বড় দলকে হারিয়ে হিরো হতে চেয়েছিলাম, বললেন সাইফউদ্দিন

হিরো হওয়া হলো না সাইফউদ্দিনের! ছবি: এএফপি
হিরো হওয়া হলো না সাইফউদ্দিনের! ছবি: এএফপি

নটিংহাম থেকে সাউদাম্পটনে রওনা দেওয়ার সময় একটা ফোন এল। ফোনের এ প্রান্তে বোঝা যাচ্ছে অপর প্রান্তে যিনি আছেন তাঁর বুক চিরে বেরিয়ে আসছে একরাশ হতাশা আর কষ্ট—‘খুব খারাপ লেগেছে, খুব। এ কেমন অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে! একজন খেলোয়াড়ের জন্য এ তো শুধু কষ্টের নয়, এ যে অনেক বড় অসম্মানেরও।’

সাইফউদ্দিন খানিকক্ষণ আর কথাই বলতে পারেন না। দূর থেকে তাঁর অশ্রুপাত বোঝা গেল না। তবে হৃদয়ের ক্ষত কতটা গভীর, সেটা উপলব্ধি করা গেল। মাঝে খবর বের হলো, সাইফউদ্দিনের নাকি ‘বিগ ম্যাচ ফোবিয়া’ আছে! সে ভয়ে তিনি চোটকে অজুহাত বানিয়ে খেলেননি ট্রেন্ট ব্রিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি। এই অভিযোগ সাইফউদ্দিন কেন পৃথিবীর কোনো খেলোয়াড়ই মানবেন না। ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ খেলেছেন ইনজেকশন নিয়ে। ২০ দিনের মধ্যে আরেকবার ইনজেকশনের ধকল নিতে চাননি, নিজেকে বড় ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিতে চাননি। একটি ম্যাচ জোর করে খেলতে গিয়ে বাকি তিনটি ম্যাচ হাতছাড়া করতে চাননি।

টিম ম্যানেজমেন্ট নাখোশ হওয়ার পরও সাইফউদ্দিনকে ম্যাচ খেলা থেকে বিরত থাকার কঠিন সিদ্ধান্তটা নিতে হয়েছিল। আর তাতেই দুই-দুইয়ে চার মিলিয়ে অনেক গল্প ছড়িয়েছিল কদিন। এ ঘটনার পর সাইফউদ্দিন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ‘বিগ ম্যাচ ফোবিয়া’ বলে যে কলঙ্কের কালি ছিটানোর চেষ্টা হয়েছে তাঁর গায়ে, তিনি সেটির জবাব দেবেন কোনো বড় ম্যাচে নায়ক হয়ে। কাল ভারতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে নায়ক হওয়ার পথেই এগোচ্ছিলেন। ৩৮ বলে অপরাজিত ৫১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেও দলকে জেতাতে পারেননি। তবে হিরো হয়েছেন ঠিকই, ট্রাজিক হিরো!

বিয়োগান্ত গল্পের নায়ক হওয়া সাইফউদ্দিন মাঠে অনেক জবাব দিয়েছেন। কাল এজবাস্টনের মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে মুখেও কিছুটা দিলেন, ‘কিছুদিন আগে আমাকে নিয়ে একটা নেতিবাচক খবর হয়েছিল যে বড় দলের বিপক্ষে ভয়ে খেলি না! চোটের অজুহাত দেখাই। আমার মধ্যে জিদ কাজ করেছে যে বড় দলের সঙ্গে ম্যাচ জিতিয়ে হিরো হব। আজ যখন মাঠে নামলাম লক্ষ্য ছিল প্রথম বল থেকে শেষ বল—আমি লড়ব, ম্যাচ জেতাব। আমার নামে যেসব কথা হয়েছে, সেটা যেন ভুল প্রমাণ করতে পারি।’

এমন একটা ম্যাচের জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন অনেক দিন। সুযোগটা এসেও গিয়েছিল। কিন্তু দলীয় খেলায় এককভাবে যে দলকে জিতিয়ে দেওয়া যায় না। এগিয়ে যেতে সঙ্গে একজন সহযোদ্ধাও লাগে। সাইফউদ্দিন কাল সে সহযোদ্ধাই পেলেন না। পেলে হয়তো বাংলাদেশের সেমিফাইনালের আশা মিলিয়ে যেত না এজবাস্টনের সুনীল দিগন্তে।