'আমি থাকি ভারতে, নাম ব্যবহার হয় বাংলাদেশে!'

>দীর্ঘদিন ব্রাদার্স ইউনিয়নের কোচ ছিলেন ভারতীয় সৈয়দ নইমুদ্দিন। এবারও ব্রাদার্সের দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। কিন্তু লিগের মাঝপথেই বিদায় নিতে হয় তাঁকে। কিন্তু বিদায় দেওয়ার পরেও কোচ হিসেবে তাঁর নাম ব্যবহার করেছে ব্রাদার্স
সৈয়দ নইমুদ্দিন। ফাইল ছবি
সৈয়দ নইমুদ্দিন। ফাইল ছবি

হঠাৎ করেই গত সোমবার ঢাকায় এসেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ সৈয়দ নইমুদ্দিন। না, কোনো ক্লাবের কোচ হয়ে নয়। ভারতের নামী এই কোচ ঢাকায় এসেছেন ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের নামে নালিশ জানাতে। নইমুদ্দিনের অভিযোগ ব্রাদার্স ক্লাব থেকে বিদায় করে দেওয়ার পরেও তাঁর নাম ব্যবহার করেছে। কারণ তাদের বর্তমান কোচ মহিদুর রহমান মিরাজের ‘এ’ লাইসেন্স সনদ ছিল না। তাঁকে সম্মানজনক বিদায়ও দেয়নি ব্রাদার্স।

নইমুদ্দিন কাল বাফুফের কাছে এই দুইটি বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছে। ২০০৭ সাল থেকেই প্রায় নিয়মিতই ব্রাদার্সের কোচ ছিলেন ভারত ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই কোচ। এবারের মৌসুমেও তাঁর কাঁধে ছিল কমলা জার্সিধারীদের দায়িত্ব। কিন্তু লিগের মাঝ পথে তাঁর বিদায় প্রক্রিয়া ছিল খুবই অসম্মানজনক। তাঁকে বিদায় করে দেওয়ার পরেও খেলোয়াড় তলিকায় কোচ হিসেবে দেখানো হতো নইমুদ্দিনের নাম।

বিদায় করে দেওয়ার পর ভারতে চলে গিয়েছেন নইমুদ্দিন। ওই সময়ে তাঁর নাম কোচ হিসেবে ব্যবহার করা নিয়ে ভীষণ চটেছেন এই কোচ, ‘আমাকে বিদায় দেওয়ার পরও ব্রাদার্স তিনটি ম্যাচে তাদের কোচ হিসেবে আমার নাম ব্যবহার করেছে খেলোয়াড় তালিকায়। ওই তিনটি ম্যাচ হচ্ছে সাইফ স্পোর্টিং, মোহামেডান আর শেখ রাসেল। যেখানে আমাকে তাড়িয়েই দেওয়া হলো সেখানে ওরা আমার নাম কীভাবে ব্যবহার করে কোচ হিসেবে? এটা অবৈধ। আমি থাকি ভারতে আর আমার নাম ব্যবহার হয় বাংলাদেশে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

লিগের দ্বিতীয় পর্ব শুরুর আগে ৩০ এপ্রিল ক্লাব থেকে তাঁর বিদায়টাও ছিল অসম্মানজনকভাবে। যেভাবে বিদায় নিতে হয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ ভারতকে দুইটি সাফ শিরোপা জেতানো কোচ নইমুদ্দিন, ‘গত ৩০ এপ্রিল আমের (ব্রাদার্সের ম্যানেজার আমের খান) আমাকে বলল, “আপনি প্লেয়ার ও প্রেসের সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না। পেছনের দরজা দিয়ে বাড়ি চলে যান। অন্যথায় আপনি অপমানিত হবেন।” এটা শুনে আমি মাথা নিচু করে ওই দিনই চলে আসি। আমেরকে আমি অনেক সম্মান করি। হয়তো সে কারও চাপে পড়ে আমাকে এভাবে বলেছে। কিন্তু আমি এই অপমানটা নিতে পারছি না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সৈয়দ নইমুদ্দিন মৌখিক অভিযোগ করেছেন বাফুফের কাছে। পরে নিয়ম অনুযায়ী বাফুফের পরামর্শে মেইল করে লিখিতভাবে নাকি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে ব্রাদার্সের ম্যানেজার আমের খানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘নইম ভাই দীর্ঘদিন ব্রাদার্সের কোচ ছিলেন। এবার দলের ফল খারাপ হওয়ায় আমরা তাঁকে বিদায় দিয়েছি। এতে সমস্যার কী আছে?’

সমস্যাটা হচ্ছে তাঁকে বিদায় দেওয়ার পরও তাঁর নাম কোচ হিসেবে কীভাবে ব্যবহার করল ব্রাদার্স? এই প্রশ্নে প্রথমে আমের বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি।’ পরে অবশ্য বলেন, ‘কী জানি, হতে পারে।’ তবে নাম যে দেওয়া হয়েছিল এটা নিশ্চিত। বাফুফের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্রাদার্সের খেলোয়াড় তালিকায় কোচ হিসেবে নইমুদ্দিনের নাম দেখে তারা ব্রাদার্সকে প্রশ্ন করেছিলেন, কোচ কই? ব্রাদার্স নাকি বলেছিল, কোচ ব্যক্তিগত কাজে দেশে (ভারতের) গেছেন। এ ছাড়া চুক্তিপত্র নিয়েও আছে ধোঁয়াশা। আমের খান বলছেন, ‘নইম ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের কোনো লিখিত চুক্তিই নেই।’ নইমুদ্দিন বলেছেন, ‘একটা কাগজ ছিল, সেটা ব্রাদার্স নিয়ে গেছে।’

গোটা ব্যাপারই বিভ্রান্তিকর। কারণ কোচের সঙ্গে লিখিত চুক্তির কপি বাফুফের কাছে জমা দিতে হয় ক্লাবকে। নইমুদ্দিনের সঙ্গে লিখিত চুক্তি না থাকলে তারা কী জমা দিল? বাফুফেই-বা কী দেখল? আমের খান বলছেন, ‘আমরা ফেডারেশনকে জানিয়ে দিতাম আমাদের কোচের নাম।’ সবশেষে নইমুদ্দিনের কাছে জানতে চাওয়া হয় কোনো টাকা বাকি আছে কি না ব্রাদার্সের কাছে? তিনি এখন কী চান? কোচ বলছেন, ‘আমি টাকার ব্যাপারে কিছু বলব না। আমি চাই সম্মান।’