বিশ্বকাপ ফাইনাল: ইতিহাস হয়ে আছে যা

বিশ্বতারকা হিসেবে ওয়াসিম আকরামের আবির্ভাব ১৯৯২ বিশ্বকাপেই। ছবি : টুইটার
বিশ্বতারকা হিসেবে ওয়াসিম আকরামের আবির্ভাব ১৯৯২ বিশ্বকাপেই। ছবি : টুইটার
>

ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ফাইনালের মধ্য দিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপের পর্দা নামছে আজ। ২৩ বছর পর বিশ্ব পাচ্ছে নতুন চ্যাম্পিয়নকে। কেইন উইলিয়ামসন থেকে শুরু করে এউইন মরগান, লকি ফার্গুসন থেকে শুরু করে জফরা আর্চার, জনি বেয়ারস্টো থেকে শুরু করে রস টেলর, জেসন রয় থেকে শুরু করে মার্টিন গাপটিল, ট্রেন্ট বোল্ট থেকে শুরু করে ক্রিস ওকস— যে কোনো একজনের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সে ঘুরে যেতে পারে আজকের ম্যাচ। আগের বিশ্বকাপ ফাইনালগুলিতে এমন কিছু পারফরম্যান্স বা মুহূর্তই দেখে এসেছে ক্রিকেট বিশ্ব, যা গোটা ফাইনালের গতিপথই বদলে দিয়েছিল। কে জানে আজও হয়তো রচিত হতে যাচ্ছে এমন কোনো ইতিহাস...

ইতিহাস হাতছানি দিচ্ছে দুই দলকেই। ইংল্যান্ড বা নিউজিল্যান্ডের মধ্যে যে দলই জিতুক না কেন, প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট পরবে মাথায়। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য দুটি দলই তাকিয়ে থাকবে নিজের কোনো এক খেলোয়াড়ের কাছ থেকে অসাধারণ কিছু একটার প্রত্যাশায়। সেই ‘কিছু একটা’ পুরো ম্যাচের মোড়টাই ঘুরিয়ে দেয়, ম্যাচের ফলকে নিয়ে আসে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে। ১৯৭৫ সাল থেকে এমনটাই দেখে এসেছে বিশ্ব। প্রতি ফাইনালেই এমন কিছু পারফরম্যান্স বা মুহূর্ত ছিল, যা পুরো খেলার খোলনলচে বদলে দিয়েছে। আবার কিছু ভুলও হয়ে যেতে পারে কোনো খেলোয়াড়ের সারা জীবনের আক্ষেপ।

লয়েডের ওই ইনিংসের জবাব জানা ছিল না অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে। ছবি : টুইটার
লয়েডের ওই ইনিংসের জবাব জানা ছিল না অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে। ছবি : টুইটার


১৯৭৫ বিশ্বকাপ : ক্যাচ ফেলার মাশুল
৫০ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন কাঁপছে। ক্রিজে রোহান কানহাইয়ের সঙ্গে মাত্র ইনিংস মেরামত করার কাজ শুরু করেছেন উইন্ডিজ অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড। কানহাই একদিকে উইকেট আঁকড়ে পড়ে আছেন, ওদিকে রানের চাকা সচল রাখার কাজটা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন লয়েড। ব্যক্তিগত ২৬ রানের মাথায় ডেনিস লিলির একটা শর্ট লেংথের বল বুঝতে না পেরে মিড উইকেটের দিকে তুলে দিলেন লয়েড। লয়েডের মতো উইকেটে থিতু হওয়া ব্যাটসম্যান এত সহজে উইকেট বিলিয়ে দেবেন, এটা বোধ হয় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা রস এডওয়ার্ডসেরও বিশ্বাস হয়নি। ফলাফল যা হওয়ার, তাই হলো। ক্যাচ ফেললেন এডওয়ার্ডস। নবজীবন পেয়ে লয়েড খেললেন বিশ্বকাপ ফাইনালের অন্যতম সেরা এক ইনিংস। ৮৫ বলে এক ডজন চার আর দুটি ছক্কার সাহায্যে ৮৫ বলে ১০২ রান করে উইন্ডিজের সংগ্রহ নিয়ে গেলেন ২৯১ রানে। পরে কিথ বয়েসের বোলিং তোপে ১৭ রান আগেই শেষ হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।

সে ক্যাচ ফেলার জন্য এখনো রস এডওয়ার্ডসের আক্ষেপে পোড়েন হয়তো!

