ভয়ংকর স্টার্ককে চিনেছে নিউজিল্যান্ড

এই নিয়ে বিশ্বকাপে তিনবার ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেওয়া হয়ে গেল স্টার্কের। ছবি : এএফপি
এই নিয়ে বিশ্বকাপে তিনবার ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেওয়া হয়ে গেল স্টার্কের। ছবি : এএফপি
>

গতকাল স্টার্কের তোপেই অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে নিউজিল্যান্ড। পাঁচ উইকেট নিয়েছেন, নিজের পুরো স্পেলে ব্যাটসম্যানদের বুকে কাঁপন ধরিয়েছেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে নিজের জন্য এক আলাদা স্থান করে নিয়েছেন এই অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলার!

ছোটবেলায় হতে চেয়েছিলেন উইকেটরক্ষক। ভাগ্যিস হননি! হলে বিশ্ব এমন ভীতিজাগানিয়া ফাস্ট বোলার পেত কীভাবে? টি-টোয়েন্টির ধুমধাড়াক্কার এ যুগে আগের মতো ফাস্ট বোলার পাওয়া যায় কোথায়? মিচেল স্টার্কের মতো কিছু ফাস্ট বোলারের কল্যাণেই এখনো ফাস্ট বোলিং শিল্পটা বেঁচে আছে যেন। প্রতি বিশ্বকাপেই সে কথাটা যেন নতুন করে মনে করিয়ে দেন স্টার্ক।

গতকাল স্টার্কের তোপেই উড়ে গেছে নিউজিল্যান্ড। ব্যাট হাতে তেমন বড় স্কোর করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। কিউই বাঁহাতি ফাস্ট বোলার ট্রেন্ট বোল্টের তোপে ২৪৩ রানেই থেমে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। মারকাটারি ব্যাটিংয়ের এ যুগে ২৪৩ রান করে স্বস্তিতে থাকতে পারে খুব কম দল। এই খুব কম দলগুলোর মধ্যেই একটি দল অস্ট্রেলিয়া। স্টার্কের মতো পেসার যে আছে তাদের! স্টার্কের গতিতে বাঁধ দেওয়ার কোনো উপায় জানা ছিল না কিউই ব্যাটসম্যানদের। ১৫৭ রানে থেমে যায় তারা। ৫ উইকেট নিয়ে দলকে ৮৬ রানের ম্যাচ উপহার দেয় স্টার্ক। এই নিয়ে বিশ্বকাপে তিনবার ম্যাচে পাঁচ উইকেট পাওয়া হয়ে গেল এই গতিতারকার। যে কীর্তি গ্লেন ম্যাকগ্রা থেকে শুরু করে ওয়াসিম আকরাম, লাসিথ মালিঙ্গা থেকে শুরু করে ব্রেট লি, কার্টলি অ্যামব্রোস থেকে শুরু করে রিচার্ড হ্যাডলি, কপিল দেব থেকে শুরু করে মাইকেল হোল্ডিং—কোনো পেসারেরই নেই!

অথচ এটা স্টার্কের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ মাত্র! ২০১৫ বিশ্বকাপে আট ম্যাচ খেলে ২২ উইকেট পেয়েছিলেন স্টার্ক। এবার নিজেকেই ছাড়িয়ে গেছেন। ২০১৯ বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত খেলেছেন আট ম্যাচ, ২৪ উইকেট নেওয়া হয়ে গেছে তার। মাত্র দুই বিশ্বকাপ খেলে এর মধ্যেই বিশ্বকাপের ইতিহাসের সফলতম বোলারের তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে চলে এসেছেন—৪৬ উইকেট নিয়ে। স্টার্কের ওপরে আছেন শুধু সাবেক অস্ট্রেলিয়ান পেস তারকা গ্লেন ম্যাকগ্রা (৪ আসরে, ৩৯ ম্যাচে ৭১ উইকেট), লঙ্কান স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন (৫ আসরে, ৪০ ম্যাচে ৬৮ উইকেট), পাকিস্তান কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম (৫ আসরে, ৩৮ ম্যাচে ৫৫ উইকেট), লঙ্কান তারকা লাসিথ মালিঙ্গা (৪ আসরে, ২৭ ম্যাচে ৫২ উইকেট) ও চামিন্দা ভাস (৪ আসরে, ৩১ ম্যাচে ৪৯ উইকেট)। হিসেব করে দেখুন, ম্যাকগ্রা-মুরালিদের মতো চার-পাঁচ আসর খেললে মাত্র ১৬ ম্যাচ খেলা স্টার্ক নিজেকে কোথায় নিয়ে যাবেন!

স্টার্ককে আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো নতুন ও পুরোনো বল উভয় ক্ষেত্রেই তিনি সমান ভয়ংকর। ইনিংসের মাঝপথে উইকেট নিতে জুড়ি নেই তাঁর। এই বিশ্বকাপের কথাই ধরুন। বাংলাদেশের বিপক্ষে তামিমকে যখন বোল্ড করলেন, ৬২ রান করে তামিম তখন মোটামুটি থিতু হয়েছেন উইকেটে। ভারতের বিপক্ষে শিখর ধাওয়ানকে আউট করার সময় ভারত ওপেনারের রান ছিল ১১৭। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আন্দ্রে রাসেল আর জেসন হোল্ডারকে আউট করেছেন যথাক্রমে ১৫ ও ৫১ রানে। ওয়াহাব রিয়াজের রান যখন ৪৫, স্টার্কের হাতে প্রাণ যায় তাঁর। একই অবস্থা বেন স্টোকসেরও। স্টার্কের বলে আউট হওয়ার সময় রান ছিল ৮৯। গতকাল কেইন উইলিয়ামসন স্টার্কের বলে আউট হয়েছেন ৪০ রান করে। জুটি ভাঙা দরকার? স্টার্ককে ডাকো! ইনিংসের শুরুতে উইকেট দরকার—স্টার্ক কোথায়? ডেথ ওভারে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপের লেজ গুটিয়ে দিতে হবে? স্টার্ক আছে না!
এভাবেই অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের চিন্তা অনেক কমিয়ে দিয়েছেন এই তারকা। আর নিজেকে প্রমাণ করেছেন ম্যাকগ্রা, লিলি, টমসন, রিড, ম্যাকডারমটদের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে।