'তিন মোড়ল'-এর প্রতিপত্তি এতটুকু কমেনি

ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। ছবি: এএফপি
ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। ছবি: এএফপি
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ভারত। ক্রিকেটের এ ‘তিন মোড়ল’ আয়ে এবং খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক দেওয়ায় বাকি দেশগুলোর চেয়ে এখনো অনেক বেশি ব্যবধানে এগিয়ে

গ্রুপ পর্বে তিন দলই হোঁচট খেয়েছে। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী সেমিফাইনালে উঠে এসেছে তিনটি দলই—ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। ক্রিকেটের কথিত ‘তিন মোড়ল’। মাঠের লড়াইয়েও বড় হিসেবে স্বীকৃত এ তিন দলকে সেমিফাইনালে না দেখলেই বরং বিস্মিত হতেন সবাই।

সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এবার বিশ্বকাপে শুধু সম্প্রচার খাতের রাজস্ব থেকেই আয় হবে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড। খেলাটির উন্নয়ন এগিয়ে নিতে এ পরিমাণ অর্থ চাবিকাঠি আইসিসির জন্য। কিন্তু এভাবে উপার্জিত বেশির ভাগ অর্থের ঠিকানা এখনো ‘তিন মোড়ল’-এর কোষাগার। ২০১৬-২৩ সম্প্রচার চক্রে রয়েছে ২০১৯ ও ২০২৩ বিশ্বকাপ। এ সময়ে ৯৩টি ‘সহযোগী’ কিংবা পুঁচকে ক্রিকেট খেলুড়ে জাতি আইসিসির কাছ থেকে পাবে ১৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড। আর ভারত একাই আয় করবে ৩২০ মিলিয়ন পাউন্ড।

এখানেই শেষ নয়। ক্রিকেটের এই তিন মোড়ল আরেকটি জায়গাতেও বেশি এগিয়ে। তাদের ঘরোয়া লিগগুলো আকর্ষণীয় অঙ্কের সম্প্রচার চুক্তি পেয়ে থাকে। কিন্তু একই সময় দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দেশগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ধরে রাখতে পারছে না। এসব দেশের খেলোয়াড়েরা হরহামেশাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন কিংবা ছেড়ে দিয়ে যোগ দিচ্ছেন ওই তিন দেশের আকর্ষণীয় কোনো টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি কিংবা ঘরোয়া লিগে।

সবশেষ ফেব্রুয়ারিতে প্রোটিয়া পেসার ডোয়াইন অলিভিয়ের যখন দেশের জার্সি ছেড়ে ইংলিশ কাউন্টি দল ইয়র্কশায়ারে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন, তখনই টনক নড়েছিল জেসন হোল্ডারের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের ‘ন্যূনতম আয় উল্লেখযোগ্য অঙ্কের’ করতে আইসিসির কাছে আবেদন করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এ অধিনায়ক। এতে খেলোয়াড়েরা দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে দ্বিধায় থাকবেন না বলেও বিশ্বাস করেন হোল্ডার।

দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিও গত সপ্তাহে একই রকম শঙ্কা প্রকাশ করেন। ক্রিকেট বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিশ্চিতের আগেই প্রোটিয়া অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘ওয়ানডে দলে তাকিয়ে মনে হচ্ছে প্রোটিয়া দল থেকে খেলোয়াড়েরা টি-টোয়েন্টিতে যোগ দেবে। সব খেলোয়াড়, এমনকি আমার নিজেকেও সেখান থেকে কীভাবে দূরে রাখা যায়, সেটাই এখন সবচেয়ে দুশ্চিন্তা।’

নিউজিল্যান্ড অবশ্য আধুনিক ক্রিকেটের গতিপথের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। আইপিএল কিংবা অন্যান্য টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলোয়াড়দের যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তাদের কোনো ‘না’ নেই। আর নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটের সূচির সঙ্গেও ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর সূচি সাংঘর্ষিক নয়। কিন্তু ক্রিকেটে উঠে আসছে এমন দেশ কিংবা ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত শক্তি অথচ অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল, এমন দলগুলোর জন্য টিকে থাকাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড—কাউন্টি কিংবা টি-টোয়েন্টি লিগে যে পারিশ্রমিক, তা খেলোয়াড়দের দেওয়ার সামর্থ্য নেই দক্ষিণ আফ্রিকার।

হোল্ডারের দাবি বাস্তবায়ন হবে না বলেই বিশ্বাস করেন ডু প্লেসি। তাঁর ভাষায়, ‘ওটা খুঁতহীন বিশ্ব। কিন্তু আমরা খুঁতহীন বিশ্বে বাস করি না। শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান—এ চারটি দেশের অবস্থা আমাদের মতোই। অনেকটাই দ্বিতীয় সারির দল আরকি, তার ওপরের সারিটা আলাদা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ সমস্যা সেরা উদাহরণ হতে পারে। তারাই সম্ভবত সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতির মধ্যে আছে। এ কারণে বেশ কিছু খেলোয়াড় হারিয়েছে। তবে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত সব সময়ই বেশি আয় করবে। হ্যাঁ, তাদের মুদ্রা হয়তো শক্তিশালী কিন্তু যে আয়ের প্যাকেজগুলো ছোট দলগুলোর চেয়ে আলাদা। এ বিষয়টি পাল্টানো গেলে তা বাকি দলগুলোর জন্য খুব ভালো ফল বয়ে আনবে। কিন্তু তা বাস্তবতা থেকে অনেক অনেক দূরে।’