অতিমানবীয় ভিভের কাছে হেরেছিল ইংল্যান্ড। ছবি : সংগৃহীত
অতিমানবীয় ভিভের কাছে হেরেছিল ইংল্যান্ড। ছবি : সংগৃহীত


১৯৭৯ বিশ্বকাপ : অপরাজিত ভিভ
ইয়ান বোথাম, মাইক হেনড্রিক, জফ্রি বয়কট, ফিল এডমন্ডস—একের পর এক সবাই বল করে যাচ্ছেন, করেই যাচ্ছেন, কিন্তু উইন্ডিজ তারকা ভিভ রিচার্ডস আউটই হন না! মুখে একটা চুইংগাম চিবোতে চিবোতে রাজসিক ভঙ্গিতে একের পর এক বল সীমানা ছাড়া করছেন। শেষমেশ বল হাতে নিলেন গ্রাহাম গুচও। তাতেও কাজ হলো না। কলিন কিংয়ের যোগ্য সাহচর্যে ভিভ রিচার্ডস ২৮৬ রানের পাহাড়ে ওঠালেন উইন্ডিজকে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে যে ব্যাট করতে নেমেছেন, ৬০ ওভারের মধ্যে যে ২৮৬ রান টপকে শিরোপাটা নিজেদের করে নিতে হবে, ব্যাট করতে নেমে এটা ভুলেই গেলেন দুই ইংলিশ ওপেনার মাইক ব্রিয়ারলি আর জিওফ বয়কট। দলীয় ১২৯ রানে বয়কট যখন আউট হলেন, ওভার শেষ হয়ে গিয়েছে ৩৮টি। পরে গ্রাহাম গুচ একটু মারকাটারি ব্যাটিং করে রানরেটের লাগাম টানতে চেষ্টা করলেও পারেননি। জোয়েল গার্নারের বোলিং তোপে শেষমেশ উড়ে যায় ইংলিশরা।

সেই ক্যাচ ধরার পর কপিলকে নিয়ে সতীর্থদের উল্লাস। ছবি : সংগৃহীত
সেই ক্যাচ ধরার পর কপিলকে নিয়ে সতীর্থদের উল্লাস। ছবি : সংগৃহীত


১৯৮৩ বিশ্বকাপ : কপিলের সেই ক্যাচ
ক্যাচ যে ম্যাচ জেতায়, ক্রিকেটীয় এই প্রবাদটার জন্ম খুব সম্ভবত এই ম্যাচটার পরেই হয়েছিল। দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উইন্ডিজকে মাত্র ১৮৩ রানের টার্গেট দিয়েছিল ভারত। মাত্র ৫ রান করে গর্ডন গ্রিনিজ আউট হয়ে গেলে মাঠে আসেন সেই ভিভ রিচার্ডস! যথারীতি মারকুটে ব্যাটিং শুরু করলেন তিনি। তাড়াতাড়ি সাতটি চার মেরে ৩৩ রান করে ফেললেন। ভারতীয়রা বুঝল, ফাইনাল জেতার যে খানিক সম্ভাবনা আছে, সেটাও খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে যদি রিচার্ডসকে থামানো না যায়। মঞ্চে আবির্ভূত হলেন দলের নেতা - কপিল দেব। মদন লালের একটা শর্ট বল বুঝতে না পেরে পুল করে আকাশে তুলে দিলেন ভিভ। ২০ গজ পেছনে দৌড়ে সে ক্যাচ লুফে নিলেন কপিল! একই সঙ্গে বিশ্বকাপটাও কি লুফে নিলেন না?
‘আমি যখনই দেখলাম নিজে ক্যাচটা ধরার জন্য মিড উইকেটে থাকা ফিল্ডারকে সরে যেতে বলছে কপিল, তখনই বুঝেছিলাম, আমার সময় শেষ’, ভিভের সরল স্বীকারোক্তি!

