ভারত-অস্ট্রেলিয়াই ফাইনাল খেলবে, এটা ক্রিকেটের জন্য দুঃসংবাদ

ভারত-অস্ট্রেলিয়ার একাধিপত্য ক্রিকেটের জন্য ভালো নয়? ফাইল ছবি
ভারত-অস্ট্রেলিয়ার একাধিপত্য ক্রিকেটের জন্য ভালো নয়? ফাইল ছবি

সেমিফাইনালের লাইন আপ ঠিক হয়ে গেছে। এবারের বিশ্বকাপের সেরা চারটি দলই খেলছে সেমিফাইনাল। ফাইনালের পথে কারা এগিয়ে যাবে? দারুণ ফর্মে থাকা ভারত, হঠাৎ ফর্ম হারিয়ে ফেলা নিউজিল্যান্ড, ধাক্কা খাওয়া অস্ট্রেলিয়া নাকি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিজেদের ফিরে পাওয়া ইংল্যান্ড। এ নিয়ে ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোতে এক বিশ্লেষণী কলাম লিখেছেন নিরপেক্ষ মতামতের জন্য বিখ্যাত ইয়ান চ্যাপেল। তাঁর মতে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে উঠবে। আর এটা ক্রিকেটের জন্য সুখবর নয়। সংক্ষেপে তাঁর কলাম নিচে দেওয়া হলো— 

১৯৮৩ বিশ্বকাপের জন্য যা দরকার ছিল, ভারত ছিল তাই। ফেবারিটদের চমকে বিশ্বকাপ জিতেছিল তারা। ১৯৯২ সালে পাকিস্তান বাদ পড়ার মুহূর্ত থেকে ফিরে এসে ইংল্যান্ডকে ধসিয়ে দিয়েছিল। ১৯৯৬ সালে সব ধারণা উল্টে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ানদের হারিয়ে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা।

২০১৯ বিশ্বকাপের সবচেয়ে দুঃখজনক দিক, এবার শেষ চারে কারা যাবে এটা সবাই জানত। অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও ইংল্যান্ড সবার ফেবারিট ছিল। এবং নিউজিল্যান্ডও অন্য সেমিফাইনালিস্ট হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিল সব সময়। এক মাসেরও বেশি দৌড়ঝাঁপের পর সেটাই হয়েছে।

মাঝে মাঝে দু-একটি ঘটনা ঘটেছে। শ্রীলঙ্কা ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ দুই সপ্তাহে একটু প্রাণ এনে দিয়েছিল বিশ্বকাপকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফেবারিটদের বাইরে কেউই সেমিতে যায়নি। এটাই জানিয়ে দিচ্ছে, টাকাই সুখ এনে দেয়। ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে ধনী তিন দল। নিউজিল্যান্ডও গত কিছুদিন ধরে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে।

১৯৯২ এর পর থেকেই বিশ্বকাপ নিয়ে অনিশ্চয়তা কমে যাচ্ছে। শুধু ইংল্যান্ড এ সময়ে কখনো সেমিতে খেলেনি। অস্ট্রেলিয়া চারবার জিতেছে, একবার ফাইনাল খেলেছে, অন্যবার কোয়ার্টার। দেশটির জন্য খুব ভালো খবর কিন্তু বিশ্বকাপের জন্য না। এ সময়ে ভারত মাত্র একবার গ্রুপে বাদ পড়েছে, একবার জিতেছে, একবার ফাইনাল খেলেছে। নিউজিল্যান্ড ছয়বার সেমি খেলেছে, একবার ফাইনাল।

৫০ ওভারের একটি টুর্নামেন্টে মাত্র কয়েকটি দলের এমন আধিপত্য চোখে পড়ার মতো। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান ২০০০ এর পর হারিয়ে গেছে। ১৯৯৬ এর পর শ্রীলঙ্কাও দুবার রানার্সআপ হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা তো এক বিস্ময়ের নাম। দুর্দান্ত প্রতিভাবান সব দল নিয়েও কখনো সেমি পার হতে পারেনি। এবারে ওদের বিদায় তো ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে। এবং এটা বুঝিয়ে দিচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না।

বাংলাদেশ এ নিয়ে ছয়টি বিশ্বকাপ খেলল। ২০১৫ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে আশা দেখিয়েছিল। কিন্তু এখনো তাদের খেলা দেখলে অঘটনের আশাই করা যায়, নক আউট পর্বে যেতে পারবে এটা মনে হয় না। মনে রাখা উচিত শ্রীলঙ্কা কিন্তু ষষ্ঠ বিশ্বকাপেই শিরোপা জিতেছিল। অন্য দলগুলোর মাঝে আফগানিস্তান এবং আয়ারল্যান্ডই যা একটু ঘটন ঘটানোর ক্ষমতা রাখে। বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত ২০ দল খেলেছে। ২০০৭ সালে খেলেছিল ১৬টি। সেটা এবার ১০ দলে কমে এসেছে।

এবারে যা দেখা গেছে তাতে একবারও মনে হয়নি সংখ্যাটা বাড়লে ভালো হবে। বিশ্বকাপকে উঁচুমানের একটি টুর্নামেন্ট রাখা উচিত, সেখানে কোনো দলকে চেষ্টা করার জন্য ডাকার মানে হয় না। ছোট দলগুলোকে ভালো করার জন্য অনুপ্রেরণা দিতে হবে। আইসিসির উচিত এরা যেন শক্তিশালী দলের সঙ্গে নিয়মিত খেলতে পারে সে ব্যবস্থা করা। কিন্তু আর্থিক শক্তি ও ভালো অবকাঠামো সম্পন্ন দলগুলোই সব সময় ভালো করবে। এবার যেমন করেছে।

এবারের বিশ্বকাপের সেরা দিক, সেরা চার দল সেমিফাইনালে উঠেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যা মনে হচ্ছে, ফাইনাল হবে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে। যেটা বেশ আগে থেকেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু বিশ্বকাপের জন্য একটা ধাক্কা দরকার। আরেকটা ১৯৮৩র ভারত, ৯২ এর পাকিস্তান কিংবা ৯৬ এর শ্রীলঙ্কা। এবং এ ধাক্কা খুব দ্রুত দরকার।