পারলে নিজের যোগ্যতায় জেতো, ওয়াকারকে ভারত সমর্থকদের খোঁচা

ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংয়ের ধরন দেখে নিজের ক্ষোভ সামলাতে পারেননি ওয়াকার ইউনিস। রয়টার্স ফাইল ছবি
ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংয়ের ধরন দেখে নিজের ক্ষোভ সামলাতে পারেননি ওয়াকার ইউনিস। রয়টার্স ফাইল ছবি
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জেতার পর্যাপ্ত চেষ্টা না করায় ভারতের ব্যাটসম্যানদের সমালোচনা করেছিলেন ওয়াকার ইউনিস। এর জের ধরে টুইটারে সাবেক এ পাকিস্তানি পেসারকে কথা শুনিয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচের দিকে আগ্রহভরে তাকিয়ে ছিল গোটা পাকিস্তান। ভারত জিতলে যে সেমিফাইনালের সম্ভাবনা আরেকটু উজ্জ্বল হতো ৯২ এর চ্যাম্পিয়নদের। কিন্তু ম্যাচটি জিততে পারেনি ভারত। ভারতের বিপক্ষে জিতে ইংল্যান্ডের পয়েন্ট হয়ে গেছে ১০। মরগানরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে জিতলে বিদায়ঘণ্টা বেজে যাবে পাকিস্তানের। ভারতের হারে তাই স্বাভাবিকভাবেই সন্তুষ্ট হতে পারেননি পাকিস্তানের সাবেক পেসার ওয়াকার ইউনিস। হতাশা থেকেই কি না, ম্যাচের পর টুইট করে বলেছিলেন, ম্যাচে ভারতের খেলোয়াড়দের আচরণ ছিল অখেলোয়াড়সুলভ।

ভারতের হার দেখে ক্ষুব্ধ ওয়াকার নিজের রাগ ঝাড়ার জন্য বেছে নিয়েছিলেন টুইটারকে। সরাসরি কোনো দল বা খেলোয়াড়ের নাম উল্লেখ না করলেও ওয়াকারের টুইট দেখেই বোঝা গেছে, ক্ষোভটা ভারতের খেলোয়াড়দের ঘিরেই। ম্যাচ জেতার জন্য পর্যাপ্ত চেষ্টা না করায় ভারতের খেলোয়াড়দের আচরণকে অখেলোয়াড়সুলভ বলেছেন, ‘আপনি কে, সেটা আপনার পরিচয় নয়। আপনার কাজই আপনার পরিচয়। পাকিস্তান সেমিফাইনালে উঠল নাকি উঠল না, তা নিয়ে আমার বিশেষ মাথাব্যথা নেই। তবে একটা জিনিস নিশ্চিত, কিছু বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড়ি মানসিকতার একটা বড় পরীক্ষা ছিল আজকে, আর তাতে তারা জঘন্যভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’

স্বাভাবিকভাবেই ওয়াকারের এমন টুইটকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি ভারতীয় সমর্থকেরা। একের পর এক আক্রমণাত্মক টুইটে ওয়াকারকে এক প্রকার ধুয়েই দিয়েছেন ভারতীয় সমর্থকেরা। বলেছেন, অন্য দলের ওপর ভরসা না করে পারলে নিজেদের পারফরম্যান্স দিয়ে যেন সেমিফাইনালের টিকিট কাটে পাকিস্তান।

ভেংকটেশ্বর নামের একজন লিখেছেন, ‘তোমাদের (পাকিস্তানের) উচিত নিজেদের শক্তিমত্তা দিয়েই জেতা। অন্যদের ওপর নির্ভর করো না। অন্য কেউ এসে তোমাদের হয়ে কাজ করে দেবে না। অন্য দল কেন তোমাদের স্বার্থরক্ষার জন্য খেলবে?’

খুশবু নামের আরেকজন ওয়াকারকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, ‘আপনি কীভাবে এমন অভিযোগ তুলতে পারেন? বিশ্বকাপের শুরুতে যখন আপনার দল ক্রমাগত বাজে খেলছিল, তখন কেন কোনো কিছু সন্দেহ করেননি? আমাদের দল (ভারত) একটি ম্যাচ হেরেছে, আর আপনারা টুইটারে এসে হামলে পড়েছেন। দয়া করে নিজেদের খেলার উন্নতির দিকে মন দিন।’

আরেকজন ওয়াকারকে পরামর্শ দিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে এভাবে টুইট না করে যেন আইসিসি বরাবর জানান, ‘অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন টুইট। এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আপনি কে? যদি আপনি অনৈতিক কিছু সন্দেহ করে থাকেন, তাহলে আইসিসির কাছে অভিযোগ করুন, তাদের তদন্ত করতে দিন। এ রকম শত শত উদাহরণ আছে, যেখানে জেতার মতো অবস্থানে থেকেও হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে পাকিস্তান। আমরা কি তাহলে এখন কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাব?’

এভাবেই ওয়াকারের টুইটের জবাব দিয়েছেন ভারতীয় সমর্থকেরা। ছবি: টুইটার
এভাবেই ওয়াকারের টুইটের জবাব দিয়েছেন ভারতীয় সমর্থকেরা। ছবি: টুইটার

প্রভাকর নামের একজন তো আরও সূক্ষ্ম খোঁচাই দিয়েছেন পাকিস্তানের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ খেলা ওয়াকারকে, ‘আপনিই তো অনিল কুম্বলে যেন ১০ উইকেট পেতে না পারে সে জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে রান আউট হতে চেয়েছিলেন। আর এখন সেই আপনিই খেলোয়াড়ি চেতনার কথা বলছেন। অদ্ভুত!’

শুধু ভারতীয়রা নয়, বিদেশি ক্রিকেটপ্রেমীরাও সমালোচনা করছেন ওয়াকারের। ম্যাকমেনিমান নামের একজন অস্ট্রেলীয় টুইট করে বলেছেন, ক্রিকেট বিশ্বকাপের মতো আসরে অন্য দলের থেকে সহায়তা প্রত্যাশা করাটাই উচিত নয়, ‘অজুহাত দেওয়া বন্ধ করুন। বিশ্বকাপের মতো এত বড় আসরে অন্য কারওর থেকে কোনো সহায়তাই আশা করা উচিত নয়। সেরা চার দলই এখানে সেমিফাইনাল খেলবে। আপনার দল যদি সেমিফাইনালে উঠতে না পারে, তাহলে দেশে গিয়ে এমন ফলাফলের কারণ খুঁজে বের করুন। চ্যাম্পিয়নদের থেকে সাহায্য পাবেন, এমনটা আশা করার কোনো মানে হয় না।’

এমনকি ওয়াকারের স্বদেশি একজনও তাঁর সমালোচনায় মেতেছেন, ‘আমাদের পাকিস্তানিদের এই ম্যাচ নিয়ে অভিযোগ করা উচিত নয়। ম্যাচ হেরে তারা খুশি হবে না দুঃখ পাবে, সেটি বরং আমরা ভারতীয়দের ওপরেই ছেড়ে দিই। যতটুকু খেলা বাকি আছে, আমাদের সেটার দিকেই মনোযোগ দেওয়া উচিত এবং সামনে এগিয়ে যাওয়া উচিত।’