গ্যাটিংয়ের সেই মরণ রিভার্স সুইপ! ছবি : টুইটার
গ্যাটিংয়ের সেই মরণ রিভার্স সুইপ! ছবি : টুইটার


১৯৮৭ বিশ্বকাপ : গ্যাটিংয়ের আক্ষেপের রিভার্স সুইপ
সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে এই রিভার্স সুইপ করতে গিয়েই নিজের উইকেটটা বিলিয়ে এসেছিলেন ইংলিশ তারকা মাইক গ্যাটিং। তাতে ইংল্যান্ডের বিশেষ কোনো ক্ষতি না হলেও, ভাগ্যদেবী কাউকে যে বারবার সুযোগ দেন না, এটা বোধ হয় ভুলে গিয়েছিলেন এই ব্যাটসম্যান। অস্ট্রেলিয়ার করা ২৫৩ রানের জবাবে বেশ ভালোই এগোচ্ছিলেন মাইক গ্যাটিং-বিল অ্যাথি জুটি। ক্রেইগ ম্যাকডারমট, ব্রুস রিড, স্টিভ ওয়াহ, সাইমন ও'ডনেল— কাউকে দিয়েই যখন কাজ হচ্ছিল না, তখন বল হাতে নিলেন খোদ অধিনায়ক, অ্যালান বোর্ডার। বোর্ডারকে বোলিংয়ে দেখেই, পুরোনো রোগটা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠল গ্যাটিংয়ের। প্রথম বলেই রিভার্স সুইপ করতে গেলেন, পারলেন না। উল্টো ব্যাটের কানায় লেগে কাঁধ স্পর্শ করে বল জমা হল উইকেটরক্ষক গ্রেগ ডায়ারের গ্লাভসে। ইংল্যান্ড যেন সে মুহূর্তেই ম্যাচের ব্যাটনটা তুলে দিল অস্ট্রেলিয়ানদের হাতে। বিশ্বকাপটা লুফে নিতে অস্ট্রেলিয়ানদের এর থেকে বেশি ‘সাহায্য’র দরকার হয়নি সেদিন!

ওয়াসিম আকরামের সেই স্পেল। ছবি : টুইটার
ওয়াসিম আকরামের সেই স্পেল। ছবি : টুইটার


১৯৯২ বিশ্বকাপ : ওয়াসিম আকরামের সেই ম্যাজিক ওভার
প্রথমে ব্যাট করে ইমরান খান, জাভেদ মিয়াদাদের দুই ফিফটি আর ইনজামাম উল হক, ওয়াসিম আকরামের দুই ক্যামিওর ওপর ভর করে ২৪৯ রান করে পাকিস্তান। জবাব দিতে নেমে ৬৯ রানে চার উইকেট হারালেও অ্যালান ল্যাম্ব আর নিল ফেয়ারব্রাদারের দৃঢ়তায় ১৪১ রান তোলে ইংল্যান্ড। দুজনকে আউট করতে না পেরে আবারও বোলিং আক্রমণে আকরামকে নিয়ে আসেন অধিনায়ক ইমরান খান। ওভারের প্রথম চার বল কোনোরকমে পার করলেন ল্যাম্ব-ফেয়ারব্রাদার জুটি। ওয়াসিম দেখলেন, নাহ, এভাবে হচ্ছে না। রাউন্ড দ্য উইকেট দিয়ে এসে শেষ দুটি বল করার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। পুরোনো বলে রিভার্স সুইং করতে চাইলেন, আর তাতেই ঘায়েল হলেন ল্যাম্ব। এবং ল্যাম্বের পর উইকেটে মাত্র আসা ক্রিস লুইস। দুর্দান্ত দুই ইনসুইঙ্গারে দুজনকে বোল্ড করে ম্যাচের ফল পাকিস্তানের দিকে ঠেলে দিলেন ওয়াসিম। আর তাতেই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেল, প্রথমবারের মতো ট্রফি জিততে যাচ্ছে পাকিস্তান।

