পাকিস্তান-আফগানদের মারামারির পেছনে বেলুচিস্তান?

গতকাল ম্যাচ শেষে গ্যালারিতে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন দুই দলের সমর্থকেরা। ছবি: রয়টার্স
গতকাল ম্যাচ শেষে গ্যালারিতে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন দুই দলের সমর্থকেরা। ছবি: রয়টার্স
>টান টান উত্তেজনাকর এক ম্যাচে গতকাল আফগানিস্তানকে হারিয়ে সেমিফাইনালের পথে এক পা এগিয়ে গেছে পাকিস্তান। ম্যাচের আগে এবং ম্যাচ শেষে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সমর্থকেরা গ্যালারিতে বিবাদে জড়ান, যা পরবর্তী সময়ে মাঠ ও মাঠের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এসবের মূলে ইন্ধন জুগিয়েছে কে বা কারা, তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ম্যাচটি উত্তেজনায় ঠাসা হবে, তা হয়তো সবারই জানা ছিল। ম্যাচের আগে আফগান ক্রিকেট বোর্ডের এক কর্মকর্তা পাকিস্তান ক্রিকেট দলের উদ্দেশ্যে প্রায় ‘অপমানজনক’ মন্তব্য করে বসেন। তারপর পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটারদের তরফ থেকে পাল্টা মন্তব্যে পরিস্থিতি যথেষ্ট ঘোলাটে হয়ে গিয়েছিল। আর মাঠের ক্রিকেটও সেই উত্তেজনার স্মারক হয়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

এ উত্তেজনা মাঠ ছাড়িয়ে গ্যালারিতে পৌঁছে যাবে, দুই দলের সমর্থকদের মাঝে মারামারি হবে, এমনটা হয়তো কেউই ভাবেননি। কিন্তু ম্যাচের আগে মাঠের বাইরে এবং ম্যাচের পর মাঠে, গ্যালারিতে দুই দলের সমর্থকদের মাঝে হাতাহাতি হয়, যা থামাতে শেষ পর্যন্ত ইয়র্কশায়ার পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।

দুই দলের সমর্থকদের মাঝে ম্যাচের শেষে মারামারির মূলে রসদ হিসেবে কি শুধুই ম্যাচের উত্তেজনা কাজ করেছে নাকি অন্য কিছুও ছিল? বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ম্যাচ চলাকালে লিডসের হেডিংলি স্টেডিয়ামের ওপর দিয়ে একটি বিমান উড়ে যায়, যাতে একটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘জাস্টিস ফর বেলুচিস্তান’। এই ঘটনার পরই নাকি দুই দেশের সমর্থকদের মাঝে মারামারির সূত্রপাত।

আয়তনের দিক দিয়ে বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ প্রদেশ এবং এটি উত্তর আফগানিস্তানের সীমান্ত ঘেঁষা। ১৯৪৮ সাল থেকেই বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে। পাকিস্তান বরাবরই দাবি করে আসছে, বেলুচ বিদ্রোহীদের মদদ জোগাচ্ছে ভারত ও আফগানিস্তান। তাই সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার রাজনৈতিক সম্পর্ক বেশ নড়বড়ে।

এই স্লোগান থেকেই নাকি বিবাদের সূত্রপাত! ছবিঃ সংগৃহীত
এই স্লোগান থেকেই নাকি বিবাদের সূত্রপাত! ছবিঃ সংগৃহীত

সমর্থকদের মাঝে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি যাতে আর তৈরি না হয়, তার জন্য আইসিসি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভিড রিচার্ডসন। এ ছাড়াও স্টেডিয়ামগুলোতে যেন কোনো ধরনের রাজনৈতিক স্লোগান কেউ প্রচার করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেও কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইসিসি।

ম্যাচটি নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে ডেভিড রিচার্ডসন জানিয়েছেন, ‘আমরা টুর্নামেন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছি। তবে মাঠের প্রত্যেকটি লোকের ওপর দৃষ্টি রাখা কঠিন, তবুও আমাদের নিরাপত্তা দল চেষ্টা করে যাচ্ছে, যাতে রাজনৈতিক স্লোগান যুক্ত ব্যানার নিয়ে কেউ মাঠে আসতে না পারে।’

এদিকে ম্যাচের আগে পাকিস্তান আর আফগানিস্তান সমর্থকদের মধ্যে দুজনকে মারামারি করার দায়ে  মাঠ থেকে বের করে দিয়েছিল ইয়র্কশায়ার পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, দুই দলের সমর্থকদের নিরস্ত করতে মাঠের নিরাপত্তা কর্মীরা চেষ্টা করছেন।

ম্যাচের পর আইসিসির এক মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মাঠে এবং মাঠের বাইরে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার পেছনে কোনো ধরনের রাজনৈতিক উসকানিমূলক বার্তার ভূমিকা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে পশ্চিম ইয়র্কশায়ার পুলিশ, ‘বিশ্বকাপে রাজনৈতিক কোনো বার্তা প্রদর্শনে আমরা কাউকে উৎসাহিত করি না। এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটল, তা বের করার জন্য আমরা পুলিশের সঙ্গে মিলে কাজ করছি, যাতে ভবিষ্যতে একই রকমের বিশৃঙ্খলা এড়ানো সহজ হয়।’