কলঙ্ক মুছে ফাইনালের মহানায়ক

কঠিন সময়টা পার করতে সংসারের উইকেট জুটিটার কথা কী করে ভুলবেন স্টোকস! ছবি: রয়টার্স
কঠিন সময়টা পার করতে সংসারের উইকেট জুটিটার কথা কী করে ভুলবেন স্টোকস! ছবি: রয়টার্স

পাওলো রসিকে মনে করিয়ে দিলেন বেন স্টোকস। ১৯৮২ বিশ্বকাপের আগে ম্যাচ পাতানো কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দীর্ঘ নির্বাসনেই চলে গিয়েছিলেন রসি। সেখান থেকে ফিরে এসে ইতালিকে কী দারুণভাবেই না জেতালেন বিশ্বকাপ!

স্টোকসের কলঙ্কটা রসির মতো গুরুতর নয়। নির্বাসনে তিনিও গিয়েছিলেন, তবে রসির মতো অতটা দীর্ঘ নয়। তবে কলঙ্ক তো কলঙ্কই। নাইট ক্লাবে মারপিট করে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। ইংলিশদের ভদ্রতার অহংয়ে এত জোরে ঘুঁষি মেরেছিল সেটি, স্টোকসকে জাতীয় দলের জন্য চিরনির্বাসনে পাঠানোর প্রস্তাবও উঠেছিল। খুব বেশি দিন হয়নি স্টোকস জাতীয় দলে ফিরেছেন। আজ তাঁর লড়াইটা না হলে ইংল্যান্ড তো ম্যাচ হেরে গিয়েছিল সেই কখন!

৮৪ রানের অপরাজিত ইনিংস দিয়েও কাজটা শেষ হয়ে যায়নি। এরপর সুপার ওভারেও ব্যাট হাতে নেমেছেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর বীরত্বের কারণেই ম্যান অব দ্য ফাইনাল। সেই পুরস্কার যখন নিতে এলেন, তখনো তাঁর গলা কাঁপছে, ‘কী বলব, ভাষাই খুঁজে পাচ্ছি না। চার বছর ধরে আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি শুধু এই মুহূর্তটার জন্ম দিতে পারব বলে। সেটি আবার এমনভাবে হলো, আমার মনে হয় না ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ম্যাচ আবার কখনো হবে।’

নিউজিল্যান্ড পুরো ক্রিকেট বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে সীমিত পুঁজি নিয়েও লড়ে গেছে ঠিক। আজকের ফাইনালেও লড়ে যাচ্ছিল একইভাবে। ২৪১ রানের পুঁজি নিয়েও ভালোই ধাক্কা দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। ৮৬ রানে ইংল্যান্ডের ৪ ব্যাটসম্যান নেই। সেখান থেকে জস বাটলারকে নিয়ে স্টোকসের ১১০ রানের জুটি।

স্টোকস বললেন, ‘জস আর আমি দুজনই জানতাম, যতটা পারি শেষ পর্যন্ত যদি ব্যাট করে যেতে পারিম নিউজিল্যান্ড চাপে পড়ে যাবে।’ চাপে নিউজিল্যান্ড পড়েও গিয়েছিল। কিন্তু ফিরে এসেছিল দারুণভাবে। বাটলার ও ক্রিস ওকসকে দ্রুত ফিরিয়ে দিয়ে। নিঃসঙ্গ লড়াইয়ে যখন সমীকরণ ক্রমেই অসম্ভব হয়ে উঠছে, সে সময় দুই রান নিতে গিয়ে স্টোকসের ব্যাটে লাগে সীমানা থেকে উড়ে আসা থ্রো। ব্যাটে লাগার পর বল ছিটকে চলে যায় বাউন্ডারির দিকে।

দৌড়ে দুই রান, সঙ্গে বাই হিসেবে অতিরিক্ত চার রান! কী ভাগ্য! স্টোকস ইচ্ছেকৃতভাবে বলটা ব্যাটে লাগাননি। লাগালে তো অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড নিয়মে আউটই হয়ে যেতেন। সেই চার রানটাই তো পরে ম্যাচের ভাগ্যনির্ধারক হয়ে গেল। এর জন্য মাঠে তো বটেই, মাঠের বাইরেও স্টোকস ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন, ‘এভাবে আমি তা করতে চাইনি। বল ওভাবে আমার ব্যাটে লেগে ছিটকে যাবে! আমি কেনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি।’