বলে-কয়ে চ্যালেঞ্জ জিতলেন মোস্তাফিজ!

অবশেষে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত মোস্তাফিজকে দেখা গেল। ছবি: প্রথম আলো
অবশেষে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত মোস্তাফিজকে দেখা গেল। ছবি: প্রথম আলো

সাউদাম্পটনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জেতার পর দলের আর সবার মতো মোস্তাফিজুর রহমানের মুখেও হাসি ছিল। কিন্তু সেই হাসির মধ্যে একটা অপূর্ণতার ছবি দেখা।

না লুকিয়ে সেদিন খোলাখুলিই বললেন, ‘দল ভালো খেলছে। কিন্তু নিজের বোলিংটা নিয়ে আমি খুশি হতে পারছি না। ২০১৯ বিশ্বকাপে একটা লক্ষ্য নিয়ে এসেছিলাম। আমার কাছে সবাই এত প্রত্যাশা করে…। এত কষ্ট করছি, মন থেকে এত চাইছি, কোথায় যেন ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। সমস্যা নেই, সামনে ভারত-ম্যাচ। অনেক বড় ম্যাচ। ভারতের বিপক্ষে ভালো কিছু করলে দেখবেন পারফরম্যান্সটা মানুষ মনে রাখবে।’

মোস্তাফিজ আজ এজবাস্টনে যে বোলিংটা করলেন সেটি মনে রাখতেই হবে—বাংলাদেশের কোনো পেসার প্রথম বিশ্বকাপে পেলেন ৫ উইকেট। ৫৯ রানে ৫ উইকেট, বিশ্বকাপে যেটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা বোলিং। ৭ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়ে এই বিশ্বকাপে তিনিই বাংলাদেশের সেরা বোলার। ওয়ানডেতে যে চারবার ৫ উইকেট পেয়েছেন, তিনটিই আবার ভারতের বিপক্ষে।

কাল মোস্তাফিজকে বলা হলো, এজবাস্টনের সীমানা একদিকে ছোট। ছোট সীমানায় শট খেলতে পারে এমন বোলিং থেকে বিরত না থাকলে তো বিপদ! বাঁহাতি পেসার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন, ‘জানি এক দিকে সীমানা ৫৯ মিটার। আমি ওদিকে লক্ষ্য করেই বোলিং করব। ওরা মারলে মারবে। চাইলে এটা লিখে দিতে পারেন!’

মোস্তাফিজ যে হালকা চালে কথাটা বলেননি, আজ সেটি বোঝা গেল। বাঁহাতি পেসার বেশির ভাগ সময়েই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ছোট সীমানার দিকে খেলানোর চেষ্টা করেছেন। কঠিনেরে ভালোবেসে তিনি তো ফলও পাচ্ছিলেন। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে রোহিতকে চতুর্থ স্টাম্পে শর্ট বল খেলতে আহ্বান জানালেন। ভারতীয় ওপেনার ছোট সীমানা দিয়ে উড়িয়ে মারার লোভ সামলাতে পারেননি। কিন্তু বল যে গতিতে ব্যাটে আসার কথা ছিল, সেটা আসেনি। টাইমিংয়ে হেরফের, ডিপে তুলে দিলেন ক্যাচ। তামিম ১৫ গজ দৌড়ে এলেন কিন্তু ক্যাচটা লুফে নিতে পারলেন না।

এমন সুযোগ পেয়ে রোহিতের মতো ব্যাটসম্যান যা করার সেটাই করল। ২০১৫ বিশ্বকাপে এমসিজিতে ‘নো-বল’-এ বেঁচে গিয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন, যে নো বলের সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। টানা দুই বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন অঙ্কে ছুঁলেন। রোহিতের সঙ্গে লোকেশ রাহুলও এগোচ্ছিলেন তিন অঙ্কের দিকেই। দুজনের ওপেনিং জুটি ১৮০ রান যোগ করায় অনুমান করা হচ্ছিল আরেকটি রান পাহাড়ে চাপা পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু তামিম নন, বাংলাদেশের বেশির ভাগ ফিল্ডারই এ ম্যাচেও বাজে ফিল্ডিংয়ের ধারাটা ধরে রেখেছে। একবার চিন্তা করুন ফিল্ডিংটা যদি আজ দুর্দান্ত হতো, ভারত কি আর ৯ উইকেটে ৩১৪ রানের স্কোর গড়তে পারত?

তবুও ভারতের স্কোরটা ৩১০-এর আশপাশে আটকানো গেছে তাতে বড় কৃতিত্ব অবশ্যই মোস্তাফিজের। বিশেষ করে ৩৯তম ওভারে তিন বলের মধ্যে বিরাট কোহলি আর হার্দিক পান্ডিয়াকে ফিরিয়ে দুরন্ত গতিতে ধাবমান ভারতকে আটকে রাখা গেছে। কোহলিকেও কিন্তু সেই একই ফাঁদে ফেলে ফিরিয়েছেন মোস্তাফিজ। যতই ডিপ মিডউইকেটের সীমানা ছোট থাকুক, মন্থর উইকেটে ডিপে উড়িয়ে মারা কঠিনই। মোস্তাফিজের কাটারটা তাই উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানায় রুবেলের হাতে তুলে দিলেন কোহলি।

কাল মাশরাফি বিন মুর্তজা বলছিলেন, ‘এ ধরনের উইকেটে মোস্তাফিজ উপকৃত হতে পারে।’ ফিজ তা হলেনও। মন্থর উইকেটে বল যত পুরোনো হবে, মোস্তাফিজের কাটারের ধার তত বাড়বে। ৩৯ ওভারে দুটি পাওয়ার পর বাকি ৩টি পেলেন শেষ দিকে এসে। মাঝে একটা রানআউটও করেছেন। ভারতের যে ৯ উইকেট পড়েছে, ৬টিতেই মোস্তাফিজের প্রত্যক্ষ অবদান—নাহ, মোস্তাফিজ এবার প্রাণ খুলে হাসতে পারেন। বলে-কয়ে শুধু চ্যালেঞ্জই জিতলেন না, ‘সেই ধার আর নেই বলে’ তাঁকে নিয়ে মাঝেমধ্যে যে রব ওঠে, বড় ম্যাচে ‘বড়’ পারফরম্যান্সে সেটিরও জবাব দিলেন।