ওয়ানডের সর্বকালের সেরা সমাপ্তি

সুনীল গাভাস্কার
সুনীল গাভাস্কার

এটাকে ওয়ানডের সর্বকালের সেরা সমাপ্তি বলতেই হবে। একবার ভাবুন, বিশ্বকাপ ফাইনালে দুবার টাই হচ্ছে, শেষে ফল নির্ধারিত হচ্ছে কোন দল বেশি বাউন্ডারি মেরেছে, সেটির ভিত্তিতে। এ ব্যাপারটাই বোঝায় যে এটা ব্যাটসম্যানদের খেলা। কারণ কোন দল বেশি উইকেট নিয়েছে, সেটির ভিত্তিতে ফল নির্ধারিত হলে তো নিউজিল্যান্ডই জিতত। তবে যেটা হয়েছে, হয়েছে। ইংল্যান্ড অবশেষে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে, সেটাও এমন ফুটবলপাগল দেশ হওয়া সত্ত্বেও।

শেষের নাটকীয়তা বাদ দিলে ক্রিকেটটা যে অসাধারণ হয়েছে, তা বলা যাবে না। শুরুতে ইংল্যান্ডের বোলাররা ঘাসে ঢাকা পিচের সুবিধা তুলে নিতে পারেনি, আদর্শ লেংথের চেয়েও একটু বেশি খাটো লেংথে বল করেছে, কিন্তু নিউজিল্যান্ড সে সময়েও ধৈর্য ধরে ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই অপ্রত্যাশিত উইকেটশিকারি লিয়াম প্লাঙ্কেটই আরেকবার ইংল্যান্ডকে ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছে, উইলিয়ামসন আর সেট হয়ে যাওয়া নিকোলসকে আউট করেছে ও।

বিশ্বকাপের আগে আইপিএলে প্লাঙ্কেট খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি, কিন্তু ম্যাচ না থাকার দিনগুলোতেও ও অনুশীলনে অনেক কঠোর পরিশ্রম করেছে। ওর শারীরিক গড়ন নিয়ে ইংলিশ মিডিয়া অনেক অপ্রত্যাশিত মন্তব্যও হয়েছে, যাদের কিনা ফিটনেস নিয়ে কোনো ধারণাই নেই, যাদের (সাংবাদিকদের) নিজেদেরই শারীরিক গড়ন হাস্যকর। কিন্তু দিন শেষে ওর কঠোর পরিশ্রম কাজে দিয়েছে, বল হাতে প্রয়োজনের মুহূর্তে বড় ভূমিকা নিয়েছে, ব্যাট হাতেও ভালো অবদান রেখেছে। ওর স্পেলই নিউজিল্যান্ডকে আরও ২০টি রান বেশি করতে দেয়নি, যে রানটা হলে শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ফল ভিন্ন হয়ে যেতে পারত। এর পাশাপাশি ইংল্যান্ডের ‘কেড়ে নেওয়া’ নতুন খেলোয়াড় জফরা আর্চারও ছিল, নিউজিল্যান্ড ইনিংসের শেষ দিকে ওর স্পেলটাও ছিল দুর্দান্ত।

ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ড শুরুতেই টুর্নামেন্টজুড়ে ভয়ংকর জেসন রয়কে হারানোয়, আর অধৈর্য হয়ে অপ্রয়োজনীয় শট খেলে ফেলা জো রুটও চলে যাওয়ায় নিউজিল্যান্ড এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু টুর্নামেন্টজুড়ে প্রায় নীরব থাকা বাটলার আর রেড হট ফর্মে থাকা বেন স্টোকস জুটি বেঁধেছে, বাটলার আউট হওয়ার আগে ইংল্যান্ডকে উল্টো শক্তিশালী অবস্থানেও নিয়ে গেছে। এরপরই চাপ দুই দলকে জেঁকে ধরেছে, সহজ কাজগুলোও তখন কঠিন হয়ে গেছে।

অনেকেই হয়তো বোল্টের ধরা স্টোকসের ক্যাচের দিকে আঙুল তুলবেন, যেখানে বল হাতে নিয়ে সীমানাদড়িতে পা ফেলার আগে ন্যানোসেকেন্ডের জন্য কিউই বোলারের মনে হয়েছিল তিনি সীমানার অনেক ভেতরেই আছেন। যেটা হতো ক্যাচ, সেটা হয়ে গেল ছক্কা। বোল্ট কি তখন (ক্যাচ ধরার আগে) ওর ক্যাপ থেকে নিচে পড়ে যাওয়া সানগ্লাসের দিকে তাকিয়ে ছিল? হয়তো, হয়তো। সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছিল, ভাগ্য ইংল্যান্ডেরই পাশে। কাপটা ওদের অদৃষ্টে লেখা ছিল।