সেঞ্চুরির পর অরবিন্দ ডি সিলভা। ছবি : টুইটার
সেঞ্চুরির পর অরবিন্দ ডি সিলভা। ছবি : টুইটার


১৯৯৬ বিশ্বকাপ : অরবিন্দ ডি সিলভা শো
ছিয়ানব্বইয়ের বিশ্বকাপ ফাইনালটাকে একদম নিজের করে নেবেন, প্রতিজ্ঞা করেই যেন মাঠে নেমেছিলেন অরবিন্দ ডি সিলভা। বোলিং করতে নেমে একাই তুলে নেন মার্ক টেলর, রিকি পন্টিং আর ইয়ান হিলিকে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই তিন উইকেট নেওয়ার কারণে অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করে প্রতাশামাফিক স্কোর গড়তে পারেনি, ২৪১ রানেই থেমে গিয়েছিল। তবে ডি সিলভার আসল 'শো' তখনো শুরু হয়নি। পরে ব্যাটিং করতে নেমে প্রথমেই দুই ওপেনার সনৎ জয়াসুরিয়া আর রমেশ কালুভিথারানার উইকেট হারিয়ে বসে শ্রীলঙ্কা। মঞ্চ তখন ডি সিলভার জন্য প্রস্তুত। মঞ্চের পুরো আলো নিজের করে নিলেন তিনি। প্রথমে অশঙ্কা গুরুসিনহা, আর পরে অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গাকে নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান তিনি। ১২৪ বলে ১৩ চারের সাহায্যে অপরাজিত ১০৭ রানের ইনিংস খেলেন ডি সিলভা। প্রথমবারের মতো শিরোপা জেতে শ্রীলঙ্কা।

ওয়ার্ন-বিষে নীল পাকিস্তান। ছবি : টুইটার
ওয়ার্ন-বিষে নীল পাকিস্তান। ছবি : টুইটার


১৯৯৯ বিশ্বকাপ : শেন ওয়ার্ন ম্যাজিক
২১ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর ৬৯/৩। বোলিং আক্রমণে শেন ওয়ার্নকে আনলেন স্টিভ ওয়াহ। খেলাটা যেন শেষ হয়ে গেল ওখানেই। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানিরা যে তাঁর বলের ছাল তুলেছিল, ওয়ার্ন সেটা একদমই ভোলেননি!

২৪তম ওভারের তৃতীয় বল। কোনো রকমে বল ঠেকাতে ব্যস্ত ইজাজ ডিফেন্ড করলেন। কিন্তু বল বাঁক খেয়ে ভেঙে দিল অফস্টাম্প! না, সেই গ্যাটিং-ডেলিভারি এটা ছিল না, ছিল না সেমিফাইনালে গিবসকে হতবুদ্ধি করে দেওয়া সেই বলটার মতো দুর্দান্তও; কিন্তু এই একটা ডেলিভারিই পাকিস্তানের লোয়ার অর্ডারে ছড়িয়ে দিল আতঙ্ক। ফলাফল—মঈন, আফ্রিদি, আকরামের অসহায় আত্মসমর্পণ। ৯ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট, ম্যাচ সেরার নাম না বলে দিলেও চলছে! পাকিস্তানের ১৩২ রান টপকাতে পরে ২১ ওভারও লাগেনি অস্ট্রেলিয়ার।

পন্টিংয়ের ধ্রুপদি ইনিংসের কাছেই হারে ভারত। ছবি : সংগৃহীত
পন্টিংয়ের ধ্রুপদি ইনিংসের কাছেই হারে ভারত। ছবি : সংগৃহীত


