আফসোসের আগুনে পুড়ছেন মাশরাফি

ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপটা আফসোস হয়ে থাকল মাশরাফির ।  ছবি: প্রথম আলো
ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপটা আফসোস হয়ে থাকল মাশরাফির । ছবি: প্রথম আলো
সাকিব আল হাসান: এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মুখ, দলের বড় বিজ্ঞাপন। কী দুর্দান্ত গেল টুর্নামেন্ট, অথচ তাঁর দল দেশের ফিরছে পয়েন্ট তালিকার নিচের দল হিসেবে। সাকিবের জন্য খারাপ লাগছে মাশরাফির। দরকারের সময় রান করতে না পারা, ক্যাচ ছাড়া আর বাজে বোলিংও পোড়াচ্ছে বাংলাদেশ অধিনায়ককে

কাল সকালে লর্ডসে অফিশিয়াল ফটোসেশনের আগে তোলা সাকিব আল হাসানের একটা ছবি ‘ভাইরাল’ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ছবিটা আইসিসি নিজেদের পেজে পোস্ট দিয়ে লিখেছে, ‘২০১৯ বিশ্বকাপে যারা তার চেয়ে ভালো খেলেছে সেসব খেলোয়াড়ের সঙ্গে বসে আছেন সাকিব।’

একজন ক্রিকেটার এর চেয়ে সেরা ফর্মে থাকতে পারেন? কী দুর্দান্ত একটা বিশ্বকাপই না গেল সাকিবের। ৮ ম্যাচে ৮৬.৫৭ গড়ে ২ সেঞ্চুরি ৫ ফিফটিতে ৬০৬ রান, ১১ উইকেট—ভাবা যায়, যে ক্রিকেটার এমন খেলার পর তাঁর দল দেশে ফিরবে পয়েন্ট তালিকার সাত কিংবা আটে থেকে!

সাকিব কি বাংলাদেশ দলের ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’? প্রশ্নটা টুর্নামেন্টে নানা সময়ে উঠেছে। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলার চেষ্টা করেছেন, ‘না, বাংলাদেশ একটা দল হিসেবেই খেলছে।’ সতীর্থদের অবদান খাটো করে দেখতে চান না বলে স্বয়ং সাকিবও নিজেকে ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হিসেবে দেখতে চাননি। কিন্তু আসলেই তো বাংলাদেশ দল অনেকটা ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’র ওপর ভর করেই এগিয়েছে। একটা ম্যাচ বাদে প্রতিটিতে ৫০-এর ওপর রান—হুমকি দিচ্ছিলেন এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান (৬৭৩) করা শচীন টেন্ডুলকারের রেকর্ড ভেঙে দেওয়ার। কাল সাকিব যখন আরেকটি ফিফটি করলেন, টেন্ডুলকার সেটি দেখলেন লর্ডসে বসেই।

অনেক আশা, অনেক সম্ভাবনা নিয়ে এ বিশ্বকাপে খেলতে আসে বাংলাদেশ। সাকিব যেন একাই কান্ডারি হয়ে আশার সলতে জ্বালিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশ সেমিফাইনালের আশা পূরণ করতে পারেনি। এ ব্যর্থতা অধিনায়ক মাশরাফিকে তো পোড়াচ্ছেই। তবে সবচেয়ে খারাপ লাগছে তাঁর সাকিবের জন্যই, ‘সাকিবের জন্য বেশি খারাপ লাগছে। এটাই বড় আক্ষেপ। ও যে টুর্নামেন্ট খেলেছে আরও ভালো অবস্থান বা সেমিফাইনালে যাওয়া আমাদের দরকার ছিল। একজন খেলোয়াড় যখন এমন দুর্দান্ত খেলে তখন তার দলের সেমিফাইনালে খেলার কথা। যখন আমাদের রান করার দরকার, যখন ক্যাচগুলো ধরার দরকার, মিস হয়েছে। যখন ভালো বোলিং দরকার করতে পারিনি। এ জিনিসগুলো অবশ্যই আক্ষেপের। পরের বিশ্বকাপ যখন খেলবে বাংলাদেশ, যেখানে খেলবে আরও নতুন কিছু খেলোয়াড় যদি আসে দল আরও এগোবে।’

বোলিংয়ে ভালো শুরু করতে না পারার দায় নিজের কাঁধেই নিলেন মাশরাফি, ‘আজ জিতলে পাঁচে থাকতে পারতাম। ভারতের সঙ্গে জিতলে এক ধরনের মোমেন্টাম নিয়ে আসা যেত। চারের ভেতর যদি যেতে না পারেন যদি-কিন্তু প্রশ্ন আসত। এখান থেকেও অনেক পজিটিভিটি নেওয়ার আছে। সবাই আপসেট। অনেক ভুল ছিল। বোলিংয়ে শুরুটা ভালো হয়নি, বেশির ভাগ ম্যাচে ১৫-২০ ওভারে আমরা তেমন কিছু করতে পারিনি। এটার দায়ভার আমারই নেওয়া উচিত, যেহেতু ক্রিকেটারদের দায়িত্ব আমার। আরেকটা বড় সমস্যা ফিল্ডিং।’

পরের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কেমন করবে, সেটি এখন বলা কঠিন। বলা কঠিন, সাকিব ঠিক একই ছন্দ ধরে পারবেন কিনা আগামী বিশ্বকাপও। তবে এটা নিশ্চিত, দুর্দান্ত খেলে ইংল্যান্ড থেকে সাকিব যাচ্ছেন বড় আফসোস নিয়ে। ক্যারিয়ারের সেরা ছন্দে আছেন, অথচ তাঁর দল টুর্নামেন্ট শেষ করেছে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে।