জানানো হলো। এটুকু পরেই এ ম্যাচে আফগানদের হারের দায় শুধু নাইবের কাঁধে পড়তে পারে। তবে পাকিস্তানের জয়ে কিন্তু আম্পায়ার উইলসনের অবদানও কম নয়। ৫ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান তখন কাঁপছিল। ম্যাচ সেরা ওয়াসিম তখনো মাত্র ১ রানে। এমন অবস্থায় রশিদের একটি বল প্যাডে লেগেছিল। আফগানদের জোরালো আবেদনেও নড়লেন না আম্পায়ার উইলসন। রিভিউ না থাকায় আফগানরাও সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেনি। পরে দেখা গেল, ওটা নিশ্চিত আউট ছিল।

আম্পায়ারদের ভুল এই প্রথম নয়। হারিস সোহেলও জীবন পেয়েছিলেন আম্পায়ারের ভুলে। সেবার আম্পায়ার ছিলেন নাইজল লং। হারিসের ব্যাটের ছোঁয়া নিয়ে উইকেটকিপারের কাছে বল গিয়েছিল কিন্তু লং আউট দেননি। সেবার দুর্ভাগা বোলার ছিলেন নাইব নিজেই। কিন্তু ওই যে রিভিউ আগেই নষ্ট হয়েছে!

রিভিউ নষ্ট হওয়ার পেছনেও নাইবের অবদান। মুজিবের বলে বল প্যাডে লেগেছিল বাবর আজমের। অফ স্টাম্পের বাইরে ইমপ্যাক্ট থাকায় আউট দেননি আম্পায়ার। উইকেটরক্ষক আলীখিল ও বোলার মুজিব উর রেহমানও আবেদন নিয়ে অতটা নিশ্চিন্ত ছিলেন না। রিভিউর ক্ষেত্রে বোলার ও উইকেটরক্ষকের দ্বিধা থাকলে কেউই আর সে পথে হাঁটেন না। কিন্তু এমন অবস্থায় আচমকা রিভিউ নিয়ে বসলেন নাইব। ফলাফল ম্যাচের ১০ ওভার পেরোনোর আগেই রিভিউ শেষ আফগানিস্তানের। সে ভুলের খেসারত তো তারা ম্যাচ হেরেই দিল।

এর আগে ছোট সংগ্রহ নিয়ে লড়াই করতে হলে শুরুতে উইকেট দরকার ছিল আফগানিস্তানের। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ফখর জামানকে ফিরিয়ে দিয়ে আফগানদের সেই শুরু এনে দেন মুজিব উর
রেহমান। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে ৭২ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ থেকে সব আকর্ষণ উধাও করার বন্দোবস্ত করে ফেলেছিলেন ইমাম ও বাবর। এরপরই পাকিস্তানকে জোড়া ধাক্কা দিয়েছেন মোহাম্মদ নবী। ১৬তম ওভারের শেষ বলে ইমামকে (৩৬) ফেলেছেন স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে। নিজের পরের ওভারে তুলেছেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ও পাকিস্তানের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান বাবর আজমকে (৪৫) করেছেন বোল্ড। ৮১ রানে ৩ উইকেট হারানো পাকিস্তানকে এর পর মোহাম্মদ হাফিজ (১৯), সোহেল (২৭) ও সরফরাজরা (১৮) টানার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আফগান স্পিনারদের সুবাদে ১৫৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় পাকিস্তান।

শাদাবকে (১১) নিয়ে এরপর আফগান স্পিনারদের বিপক্ষে থরহরিকম্প অবস্থায় জুটি গড়েছেন ইমাদ ওয়াসিম। এর মাঝেই ৪২তম ওভারে বল করতে এসে আবার ৮ রান দিয়ে কিছুটা চাপ কমিয়েছিলেন নাইব! এর পর তো ১৮ রানের সেই ৪৬তম ওভার। শাদাবকে ৪৭তম ওভারে রান আউট করে দায় মেটানোর চেষ্টা করেছিলেন নাইব। কিন্তু ওতে কি আর ম্যাচে ফেরা যায়!

ম্যাচের মাঝপথে ও শেষে আফগান সমর্থকদের মাঝে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে বিদ্বেষ দেখা গেছে, সেটা যদি পুরো জাতির মধ্যে বিদ্যমান থাকে তবে আজ ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে অনেক অপ্রীতিকর প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে নাইবকে!