২০০৩ বিশ্বকাপ : পন্টিং-ঝড়
প্রথমে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ব্যাটের তাণ্ডবে ১৩ ওভারেই ৯৯ রান তুলে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। গিলক্রিস্টের এই সাজিয়ে রাখা ক্যানভাসে অধিনায়ক রিকি পন্টিং আঁকলেন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক চিত্রকর্ম। ধ্রুপদ সংগীতের শিল্পীদের মতো পন্টিং শুরু করেন ধীর লয়ে। প্রথম চারটি মারেন ৩০তম বলে, দ্বিতীয়টি ৯৫তম বলে। এর মধ্যে হরভজনকে দুটো, নেহরা আর দীনেশ মঙ্গিয়াকে মারেন একটি করে ছয়। দিশেহারা সৌরভ তখন পারলে বল তুলে দেন দলের দ্বাদশ খেলোয়াড়ের হাতেও!

অধিনায়ক নিজে আর উইকেটকিপার রাহুল দ্রাবিড় ছাড়া সবাই বল করলেন। সেদিন মার কে না খেয়েছে! মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ৩৫৯। পন্টিং নিজেই করেন ১৪০ রান। ইনিংসে চার ছিল চারটি, ছয় ঠিক দ্বিগুণ। ফাইনালের সর্বোচ্চ ইনিংসের তখনকার রেকর্ডটি গেইলের হাতে ভেঙেছে পরের আসরেই। কিন্তু এখনো ফাইনালে অধিনায়কের সর্বোচ্চ ইনিংস হয়ে আছে ওই ১৪০। আর তাতেই তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া।

স্কোয়াশ বলের সাহায্যে গিলির সেই ঝড়। ছবি : টুইটার
স্কোয়াশ বলের সাহায্যে গিলির সেই ঝড়। ছবি : টুইটার


২০০৭ বিশ্বকাপ : গিলক্রিস্ট ও স্কোয়াশ বলের কাব্য
ফাইনাল মানেই যেন গিলক্রিস্ট। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ৩৬ বলে ৫৪, ২০০৩-এর ফাইনালে ৪৮ বলে ৫৭। তার পরও আলো কেড়েছিলেন ওয়ার্ন ও পন্টিং। গিলি যেন পণ করে নেমেছিলেন, নিজের শেষ বিশ্বকাপের ফাইনালটা একার করে নেবেন। কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই ক্যারিবীয় ঝড় কেনসিংটন ওভালে!

পূর্বাভাস ছাড়াই। প্রথম ওভারে উঠেছিল মাত্র চার রান। এত সতর্কতা! বৃষ্টির কারণে এমনিতেই ম্যাচ নেমে দাঁড়ায় ৩৮ ওভারে। ভাসের দ্বিতীয় ওভারে পর পর চার-ছয় মেরে শুরু করলেন গিলক্রিস্ট। সেই ঝড় যখন দিলহারা ফার্নান্দোর বলে থামল, শ্রীলঙ্কা বিধ্বস্ত এক জনপদ। ১০৪ বলে ১৩টি চার আর ৮ ছক্কায় ১৪৯। ইনিংসে আর কোনো ফিফটিরও প্রয়োজন পড়েনি। ৩৮ ওভারে অস্ট্রেলিয়া ৪ উইকেটে ২৮১। এবার গিলক্রিস্ট আড়াল করে দিলেন পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা (৭৩.২২ গড়ে ৬৫৯ রান) হেইডেনকে। ওপেনিংয়ে ১৭২ রানের জুটি, তাতে হেইডেনের অবদান মাত্র ৩৮, গিলির ১১৯!
বিশ্বকাপের ফাইনালে সর্বোচ্চ ইনিংসের রহস্য জানা গেল পরে। গিলি গ্লাভসের ভেতর স্কোয়াশ বল নিয়ে ব্যাট করেছিলেন, যা ব্যাটের গ্রিপ ধরতে সাহায্য করেছিল তাঁকে। আর তাতেই লঙ্কানদের তুলোধুনো করেছিলেন তিনি।

ছক্কা মেরে ধোনির জয় তুলে নেওয়া! ছবি : টুইটার
ছক্কা মেরে ধোনির জয় তুলে নেওয়া! ছবি : টুইটার


২০১১ বিশ্বকাপ : ধোনির আকাশ ছোঁয়া
বিশ্বকাপের প্রথম ফাইনালে ক্লাইভ লয়েডের সেঞ্চুরি ইতিহাস হয়ে আছে। ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে রিকি পন্টিংয়ের সেঞ্চুরিও। ২০১১ সালের ফাইনালে মহেন্দ্র সিং ধোনি সেঞ্চুরি করেননি। কিন্তু তাঁর অপরাজিত ৯১ রানের ইনিংসটির মহিমা ছাড়িয়ে যাবে অনেক সেঞ্চুরিকেও। সে বিশ্বকাপে ব্যাটে রান নেই বলে সমালোচনাটা ফিসফাসের বেশি হতে পারেনি শুধু দল একের পর এক ম্যাচ জিতছিল বলে। আগের ৭ ইনিংসে সর্বোচ্চ ছিল মাত্র ৩৪। আসল সময়ে ব্যাটিং অর্ডারে নিজেকে তুলে এনে খেললেন সত্যিকারের এক ‘ক্যাপ্টেনস নক।’

পুরো টুর্নামেন্টে নিজের দিকে আলো টেনে নেওয়া যুবরাজ তখন অপেক্ষা করছেন ফাইনালে কিছু করে দেখানোর। শচীন-শেবাগের উইকেট হারিয়ে ভারত তখন টালমাটাল। এমন অবস্থায় যুবরাজকে বসিয়ে নিজেই মাঠে নেমে গেলেন অধিনায়ক ধোনি। চারদিকে ফিসফাস, টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল খেলোয়াড়কে না নামিয়ে 'ব্যর্থ' ধোনি কেন নামলেন চার নম্বরে ব্যাট করতে? বিশেষ করে যুবরাজ-ধোনির অন্তর্দ্বন্দ্বের খবর তখন মিডিয়ায় হটকেক। যুবরাজকে ফাইনালে ঝলসাতে না দিয়ে ধোনি নিজেই চাইছেন পাদপ্রদীপের আলো নিজের করে নিতে, এমন ফিসফাস শুরু হল। কিন্তু ম্যাচ যতই এগোতে থাকল, কমে যেতে লাগল নিন্দুকদের সমালোচনা। সে সময়ে শ্রীলঙ্কার যে ছয়জন বল করছিলেন, তাদের মধ্যে চারজনই তখন খেলতেন আইপিএলে ধোনির ফ্র্যাঞ্চাইজি চেন্নাই সুপার কিংসে - নুয়ান কুলাসেকারা, মুত্তিয়া মুরালিধরন, থিসারা পেরেরা, সুরজ রনদিভ। ফ্র্যাঞ্চাইজিতে সতীর্থ হওয়ার কারণে ধোনি জানতেন, কোন বোলার কখন কী করতে চাইছিলেন। যেটা কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের যুবরাজ সিংয়ের বোঝার কথা ছিল না।

ফলাফল তো পরে সবারই জানা!

ফকনারদের আটকাতে পারেনি কিউইরা। ছবি : এএফপি
ফকনারদের আটকাতে পারেনি কিউইরা। ছবি : এএফপি


২০১৫ বিশ্বকাপ : বাঁ হাতিদের দৌরাত্ম্য
বাঁহাতি পেসারদের কীভাবে সামলাতে হবে, জানা ছিল না কিউই ব্যাটসম্যানদের। ফলে পুরো সুবিধা তুলে নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার তিন বাঁহাতি মিচেল স্টার্ক, জেমস ফকনার ও মিচেল জনসন। নিউজিল্যান্ডের দশ উইকেটের মধ্যে আট উইকেটই নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন এই তিন পেসার। আর তাতেই ধ্বংস হয়ে যায় কিউইরা। পঞ্চমবারের মতো শিরোপার স্বাদ পায় অস্ট্রেলিয়া।